×

রাজধানী

চলমান পরিস্থিতি নিয়ে সিনিয়র নেতা ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকের মতামত

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ জানুয়ারি ২০২১, ১১:৫৫ এএম

চলমান পরিস্থিতি নিয়ে সিনিয়র নেতা ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকের মতামত

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুুর রহমান।

চলমান পরিস্থিতি নিয়ে সিনিয়র নেতা ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকের মতামত

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।

চলমান পরিস্থিতি নিয়ে সিনিয়র নেতা ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকের মতামত

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন।

চলমান পরিস্থিতি নিয়ে সিনিয়র নেতা ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকের মতামত

আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের বিভিন্ন পর্যায়ে চলছে বাকযুদ্ধ, বাহাস। নোয়াখালী, ফরিদপুরসহ দেশের অনেক এলাকায় নেতাদের পরস্পরবিরোধী বক্তব্যে নেতাকর্মীরা বিভ্রান্ত হচ্ছেন। ভঙ্গ হচ্ছে দলের শৃঙ্খলা। লাগামহীন বক্তব্যে তৃণমূলে দেখা দিচ্ছে উত্তেজনা। কেন্দ্রীয় নেতারা এ নিয়ে বিব্রত। তারপরও উত্তেজনার আগুনে ঘি ঢালছেন কেউ কেউ। চলমান পরিস্থিতি নিয়ে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের সঙ্গে কথা বলেছেন কামরুজ্জামান খান

এ সবই সামাজিক অসুস্থতার লক্ষণ

[caption id="attachment_207226" align="aligncenter" width="700"] সৈয়দ আবুল মকসুদ।[/caption]

লেখক ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেছেন, দেশে সুষ্ঠু রাজনীতি না থাকার কারণে দলের ভেতরে একে অপরের বিরুদ্ধে কথা বলছেন। সব দলেই একই অবস্থা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এসব রাজনীতি না, ব্যক্তিগত রেষারেশি। এমন কথাবার্তা সামাজিক অসুস্থতার লক্ষণ। এসব অতিকথন দলের কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে থামিয়ে দেয়া উচিত মন্তব্য করে আবুল মকসুদ বলেন, পরস্পরবিরোধী বক্তব্য সাধারণ মানুষের জন্য বিরক্তিকর। তাদের কারণে দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ হচ্ছে, নেতাকর্মীদের মধ্যে দলাদলি বা বিভক্তি দেখা দিলে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে, যাতে সংগঠন ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

মানুষ এসব কথাবার্তাকে ভালোভাবে দেখে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, রাজনীতিতে পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মানবোধ থাকতে হবে। না হলে সমাজ ও পরিবেশে এর প্রভাব পড়বে। এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক আরো বলেন, রাজনীতি করতে হলে পড়ালেখা ও চর্চা করতে হয়। মানুষের কল্যাণে কাজ করতে হলে জ্ঞান রাখতে হয়। সেখানে লাগামছাড়া কিছু বলা যায় না। রাজনৈতিক দলে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা গেলে অপরাজনীতির চর্চা করার সুযোগ কেউ পাবেন না বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

সৈয়দ আবুল মকসুদ মনে করেন, রাজনীতির নামে যারা কাদা ছোড়াছুড়ি করছেন তারা সংগঠনের জন্য সুবিধাজনক লোক নন। নিজেকে জাহির করতে গিয়ে তারা সংগঠনের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারেন। এদেরকে এখনই সতর্ক করতে হবে, উদ্যোগ ও ব্যবস্থা নিতে সংগঠনের কেন্দ্র থেকে।

দায়িত্ব নিয়ে কথা বলতে হবে

[caption id="attachment_262079" align="aligncenter" width="750"] আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুুর রহমান।[/caption]

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুুর রহমান বলেছেন, দলের কেউ দায়িত্বশীল পদে থাকলে তাকে দায়িত্ব নিয়ে কথা বলতে হবে। আদর্শিক রাজনীতির পরিপন্থি কথাবার্তা হলে সবাইকে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে, সংযত আচরণ করতে হবে। তা না হলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

অতীতে এমন অনেক নজির রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, দলের পদে থেকে যারা পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিয়ে সংগঠনের ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছেন তাদের সবার বক্তব্য বিবৃতি দেখা হচ্ছে। দলীয় সভায় তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে জানিয়ে সাবেক এই সংসদ সদস্য বলেন, রাজনীতিতে প্রতিদ্ব›দ্বী বা প্রতিপক্ষ থাকতে পারে। তাই বলে লাগামহীন কথাবার্তা বলা যাবে না। চরিত্র হননের চেষ্টাও কারো কাছে কাম্য নয়।

ছাত্রলীগের সাবেক এই সাধারণ সম্পাদক আরো বলেন, দল যারা করেন তাদের দলের আদর্শ মেনে চলতে হবে। সিনিয়র নেতাদের সম্মান করতে হবে। রাজনীতিতে বেপরোয়া হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যেই বেপরোয়া হবেন সেই শাস্তি পাবেন। নেতাদের মধ্যকার বিভক্তিতে যাতে সংগঠন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে সিনিয়র নেতারা সব সময় লক্ষ্য রাখেন। দেশের বিভিন্ন স্থানে যে যা বলছেন তার সব রেকর্ড রয়েছে। কেন তারা কথা বাড়াচ্ছেন তার বিশ্লেষণ চলছে। দলে শৃঙ্খলা ও ঐক্যের প্রশ্নে সভানেত্রী শেখ হাসিনা যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধাবোধ করেন না জানিয়ে তিনি বলেন, যারা এসব করছেন তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

