×

সারাদেশ

নৌকা-ধানের শীষের লড়াই

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ জানুয়ারি ২০২১, ০৯:১৬ এএম

নৌকা-ধানের শীষের লড়াই
নির্বাচনের উৎসবমুখর পরিবেশ এবং সংঘাত-সহিংসতার আশঙ্কার মধ্যে আজ বুধবার অনুষ্ঠিত শুরু হয়েছে বহুল প্রতীক্ষিত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচন। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোটগ্রহণ চলবে। সবকটি কেন্দ্রে এবারই প্রথমবার ইভিএমে (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) অনুষ্ঠিত হচ্ছে নির্বাচন। বাণিজ্যিক রাজধানী এবং দেশের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ শহর হওয়ায় সবার নজর এখন চসিক নির্বাচনের দিকে। কে হচ্ছেন নগরপিতা, কারা আসছেন কাউন্সিলর পদে? এই আগ্রহের সঙ্গে সঙ্গে অতীতের নির্বাচনগুলোর মতো এই নির্বাচনেও সংঘাত, সংঘর্ষ ও অনিয়ম হবে কিনা, তা নিয়ে শঙ্কিত নগরবাসী। তবে নির্বাচন কমিশন, আইনশৃঙ্খলাবাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার কর্মকর্তারা বলছেন, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে চসিক নির্বাচনের ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হবে। সাধারণ ভোটাররাও চান সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন হোক দেশের জন্য একটি মডেল, একটি মাইলফলক। ভোটগ্রহণের জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন। গতকাল মঙ্গলবার ৭৩৫টি ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনী সরঞ্জাম পাঠানো হয়েছে। নগরজুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। নগরীতে র‌্যাব, পুলিশ ও বিজিবির সদস্যদের টহল দিতে দেখা গেছে। ২৫ জানুয়ারি মধ্যরাত থেকে আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা বন্ধ থাকলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, মোবাইল ফোনসহ নানাভাবেই নির্বাচনী প্রচারণা চলছে। গতকাল প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত না থাকলেও তাদের শুভানুধ্যায়ীরা তাদের সঙ্গে দেখা করেছেন এবং তারাও বিভিন্ন জনের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেছেন। বিএনপির মেয়র প্রার্থীর অভিযোগ : চসিক নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপির ৫৬ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন। গতকাল দুপুরে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয়ে রিটার্নিং অফিসারের কাছে এ-সংক্রান্ত অভিযোগ দায়েরের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচনের একদিন আগে ৫৬ জন নির্বাচনী এজেন্টকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। যেহেতু এজেন্টরা নির্বাচনের একটি অংশ। তাই নির্বাচনী এজেন্টদের ছাড়িয়ে আনতে কমিশনকে অনুরোধ জানিয়েছি। কমিশন যদি এতে বিফল হয়, তাহলে তাদের ব্যর্থতার দায়ভার নিয়ে নির্বাচনী দায়িত্ব থেকে সরে আসা উচিত। ফুরফুরে আওয়ামী লীগের প্রার্থী : নির্বাচনের আগের দিন বেশ ফুরফুরে মেজাজে ছিলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়রপ্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরী। নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী বলেও জানিয়েছেন তিনি। গতকাল সকাল থেকে নগরীর বহদ্দারহাটের বাসভবনে শত শত নেতাকর্মী উপস্থিত হতে থাকেন। এক সময় তার বাসা লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলাপচারিতায় ব্যস্ত ছিলেন তিনি। ভোরের কাগজকে তিনি বলেন, নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী। জনগণের প্রচুর সাড়া পাচ্ছি। সবাই জননেত্রীর নৌকাকে ভালোবাসে। নগরবাসীর ভোটে আমি জয়ী হয়ে তাদের সেবক হতে বদ্ধপরিকর। সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে বিএনপি সন্দিহান এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তারা সবকিছুতে সন্দেহ প্রকাশ করে। এটি একটি সন্দিহান পার্টি। বিএনপি সন্দেহ প্রকাশ করে বলেছিল, ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণ সম্ভব না। পদ্মা সেতু বানানো সম্ভব না। অথচ জননেত্রী শেখ হাসিনা তা করে দেখিয়েছেন। বিএনপি নির্বাচন বানচাল করার চেষ্টা করছে। তারা শুরু থেকেই শান্তি বিনষ্ট করার চেষ্টা করছে। অর্ধেকের বেশি ভোটকেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ : চট্টগ্রাম নির্বাচন কার্যালয় সূত্র জানায়, চসিক নির্বাচনে মোট কেন্দ্র ৭৩৫টি। