×

মুক্তচিন্তা

করোনা ভ্যাকসিন এবং ইতিবাচক সংবাদের গুরুত্ব

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ জানুয়ারি ২০২১, ০৯:৪৭ পিএম

বিজ্ঞানীদের বিরামহীন গবেষণা এবং কঠোর শ্রমের বিনিময়ে আজ করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন আমাদের হাতের নাগালে এসেছে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসের দিকে চীনের উহান প্রদেশ থেকে ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাস ক্রমান্বয়ে প্রায় পুরো পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে এবং এখনো ভাইরাসটি মানুষকে ভুগিয়ে যাচ্ছে। ভ্যাকসিন আবিষ্কার হওয়ার পর এখন বলতে গেলে সারা পৃথিবীতে কিছু না কিছু ভ্যাকসিন পৌঁছে গেছে এবং তা মানুষের দেহে প্রয়োগও শুরু হয়ে গেছে। এর মধ্যে বেশ কিছু দেশে ভ্যাকসিন প্রয়োগের পর ভ্যাকসিনের যে মৃদু প্রতিক্রিয়া আছে তাও সংবাদ মাধ্যমে তুলে ধরছে।

কিছু কিছু যোগাযোগমাধ্যমে ভ্যাকসিন প্রয়োগের পর মানুষের মধ্যে যে মৃদু প্রতিক্রিয়া হচ্ছে যেমন, জ্বর, মাথাব্যথা, বমি ইত্যাদি বিষয়কে যেভাবে তুলে ধরছে তা দেখে ভ্যাকসিনকে অনেকেই ভয় পেয়ে যাবে, এর ফলে কিছু মানুষ এই ভ্যাকসিন নেয়া থেকে বিরত থাকতে চাইবে। প্রকৃতপক্ষে যে কোনো ভ্যাকসিন শরীরে প্রথমে নিলে সামান্য জ্বর, ব্যথা কিংবা শরীর গরম লাগা এমনটা হওয়া স্বাভাবিক তাও আবার সব মানুষের মধ্যে নয়, এটা নিয়ে যোগাযোগ মাধ্যমে খুব বেশি মাতামাতি করা উচিত নয়। এ সব সমস্যা দু-একদিন পর এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে। আমাদের যেটা সবচেয়ে বেশি দরকার এই ভ্যাকসিন শরীরে কতটুকু কাজ করছে তা দেখা। ভ্যাকসিন চালু হওয়ার পর হঠাৎ করে মিডিয়ার মাধ্যমে জানা গেল নরওয়েতে ভ্যাকসিন নেয়ার পর ২৩ জনের মৃত্যুর খবর, পরে আবার তাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানা গেল তাদের মৃত্যু করোনা ভ্যাকসিন নেয়ার জন্য হয়নি, তারা মারা গেছে বিভিন্ন রোগে। যদি এ খবরটি মৃত্যুবরণকারী লোকগুলোর পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর আসত তাহলে বিষয়টি মানুষ অন্যভাবে নিত।

তারপরও যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্নভাবে ভ্যাকসিনের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করতে দেখা যাচ্ছে কিছু মানুষ বলতে লাগল করোনা ভ্যাকসিন নিলে মেয়েদের মুখে দাড়ি-গোঁফ গজাবে, এই ভ্যাকসিন কী উপাদান দিয়ে তৈরি করেছে তা না দেখে ভ্যাকসিন দেয়া যাবে না ইত্যাদি ইত্যাদি।

এসব ভিত্তিহীন এবং অপ্রাসঙ্গিক বিষয়গুলোও কিছু মানুষ অন্ধের মতো বিশ্বাস করে ভ্যাকসিন থেকে মুখ ফেরাতে চাইছে। প্রকৃতপক্ষে করোনা ভ্যাকসিন নেয়ার পর পৃথিবীর কোথাও এখনো পর্যন্ত বড় কোনো সমস্যার সৃষ্টি হয়নি।

