×

অপরাধ

লঘু শাস্তির বিধানে বেপরোয়া জুয়াড়িরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ জানুয়ারি ২০২১, ০৯:৪৮ এএম

লঘু শাস্তির বিধানে বেপরোয়া জুয়াড়িরা

প্রতীকী ছবি।

১৬ দিনে গ্রেপ্তার ১৭০

ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের পর থেকে সব ধরনের জুয়ার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এরই ধারাবাহিকতায় অভিযান অব্যাহত থাকলেও এখনো বন্ধ হয়নি জুয়াড়িদের কর্মকাণ্ড। শুধু এলিট ফোর্স র‌্যাবই গত ১৬ দিনে ঢাকা ও কেরানীগঞ্জ থেকে ১৭০ জুয়াড়িকে গ্রেপ্তার করেছে। আইনজ্ঞসহ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুরনো আইনে লঘু শাস্তির বিধানের কারণেই এখনো বেপরোয়া জুয়াড়িরা। ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের পরই যুগোপযোগী একটি আইন করার আলোচনা হলেও এখনো তা করা যায়নি। এ ছাড়াও এসব ঘটনায় মামলা হলেও কোনো এফআইআর হয় না। সরাসরি কোর্টে চালান করা হয়। স্বল্প কারাদণ্ড বা জরিমানা করা হয়। লুঘু শাস্তি ভোগ করে আবারো একই কাজ করে তারা।

জানা যায়, ১৯৭৬ সালের ঢাকা মহানগর পুলিশ অধ্যাদেশে জুয়ার বিষয়ে দুটি ধারা আছে। ৯২ ধারা বলেছে, যারাই জুয়া খেলার উদ্দেশ্যে কোনো সড়ক বা জনসমাগম স্থলে মিলিত হবে, তাদের অনধিক ১০০ টাকা জরিমানা করা যাবে। ৯৩ ধারা বলছে, গণবিনোদনে কেউ কোনো খেলায় যুক্ত হলে তাকে অনধিক ২০০ টাকা জরিমানা করা যাবে। সেদিক থেকে পুলিশ অধ্যাদেশের চেয়ে ১৮৬৭ সালের আইনটি কিছুটা নির্দিষ্ট। সেখানে ‘জুয়ার’ সংজ্ঞার বিষয়ে স্পষ্টতা লক্ষ্য করা যায় না। কিন্তু কমন গেমিং হাউসের সংজ্ঞায় পরিষ্কার বলা হয়েছে, কোনো বাড়ি, কক্ষ, তাঁবু বা গাড়িসহ যে কোনো স্থানই হোক না কেন, সেখানে মুনাফা বা লাভের আশায় কোনো খেলার সামগ্রী ব্যবহৃত হলে তা দণ্ডনীয়। ব্রিটিশ শাসনামলের শুরুতে জারি করা ১৫২ বছরের পুরনো এ আইনটিতে অবশ্য ক্যাসিনো বিষয়ে কিছু বলা নেই। এ আইনে জুয়া খেলার অপরাধে সর্বোচ্চ ২০০ টাকা জরিমানা ও ৩ মাসের কারাদণ্ড। ক্ষেত্রবিশেষে উভয় দণ্ড একত্রে কার্যকর করার বিধানও রাখা হয়েছে আইনটিতে। তবে লক্ষণীয়, ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মাদক, অর্থ পাচার ও অস্ত্র আইন প্রয়োগ করা হচ্ছে। মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও

প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি এন্ড পুলিশ সাইন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. ওমর ফারুক ভোরের কাগজকে বলেন, জুয়াকে অপরাধের প্রজননক্ষেত্র বলাটা ভুল হবে না। কারণ এর সঙ্গে আরো কিছু বিষয় এসে যায়। যেখানেই জুয়া রয়েছে সেখানে মাদক ও নারীসহ নানা সংশ্লিষ্টতা থাকে। আমরা ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের সময় অনেক কিছুই প্রত্যক্ষ করেছি। তিনি আরো বলেন, বর্তমানে প্রচলিত আইনটি অনেক পুরনো। কিছু জরিমানা বা অল্প কারাদণ্ড রয়েছে যা দিয়ে এখনকার ঘটনা মোকাবিলা সম্ভব না। ফলে পুলিশকে অনেক সময়ই জুয়ার বিষয়ে নির্লিপ্ত দেখা যায়। এ ছাড়াও এখন অনলাইনসহ ডিজিটাল প্রক্রিয়ায় জুয়া হচ্ছে যার জন্য একটি যুগোপযোগী আইন দরকার। তাই অনুরোধ থাকবে দ্রুত একটি আধুনিক আইন প্রণয়নের।

র‌্যাব ১০ এর একটি ইউনিট গত ১৬ দিনে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, চকবাজার, বংশাল, কামরাঙ্গীরচর ও কেরানীগঞ্জ এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১৭০ জন জুয়াড়িকে গ্রেপ্তার করে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক র‌্যাবের এক কর্মকর্তা জানান, ক্যাসিনো বা জুয়ার বিরুদ্ধে তারা কঠোর অবস্থানে রয়েছেন। প্রায়ই অভিযানে তাদের হাতে জুয়াড়ি ধরা পড়ছে। কিন্তু আইনের সীমাবদ্ধতা থাকায় তারা সহজেই বের হয়ে আবারো একই কাজ করছেন।

এ বিষয়ে এডভোকেট মঞ্জিল মোর্শেদ ভোরের কাগজকে বলেন, ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের পর আমরা সরকারকে নড়েচড়ে বসতে দেখেছিলাম। বলা হয়েছিল জুয়া রোধে যুগোপযোগী একটি আইন করার কথা। তবে এখনো সম্ভব হয়নি। হিউম্যান রাইট এন্ড পিস ফর বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট মঞ্জিল মোর্শেদ আরো বলেন, বর্তমানে প্রায় দেড়শ বছরের পুরনো যে আইনটি রয়েছে তা অপ্রতুল। তাই জুয়ার বিষয়ে একটি যুগোপযোগী আইন প্রণয়নে দ্রুতই পদক্ষেপ নেয়া উচিত।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মুখপাত্র অতিরিক্ত ডিআইজি ওয়ালিদ হোসেন এ প্রতিবেদককে বলেন, জুয়ার বিষয়ে আমরা ১৯৭৬ সালের ডিএমপি অধ্যাদেশ অনুসরণ করে থাকি। সামাজিকভাবে জুয়া আমাদের জন্য ক্ষতিকর। তাই এ বিষয়ে আমাদের কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি আরো বলেন, মাদক ও নারী নির্যাতনের মতো গুরুতর অপরাধের সঙ্গেও আমরা জুয়ার সংশ্লিষ্টতা দেখেছি। ডিএমপি জুয়া বন্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে।

অ্যাটর্নি জেনারেল ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ এম আমিন উদ্দিন ভোরের কাগজকে বলেন, জুয়ার বিষয়ে যে আইনটি রয়েছে তা অনেক পুরনো। যেটি সংশোধনের প্রয়োজন রয়েছে। আমি দ্রুতই বিদ্যমান আইনের সংশোধন বা নতুন আইন প্রণয়নের বিষয়ে আইনমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণসহ আলোচনার উদ্যোগ নেব।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App