কাণ্ডজ্ঞানকে আরো সমৃদ্ধ করুন

[caption id="attachment_262080" align="aligncenter" width="900"] আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।[/caption]

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেছেন, কোন ব্যক্তি কী বলল, তার প্রতিক্রিয়া দিতে চাই না। সামগ্রিক অর্থে বলব- কোনো ব্যক্তিকে নিয়ে নেতিবাচক কথা বলা কোনোভাবেই সম্মানজনক না। আওয়ামী লীগের মূলভিত্তি জনগণ। জনগণের ওপরই আমাদের আস্থা ও বিশ্বাস। জনগণের ও দেশের স্বার্থেই আওয়ামী লীগ কাজ করছে।

তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগ নীতি-আদর্শ এবং শৃঙ্খলা দ্বারা পরিচালিত হয়। এ দল টিকে আছে দৃঢ় ঐক্যে। যে যত বড় নেতা হই না কেন, কথা বলার আগে বিবেচনা করে বলা উচিত। কোন কথা ঘরে বলতে হবে, কোন কথা মিডিয়ায় বলতে হবে, চায়ের দোকানে বলতে হবে অথবা মানববন্ধন ও জনসভায় বলতে হবে- সে বিষয়ে আমাদের বিবেচনাবোধ থাকতে হবে। আমাদের কাণ্ডজ্ঞানকে আরো অনেক অনেক বেশি সমৃদ্ধ করতে হবে।

শুধু বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ছাড়া আওয়ামী লীগে আর কেউ অপরিহার্য নয় উল্লেখ করে বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, যদি সেটা কেউ ভুলে যান তাহলে তিনি বোকার স্বর্গে আছেন। দলের সুনাম রক্ষা করতে হবে। দলকে প্রশ্নবিদ্ধ করা যাবে না। দলকে জনসম্মুখে হেয় করার কোনো সুযোগ কারো নেই। এ দলের কারো বিপক্ষে কোনো কথা বা সমালোচনা যদি থাকে- সেটা আলোচনার জন্য দলীয় ফোরাম আছে। আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক চর্চায় বিশ্বাসী। এ দলে নিয়মিত কাউন্সিল হয়, সদস্য নবায়ন হয়। তৃণমূল থেকে সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত সবকিছু মূল্যায়ন-গবেষণার সুযোগ আছে। তা না করে রাস্তায় দাঁড়িয়ে নানা কথা বলাটা শোভনীয় নয়। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এটা পছন্দ করেন না। সবাইকে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন দলের ভাবমূর্তি, ঐক্য ও শৃঙ্খলা রক্ষা করা। অনাকাক্সিক্ষত, অপ্রয়োজনীয় ও বিতর্কিত কথা আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে দায়িত্বশীল জায়গায় সবার ফিরে আসা উচিত।

সাংগঠনিক ব্যবস্থা  নেয়া হবে

[caption id="attachment_262081" align="aligncenter" width="671"] আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন।[/caption]

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বলেছেন, দলের শৃঙ্খলাবিরোধী কাজ করলে কেউ ছাড় পাবে না। কেউ নিয়মের বাইরে নয়, তিনি যেই হোন না কেন। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের শৃঙ্খলা রক্ষার ব্যাপারে খুবই কঠোর। কেউ শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

নোয়াখালী, ফরিদপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে বাহাস ও বাকযুদ্ধ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এসব সমর্থনযোগ্য নয়, কাম্য নয়। যারা এসব করছেন তাদের দলের শৃঙ্খলা মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত এই নেতা বলেন, দলে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে যে কারো বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে। শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে প্রশ্রয় পাওয়ার সুযোগ কারো নেই।

সবার কথাবার্তা মনিটরিং করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, দলের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে তাদের ব্যাপারে নজর রাখা হচ্ছে। কারা কী উদ্দেশ্যে বাকযুদ্ধ করছেন তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ব্যক্তির দায় সংগঠন নেবে না জানিয়ে তিনি বলেন, কোনো ব্যক্তির কারণে সংগঠনের ভাবমূর্তি নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে না।

ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব সংগঠনের কোনো বিষয় নয় জানিয়ে আহমদ হোসেন বলেন, সংগঠনের পদ-পদবি ব্যবহার করে যারা শৃঙ্খলাবিরোধী কাজ করছেন বা করবেন তাদের সবাইকে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। সভানেত্রী শেখ হাসিনার কাছে সবার ব্যাপারে তথ্য রয়েছে। কে কী করছেন- কোথায় কী বলছেন সব খবর তিনি রাখেন। দলের শৃঙ্খলার প্রশ্নে তিনি আপসহীন। এর ব্যত্যয় হলে কাউকে তিনি ছাড় দেন না। শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে আগেও অনেক নেতা শাস্তি পেয়েছেন।

আওয়ামী লীগ একটি বড় দল উল্লেখ করে সাবেক এই ছাত্রনেতা বলেন, এখানে গণতন্ত্রের চর্চা রয়েছে। সবাইকে জবাবদিহিতা করতে হয়। কাজেই উল্টাপাল্টা বলে কারো পার পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App