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ৪১৬টি। সেগুলোতে ৮ জন পুলিশ ও ১০ জন আনসার সদস্য মিলিয়ে ১৮ জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করবেন। সাধারণ কেন্দ্রগুলোতে পুলিশ থাকবে ছয়জন এবং আনসার ১০ জন। নির্বাচনে পুলিশের ৭ হাজার ৭৭২ জন সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। ২৫ প্লাটুন বিজিবি, র‌্যাবের ৪১টি দল আছে। এছাড়া মোবাইল টিম থাকবে ৪১০টি। স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে থাকবে ১৪০টি দল। ভোটে দায়িত্ব পালন করবে প্রতিটি ওয়ার্ডে র‌্যাব ও পুলিশের একটি করে টিম। আনসারের প্রায় ৩ হাজার ৮০০ সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। ৬৯ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছেন। এর মধ্যে ৪১ ওয়ার্ডে ৪১ জন ভোটের দিন দায়িত্বে থাকবেন। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন ২০ জন। এ পর্যন্ত মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের কাছ থেকে পাওয়া ৬০টি অভিযোগের মধ্যে ৪৮টি নিষ্পত্তি করা হয়েছে। ভোটাররা শঙ্কিত : নগরীর বেশির ভাগ ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীর বাইরে বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় সংঘাত-সহিংসতার আশঙ্কা করছেন অনেকে। এর আগে চসিক নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গত তিন সপ্তাহে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণায় প্রায় ৭০টি সংঘর্ষের ঘটনায় অসংখ্য হতাহতের পাশাপাশি ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া কয়েক দিন ধরে প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে ‘নির্বাচনের দিনের জন্য বহিরাগত সন্ত্রাসী এনে চট্টগ্রাম শহরে আতঙ্ক সৃষ্টির’ আশঙ্কা করে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করা হচ্ছে। ভোটারদের আশ্বস্ত করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা : এদিকে ভোটারদের নির্ভয়ে ভোটকেন্দ্রে আসার আহ্বান জানিয়ে চসিক নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান গতকাল সকালে সাংবাদিকদের বলেন, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা এড়াতে চট্টগ্রাম নগরীকে নিরাপত্তার চাদরে আবৃত করা হয়েছে। ভোটারদের কেন্দ্রে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ভোটারদের নির্বিঘেœ ভোটকেন্দ্রে আসা এবং ভোট দিয়ে বাড়ি ফেরা আমরা নিশ্চিত করেছি। আপনারা নির্ভয়ে ভোটকেন্দ্রে এসে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিন। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের বিষয়ে তিনি বলেন, আগের চেয়ে বেশি পুলিশ-আনসার মোতায়েন করা হয়েছে, যাতে ভোটগ্রহণে কোনো বাধার সৃষ্টি না হয়। প্রচার-প্রচারণা ছিল উৎসবমুখর। সুন্দর পরিবেশ আমরা সৃষ্টি করতে পেরেছি। শেষ দিন পর্যন্ত প্রার্থীদের প্রচারণা ছিল উৎসবমুখর। আশা করি, এবারের নির্বাচনটি উৎসবমুখর হবে। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে প্রস্তুত সিএমপি : নির্বাচনের ভোটগ্রহণে যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে প্রস্তুত রয়েছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। চসিক নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কে দামপাড়া পুলিশ লাইন্সে গতকাল এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সিএমপি কমিশনার সালেহ্ মোহাম্মদ তানভীর বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নগরের বিভিন্ন এলাকায় আমরা চেকপোস্ট করেছি। এর ফলাফল আমরা পেয়েছি। চেকপোস্টের কারণে বলার মতো তেমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। বহিরাগতদের জন্য চট্টগ্রাম নগরীর দ্বার বন্ধ। কোনো বহিরাগত এসে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না। তিনি বলেন, নির্বাচনের দিন সরকারি কর্মদিবস রয়েছে। অনেকে কর্মস্থলে যাবেন। তাদেরও জাতীয় পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখার জন্য বলা হচ্ছে। ভোটকেন্দ্রে যারা আসবেন, তারাও জাতীয় পরিচয়পত্র সঙ্গে নিয়ে আসবেন। সিএমপি কমিশনার বলেন, নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১৮ হাজার সদস্য কাজ করবেন। তার মধ্যে প্রায় ৯ হাজার পুলিশ সদস্য। এছাড়া বিজিবিও কাজ করছে। আমাদের সদস্যরা এরই মধ্যে কেন্দ্রে চলে গেছেন। প্রতিটি কেন্দ্রে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপি তাদের নেতাকর্মীদের আটকের বিষয়ে যে অভিযোগ করছেন, তা মোটেও সঠিক নয়। যারা আটক হয়েছেন, তারা কোনো না কোনো মামলা বা ওয়ারেন্টের আসামি। দুই ইপিজেড বন্ধ : চসিক নির্বাচনের দিন আজ চট্টগ্রামে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা না হলেও নগরীতে অবস্থিত চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকার (সিইপিডেজ) এবং কর্ণফুলী রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকার (কেইপিজেড) সব কারখানায় ছুটি ঘোষণা করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App