×

সারাদেশ

দুই শত জাতের ধানের উদ্ভাবক কৃষক নুর মোহাম্মদ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ জানুয়ারি ২০২১, ০৪:০৪ পিএম

দুই শত জাতের ধানের উদ্ভাবক কৃষক নুর মোহাম্মদ

ধানের পরিচর্যা করেন কৃষক নুর মোহাম্মদ। ছবি: ওবায়দুল ইসলাম রবি।

অল্প শিক্ষিত কৃষক নুর মোহাম্মদ একক প্রচেষ্টায় ২ শত জাতের ধান উদ্ভাবন করেছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও ধান গবেষণা ইন্সটিউটিউটের প্রশিক্ষণ তাকে এ কাজে উৎসাহিত করে। প্রাতিষ্ঠানিক পড়ালেখা তেমন না থাকলেও শুধুমাত্র প্রশিক্ষণ ও বাস্তব জ্ঞানকে সম্বল করে তিনি তার গবেষণা শুরু করে দেন। এসব ধান সংকরায়নের মাধ্যমে উদ্ভাবন করেন। উদ্ভাবিত পাঁচটি জাতের ধান ইতোমধ্যে কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।

নুর মোহাম্মদের বাড়ি রাজশাহী তানোর উপজেলার গোল্লাপাড়া গ্রামে। তিনি উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করতে পারেননি। ছোটবেলা থেকেই কৃষি পেশার সঙ্গে সম্পৃক্ত। আগে থেকেই কৃষকদের জন্য খরা সহিষ্ণু ও রোগ বালাইমুক্ত উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান উদ্ভাবনের আগ্রহ ছিলো তার। দীর্ঘ সময় ধরে সংকরায়ন ও বাছাইকরণের মাধ্যমে আউশ, আমন ও বোরো মৌসুমের ধানের অনেক গুলো সারি পেয়েছে। সারিগুলো স্বল্প মেয়াদী, উচ্চ ফলনশীল, সরু, সুগন্ধিযুক্ত ও খরা সহিষ্ণু। সারির বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, গাছগুলো মজবুত ও সহজে হেলে পড়ে না।

রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ অন্যান্য জাতের তুলনায় অনেক কম। খরা সহিষ্ণু সারিগুলো প্রজননকালে ১৫ থেকে ২০ দিন বৃষ্টি না হলেও খরা মোকাবিলা করে ভালো ফলন দিতে সক্ষম। খরাপীড়িত বরেন্দ্রভূমিতে কীভাবে, কম সময়ে ও কম পানি ব্যবহার করে ধান কেটে ঘরে তোলা যায় সেই গবেষণা কার্যক্রমও চালিয়ে যাচ্ছেন নুর মোহাম্মদ।

নূর মোহাম্মদ নিজেও তার জমিতে এসব উদ্ভাবিত ধান চাষাবাদ করেন। বরেন্দ্র অঞ্চলের খরা সহিষ্ণু ও রোগ বালাইমুক্ত এসব ধান জাতীয় বীজ প্রত্যয়ন বোর্ডের অনুমোদন পাওয়ার উপযোগী বলে মনে করেন ওই উদ্ভাবক। কৃষি পরিসেষা বা সংক্ষেপে এনএমকেপি-১০১, এনএমকেপি-১০২, ১০৩ এভাবে ধানগুলোর নামকরণ করেছেন তিনি। রোপা আমন মৌসুমে ৩ বিঘা জমিতে পৃথক পৃথক করে ৭৪ প্রকারের ধান বীজ চাষাবাদ করেছেন। তার জমিতে প্রতি বছর আমন, আউশ ও বোরো মৌসুমে বীজ তলা তৈরি করে সংকরায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়। সংকরায়নের প্রক্রিয়া ও পদ্ধতি মেনে গবেষণা কাজ এগিয়ে নেয় তিনি। যেখানে তত্ত্বীয়ভাবে গবেষণা করতে বৈজ্ঞানিকদের ১৪ থেকে ১৫ বছর সময় লাগে, সেখানে তিনি ৭ থেকে ৮ বছরে জাত তৈরি করেন।

প্রতি বছর বোরো, আমন ও আউশ মৌসুমের আগেই ঠিক করে নেয়া হয়, এ বছর কোন ধরনের ধানের সংকরায়ন ঘটাবেন এবং সেই অনুযায়ী বীজতলা তৈরি করেন। চারা রোপণের মাধ্যমে ধান চাষ করে সংকরায়নের প্রক্রিয়া ও পদ্ধতি মেনে নতুন সারি তৈরি করেন। এভাবে সব ধাপ মেনেই ২০০ প্রকারের ধান উদ্ভাবন করেছেন বলে দাবি করেন তিনি। এই ধানের প্রকারের মধ্যে পাঁচটি জাতীয় বীজ প্রত্যয়ন বোর্ডের অনুমোদন পাওয়ার যোগ্য। এ পাঁচটি জাত খরা সহিষ্ণু ও রোগবালাই মুক্ত। যা চাষাবাদ করতে কৃষকরা ভালো ফলন পাচ্ছে।

কোনো কোনো সময় এ ফলন ধান গবেষণা ইন্সটিউটিউটের পরিচিত জাতের চেয়েও ভালো ফলন এসেছে। উদ্ভাবিত ধান নিয়ে নিজ জমিতে চাষাবাদ করেছেন বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা কামাল উদ্দীন। গেল বছর বোরো মৌসুমে ৫ কেজি বীজ নিয়ে কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলায় এক বিঘা জমিতে চাষাবাদ করে ফলন পেয়েছেন ৩২ মণ। তিনি বলেন, তার উদ্ভাবিত ধান লাল ও খয়েরি রঙের। গাছগুলো মজবুত ও ফলন ভালো হয় এবং সুগন্ধিযুক্ত।

ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট থেকে যেসব ধানকে অবমুক্ত করা হয়েছে সেসব ধান জাত হিসেবে পরিচিত। তার আগ পর্যন্ত ধানের সারি বা লাইন হিসেবে বলতে হবে। নুর মোহাম্মদের উদ্ভাবিত ধান এখনো সরকারিভাবে গৃহিত হয়নি তাই তার ধানকে জাতের নাম দেয়া যাবে না। তার উদ্ভাবিত ৩ ধান নিয়ে ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। সরকারিভাবে উদ্ভাবিত যেসব ধান স্বীকৃত পেয়েছে সেগুলোর তুলনায় তার উদ্ভাবিত ধান অনেক পিছিয়ে। জাত হিসেবে অনুমোদন পেতে হলে, বিশেষ বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে, ফলনও বেশি হতে হবে।

তার উদ্ভাবিত ধান গবেষণা ইন্সটিটিউটের উদ্ভাবিত ধানের চেয়ে নিম্নমানের বলে জানান, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট রাজশাহী অঞ্চলের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. ফজলুল ইসলাম। তবে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রচেষ্টায় কৃষক তথা কৃষির উন্নয়নে সর্বোপরি দেশের খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে তাঁর এ গবেষণা কার্যক্রম বিশেষ অবদান রাখবে বলে মনে করেন তিনি।

তবে কৃষির আধুনিক প্রযুক্তিগুলো গ্রাম পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়বে এটাই প্রত্যাশা করছেন কৃষক নুর মোহাম্মদ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App