×

জাতীয়

বাল্যবিয়ের আতঙ্কে পড়ে গেছে দেশের কন্যাশিশুরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ জানুয়ারি ২০২১, ০১:০১ পিএম

বাল্যবিয়ের আতঙ্কে পড়ে গেছে দেশের কন্যাশিশুরা
মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার ১৪ বছরের মেয়ে দীপা (ছদ্ম নাম)। কুয়েত প্রবাসী আবদুল মজিদের ২ মেয়ে ১ ছেলের মধ্যে সবার বড় মেধাবী দীপা এ বছর অষ্টম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত ছিল। হঠাৎ করে গত বছরের ২০ এপ্রিল একই গ্রামের ২৫ বছর বয়সি রাজিব আহমেদের সঙ্গে বালিকা দীপাকে বিয়ে দেয়া হয়। বিয়ে কী তা বুঝে ওঠার আগেই অন্তঃসত্ত্বা হয়ে যায় দীপা। নির্ধারিত সময়ের আগেই নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেয় দীপা। কিন্তু বাচ্চার মুখ দেখা হয়নি তার। অল্প বয়সে বাচ্চা জন্ম দিতে গিয়ে শরীরে রক্তস্বল্পতা ও অদক্ষ দাইয়ের হাতে পড়ে বেঘোরে প্রাণ হারায় মেয়েটি। মাত্র ১৪ বছরের শরীর সামাল দিতে পারেনি এ ধকল। এ ধরনের হৃদয়ভাঙা খবর বাংলাদেশে প্রথম নয়। বিশেষত, করোনাকালে দীপার মতো অনেক মেয়ের জীবনেই নেমে এসেছে এমন কালো অন্ধকার। বাল্যবিয়ের দিক দিয়ে এমনিতেই বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। করোনাকালে অনেক বেড়েছে সে প্রবণতা। এ সময়ে বাল্যবিয়ে আগের তুলনায় বেড়েছে ১৩ শতাংশ। বিগত ২৫ বছরের মধ্যে এবারই এ হার সবচেয়ে বেশি। এতে করে আতঙ্কে পড়েছে স্কুল পড়–য়া কন্যাশিশুরা। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গত ডিসেম্বরেই এক অনুষ্ঠানে জানান, লকডাউন ও করোনার মধ্যে দেশে বাল্যবিয়ে ও অনাকাক্সিক্ষত গর্ভপাত বেড়েছে, যা কাম্য ছিল না। করোনাকালের প্রথম দিকেই সেভ দ্য চিলড্রেন জানায়, বিশ্বের ৪০ লাখ কন্যাশিশুকে বাল্যবিবাহের ঝুঁকিতে ফেলেছে করোনা মহামারি। ইউনিসেফের আশঙ্কা, ২০২০-২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বে অতিরিক্ত ১ কোটি ৩০ লাখ বাল্যবিয়ে হবে যা স্বাভাবিক পরিস্থিতি হলে এড়ানো যেত। সংস্থাটির মতে, এটি রোগ নয়, বরং রোগের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। এর একটি কারণ, গত মার্চ মাস থেকেই দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো কার্যত বন্ধ রয়েছে। সেটি কয়েক দফা বাড়িয়ে আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নেয়া হয়েছে। তবে গবেষকরা মনে করেন, এই সময়ে বেশি সমস্যা স্কুলের মাধ্যমিক শিক্ষার্থী, বিশেষত নারী শিক্ষার্থীদের নিয়ে। গত বছরের অক্টোবরে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি করোনাকালে বাল্যবিয়ে এবং নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা বিষয়ে বৈঠক করে জানায়, করোনাকালে প্রথম ৩ মাসে ২৬৬টি বাল্যবিয়ে ঠেকানো সম্ভব হয়েছে। তবে এ সময়ে সারাদেশে ২৩১টি বাল্যবিয়ে হয়ে গেছে। তবে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ) জানায়, গত জুন মাসেই দেশে ৪৬২টি শিশুকন্যা বাল্যবিয়ের শিকার হয়। তার মধ্যে ২০৭টি বাল্যবিয়ে রুখে দেয়া সম্ভবপর হয়েছে। ব্র্যাকের জেন্ডার জাস্টিস এন্ড ডাইভারসিটি বিভাগের জরিপ, বাল্যবিয়ে আগের চেয়ে ১৩ শতাংশ বেড়ে গেছে দেশে। ৮৫ শতাংশ বাল্যবিয়ে হয়েছে মেয়েদের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তার কারণে। ৭১ শতাংশ হয়েছে মেয়েদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ার জন্য। প্রবাস এবং শহরফেরত পাত্র বেশিমাত্রায় পাওয়ার কারণে ৬২ শতাংশ বাল্যবিয়ে হয়েছে। বৈশ্বিক পরিসংখ্যান বলছে সংঘাত, দুর্যোগ কিংবা মহামারির সময় বাল্যবিয়ের সংখ্যা বাড়ে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কন্যাশিশুদের বাল্যবিয়ের অভিশাপ থেকে মুক্ত করতে হলে শিক্ষার ক্ষেত্রে পরিকল্পনা প্রণয়ন করেই বসে থাকলে চলবে না, বাস্তবায়নের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাতে হবে। পাশাপাশি অসহায় পরিবারের অবস্থা ফেরানোটাও জরুরি। এসব পরিবারকে সামাজিক সুরক্ষার আওতায় আনার ব্যবস্থা করতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App