×

জাতীয়

‘মাইম্যান’ রাখতে মরিয়া নেতারা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ জানুয়ারি ২০২১, ০৯:২২ এএম

প্রায় তিন বছর ধরে দল পুনর্গঠনের কথা বললেও এখন পর্যন্ত সব জেলায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারেনি বিএনপি। মেয়াদ শেষ হওয়ার পর আংশিক কমিটি দিয়ে ঝিমিয়ে চলছে সংগঠনগুলো। তবে পিছু ছাড়েনি বিতর্ক। কমিটি গঠনে প্রভাবশালী নেতাদের হস্তক্ষেপ, সিনিয়র-জুনিয়রের ক্রমধারা না মানা, মোটা অঙ্কের আর্থিক লেনদেন, সংস্কারপন্থিদের নেতৃত্বে আনা এসব নানামুখী অনিয়মে স্থবির পুনর্গঠন কার্যক্রম। এর মধ্যে ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তায় নেতাকর্মীদের একটা অংশ নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দলের ১১টি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের মধ্যে ছাত্রদল ছাড়া অন্য সবকটিই মেয়াদোত্তীর্ণ। যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল মেয়াদ শেষ করেছে সুপারফাইভ কমিটি দিয়েই। সমালোচনার চাপে আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে সম্প্রতি। কৃষক দল, মৎস্যজীবী দল, তাঁতি দল ও ওলামা দলের কমিটি নতুন আহ্বায়ক কমিটির মেয়াদও শেষ বেশ আগেই। মহিলা দল, মুক্তিযোদ্ধা দল, শ্রমিক দল, জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) এর কমিটিরও একই দশা। নতুন কমিটি আর যোগ্য নেতৃত্ব না আসায় নীরবে ফুঁসছেন পদবঞ্চিতরা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফল বিপর্যয়ের পর দল পুনর্গঠনে মনোযোগ দেয় বিএনপি। এরই অংশ হিসেবে ১১টি অঙ্গসংগঠনের নতুন কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়। দলটির পক্ষ থেকে জুনের মধ্যেই এসব কমিটি গঠনের কাজ শেষ হবে। কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্তরা ৩ মাসের মধ্যে কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন কমিটি ঘোষণা করবেন। এ সময়ের মধ্যে কমিটি দিতে ব্যর্থ হলে আহ্বায়ক কমিটির কার্যকারিতা বাতিল বলে গণ্য হবে। অথচ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোনো সংগঠনই কাউন্সিল করতে পারেনি। জানতে চাইলে বিএনপির দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সারাদেশের লাখ-লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। হাজার হাজার নেতাকর্মী কারাগারে আছেন। এ অবস্থায় বিএনপিকে ঘুরে দাঁড়াতে দলকে পুনর্গঠন করতে হবে। নেতাকর্মীদের মামলা থেকে পরিত্রাণ ও জেল থেকে মুক্ত করাতে হবে এবং তাদের পুনর্বাসন করতে হবে। কাউন্সিলের মাধ্যমে দলকে পুনর্গঠন করতে হবে। নির্বাচনে পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের সামনে আনতে হবে। সূত্র জানায়, স্থায়ী কমিটির সদস্যদের পরামর্শে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ফের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছেন। কমিটি গঠন নিয়ে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংগঠনগুলোর নেতাদের নিয়ে স্কাইপিতে দফায় দফায় বৈঠক করেন তারেক রহমান। সব গুছিয়ে আনার পরে স্থায়ী কমিটির সিনিয়র নেতাদের সংশোধনীতে আটকে যায় কমিটি। একেক নেতার সুপারিশ আসে। এর পারফমেন্স ভালো না তারটা ভালো এসব করেই কমিটি ঝুলে যায়। তবে সব প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে দ্রæত সময়ের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কমিটি দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেছেন, ত্যাগী, পরীক্ষিত ও নির্যাতিত নেতাকর্মীদের দিয়েই কমিটি হবে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টাকার বিনিময়ে সিনিয়র নেতাদের অগোচরে