সামান্য প্রতিক্রিয়া হয়েছে তাও কিছু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে। এ ধরনের প্রতিক্রিয়া অনেক সময় সাধারণ ইনজেকশন নিলেও হতে পারে এবং এমন হয়েছেও।

একটি বিষয় সবাইকে মনে রাখতে হবে, একটি ভ্যাকসিন আবিষ্কার হওয়ার পর যথেষ্ট চিন্তা-ভাবনা এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর মানবদেহে প্রয়োগের জন্য বাজারে ছাড়া হয়, এক্ষেত্রে বিজ্ঞানীরা যথেষ্ট সচেতন। যতক্ষণ পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত না হন, এই ভ্যাকসিন মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর নয়, ততক্ষণ পর্যন্ত তারা ভ্যাকসিন বাজারে কিংবা জনসম্মুখে আনেন না। এর বাইরে এর কার্যকারিতা নিয়েও তারা সবকিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এবং তা মানুষের শরীরে প্রয়োগ করার পরও সবসময় পর্যবেক্ষণে থাকে। কিছু ক্ষেত্রে তারা স্বল্পসংখ্যক মানুষকে তাদের নিবিড় তত্ত্বাবধানে রেখে দেয় এবং প্রতিদিন মনিটরিংয়ের মাধ্যমে দেখে এই ভ্যাকসিন কী ধরনের কাজ করছে এবং প্রতিক্রিয়াগুলোইবা কী ধরনের।

ফলে সাম্প্রতিক আবিষ্কৃত এবং মানুষের দেহে প্রয়োগকৃত করোনা ভ্যাকসিনের প্রতিক্রিয়া নিয়ে যে খুব বেশি চিন্তা করতে হবে না, এটা অনেকেই খুব ভালোভাবে জানে। এ নিয়ে যোগাযোগমাধ্যমে নেতিবাচক সংবাদ তুলে ধরা খুব বেশি যুক্তিযুক্ত হবে না। প্রকৃতপক্ষে করোনা ভাইরাসটি পৃথিবীতে নতুন হওয়ায় এবং এটি পৃথিবীর ব্যাপক মানুষের প্রাণ সংহার করায় এর ভ্যাকসিন আবিষ্কার হওয়া সত্ত্বেও কিছু মানুষ এটিকে গ্রহণ করতে ভয় পাচ্ছে। আমাদের উচিত হবে এসব মানুষের ভয়কে কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করা, এর জন্য ভ্যাকসিনের বিষয়ে ইতিবাচক সংবাদ প্রচার করা। এমনটি হলে হয়তো আর কেউ এই ভ্যাকসিনের বাইরে থাকবে না। কিন্তু আমরা যদি মনে করি, আমরা ভ্যাকসিন দিয়ে বেঁচে গেলাম, পাশের জন না দিলে ক্ষতি কী, এ ধরনের চিন্তা বেশিরভাগ মানুষের মাথায় ঢুকে গেলে এবং তারা ভ্যাকসিন না নিলে তখন আমরা এই ভাইরাস থেকে শতভাগ মুক্ত হতে পারব না, এতে করে সমস্যাটা বছরের পর বছর লেগেই থাকবে। ইলেকট্রনিকস মিডিয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন যোগাযোগমাধ্যমে এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশে যদি আন্তরিক হওয়া যায় তাহলে এই ভ্যাকসিনের বিরুদ্ধে রটানো বিভিন্ন ভিত্তিহীন অপপ্রচার থেকে মানুষ বেঁচে যাবে। এই বিষয়টিতে আমাদের সবার সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে।

তাই আসুন করোনা ভ্যাকসিনের নেতিবাচক খবর প্রকাশ থেকে আমরা বিরত থাকি এবং ভ্যাকসিন নিতে মানুষকে উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে করোনামুক্ত হই।

-কলেজ শিক্ষক, প্রাবন্ধিক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App