প্রেসরিলিজের মাধ্যমে মধ্যরাতে কমিটি দেয়ার অভিযোগ রয়েছে বিএনপির নেতাদের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে দলটির সিনিয়র নেতাদের মধ্যে চলছে শীতল যুদ্ধ। অভিযোগ রয়েছে, দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল এবং স্থায়ী কমিটির নেতাদের অগোচরে মধ্যরাতে প্রেস রিলিজের মাধ্যমে কমিটি ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় কার্যালয় কেন্দ্রিক এক নেতা। তার নেতৃত্বে সারাদেশে গ্রæপভিত্তিক চলে কমিটি বাণিজ্য। এসব নিয়ে পদবঞ্চিতদের ক্ষোভ-বিক্ষোভের ঘটনাও ঘটছে। গত ডিসেম্বরে পদ পাইয়ে দেয়ার নাম করে ঘুষ বাণিজ্যের জেরে বরিশাল জেলা ছাত্রদলের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক মাহফুজুল আলম মিঠুর সাংগঠনিক সব পদ সাময়িক স্থগিত করে ছাত্রদলের সিনিয়র সহসভাপতি তারেক আল ইমরানকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়। প্রায় প্রতিটি উপজেলা থেকেই বিদ্যমান প্রভাবশালী নেতাদের ৩/৪টি করে কমিটির প্রেসক্রিপশন এবং মোটা অংকের ঘুষ দিয়ে ম্যানেজ করছেন। পাশাপাশি কথা না শুনলে নানা হুমকিও দেয়া হচ্ছে। সম্প্রতি কমিটি প্রশ্নে ঘুষ কেলেঙ্কারিতে বেশ আলোচনায় আসে হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জ আসনের সাবেক এমপি বিএনপি নেতা মেসবাহউদ্দিন আহম্মেদ কর্তৃক জেলা ছাত্রদল সভাপতি মিঠুকে ৫০ হাজার টাকা দেয়ার বিষয়টি। এছাড়াও ‘অনৈতিক লেনদেন ও পক্ষপাতিত্বের’ অভিযোগ উঠেছে কয়েকটি বিভাগীয় সাংগঠনিক টিমের বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কুমিল্লা বিভাগীয় টিম প্রধানকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। টিম থেকে বাদ দেয়া হয়েছে খুলনা বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদককেও। এছাড়া জেলা শাখার দেয়া কমিটি পাল্টে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে চট্টগ্রাম বিভাগীয় টিমের বিরুদ্ধে। এসব বিভাগীয় টিমের বিরুদ্ধে জেলা শাখার নেতারা অনাস্থা জানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের বিরুদ্ধে বিএনপির হাইকমান্ডের কাছে জমা পড়ছে অসংখ্য অভিযোগ। এ নিয়ে তৃণমূলের অভিযোগ এসব নিয়ে মুখ খুললে বহিষ্কারের হুমকি দেয়া হচ্ছে কেন্দ্র থেকে। তবে গুটি কয়েকজন বাদে অর্থ ও তদবিরের বিনিময়ে সুবিধাভোগীদের দলে পদ না দেয়ার দাবি জানিয়েছেন বিএনপি নেতারা। তারা বলছেন, বিভিন্ন সময় টাকা দিয়ে কমিটির গঠনের খেসারত দিচ্ছে দলটি। সহযোগী সংগঠনগুলোর কমিটি গঠন প্রক্রিয়া ও কেন্দ্রীয় কমিটি পুনর্গঠনের উদ্যোগ শুরুর পর তারা বলছেন, টাকা নিয়ে আবারো পকেট কমিটি করলে অস্তিত্ব সংকটে পড়বে বিএনপি। বিএনপির সাংগঠনিক দুর্বলতা এবং আন্দোলনে ব্যর্থতার পেছনে ত্যাগীদের বদলে সুযোগসন্ধানীদের দায়িত্ব দেয়াকেই কারণ বলে মনে করেন দলের নেতারা। এমনকি কমিটি নিয়ে আগামীতে যেন নয়ছয় না হয় এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে রয়েছেন তারা। জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, কমিটি শিকারি এবং মনোনয়ন শিকারিদের স্থান আর বিএনপিতে হবে না। আমরা কিছু লোককে চিহ্নিত করেছি। এখন থেকে তারা আগে যেসব সুবিধা পেত দল থেকে তা আর পাবে না। টাকা বা তেলবাজি দিয়ে যারা কমিটি দেয় তাদের বিরুদ্ধেও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরাও শুনেছি, টাকার বিনিময়ে নাকি পদ দেয়া হয়। কিন্তু আমি সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারব না, আসলে কীভাবে এগুলো হচ্ছে দলের মধ্যে। তবে ভবিষ্যতে যেন এমন কোনো কিছু না হয় সেদিকেই আমরা খেয়াল রাখব।    

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App