×

সারাদেশ

জলাবদ্ধমুক্ত নগরী গড়তে রেজাউলের ৩৭ ইশতেহার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ জানুয়ারি ২০২১, ০৮:২৬ পিএম

জলাবদ্ধমুক্ত নগরী গড়তে রেজাউলের ৩৭ ইশতেহার

আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরী

জলাবদ্ধতামুক্ত নান্দনিক ও পরিচ্ছন্ন নগরী গড়ে নগরবাসীর সেবা নিশ্চিত করতে ৩৭টি প্রতিশ্রুতি দিলেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরী। শনিবার ( ২৩ জানুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে ৩৭ দফার ইশতেহার ঘোষণা করেন তিনি। ইশতেহার ঘোষনাকালে মেয়র প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা এম রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসন, ১০০ দিনের অগ্রাধিকার কর্মসূচি, যানজট সমস্যা থেকে উত্তরণ, সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা, নালা-নর্দমা, খাল-নদী দখলদার উচ্ছেদ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা’র ওপর বেশি জোর দেয়া হবে। পাশাপাশি পর্যটন রাজধানী হিসেব চট্টগ্রামকে গড়ে তোলা, হোল্ডিং ট্যাক্স এবং চলমান উন্নয়ন প্রকল্পে সমন্বয়কের ভূমিকা পালনের প্রতিশ্রুতিও দেন মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম।

নৌকা প্রতীকের প্রার্থী রেজাউল করিমের নির্বাচনী প্রতিশ্রæতির মধ্যে আরো আছে,  রাজস্বসহ সব সেবা খাতে পূর্ণাঙ্গ ডাটাবেজ তৈরি করে সব সেবাকে ওয়ানস্টপ ডিজিটাল সার্ভারের আওতায় আনা, সমন্বয় করে নগরীর সব উন্নয়ন ও সেবাখাতকে এক ছাতার নিচে আনা, সাইবার দূষণ ও আসক্তি নির্মুলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খেলার মাঠ রাখার উপর জোর দেয়া, রাস্তায় যত্রতত্র পার্কিং ও ফুটপাত দখল নিয়ন্ত্রণ, খেলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড বাড়ানো, পাহাড় কাটা বন্ধ ও জলাধার-পুকুর দিঘী ভরাট কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ, কিশোর অপরাধ গ্যাং, মাদক ও অপরাধের আখড়া গুড়িয়ে দেয়া এবং নাগরিক তথ্যসেবাসহ সব সেবা কেন্দ্রীয় সার্ভার নেটওয়ার্কের আওতায় থাকবে।

ঘোষণার শুরুতে রেজাউল করিম বলেন, প্রকৃতির চমৎকার উপহার চট্টগ্রামকে ঠিকমত ব্যবহার করতে পারছি না। এরজন্য শুধু দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ নয়, চট্টগ্রামের গর্বিত নাগরিক হিসেবে সবাই সমান দায়ী। একটি জনপদ বা নগর তখনই নান্দনিক, পরিচ্ছন্ন, পরিবেশবান্ধব ও বাসপযোগী হয়, যখন সব নাগরিক নিজের বাসগৃহের মত এটার যত্ন নেয়। আমরা পারিনি কারণ অধিকার বা দাবি সচেতন হলেও আমাদের মাঝে নাগরিক দায়িত্ব পালনের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। আমি নিজেও এই দায় এড়াতে পারিনা।”

আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম অতীতের সব ভুল ছুঁড়ে ফেলে চট্টগ্রামকে সর্বাধুনিক বাসোপযোগী বিশ্বমানের উন্নত ও নান্দনিক নগর’ হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, বন্দর নগরীর ‘সবচেয়ে পুরনো ও বড় সংকট’ জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান মেগা প্রকল্পগুলো ‘ঠিকমত বাস্তবায়নেই’ সর্বোচ্চ মনযোগ দেয়া হবে। নগরীর দখলকৃত খাল নালা নদী পুনরুদ্ধার ও পানি নিষ্কাশনের উপযোগী করতে ১০০ দিনের মধ্যে সব ‘ত্রæটি ও প্রতিবন্ধকতা’ চিহ্নিত করে তা নির্মূলে আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করা হবে। যানজট নিরসনে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সাথে বসে যত দ্রæত সম্ভব তা দূরীকরণে মনযোগ দেয়া হবে। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ডিজিটাল ট্রাফিক সিস্টেম এবং নিরাপদ পথচারী পারাপারে আন্ডারপাস চালু করতে এবং নালা-খাল, নদীর দখলদার উচ্ছেদে অভিযান চালানোর পাশাপাশি খাল নদীর নাব্যতা ফেরাতে চান রেজাউল করিম।

তিনি বলেন, বর্জ্য অপসারণে নজরদারি বাড়ানো, পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জের ডাম্পিং ইয়ার্ড করে রিসাইক্লিং প্ল্যান্ট তৈরি করে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তৈরির করা চেষ্টা করা হবে। আর্বজনা অপসারণে ডোর টু ডোর কার্যক্রম জোরালো করতে নজরাদারি বাড়ানো হবে। পর্যটন সুবিধা কাজে লাগিয়ে ও সৈকত পর্যটনের আধুনিক সুবিধা যোগ করে নগর উন্নয়নে বাড়তি আয়ের উপর জোর দেয়া হবে। গৃহকর নিয়ে ‘নানা সময়ে বিতর্ক’ তৈরির বিষয়টি উল্লেখ করে মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম বলেন, “বিতর্ক অবসানে ডিজিটাল গৃহশুমারি করে বাড়িওয়ালা ভাড়াটিয়া কেউ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সেভাবে যৌক্তিক হারে গৃহকর নির্ধারণ করা হবে। নাগরিক সেবা চালু রাখতে করদাতাদের স্বচ্ছতা দায়বদ্ধতাও পূর্বশর্ত। অপরিকল্পিত স্থাপনা তৈরি, সড়ক ও ফুটপাত দখল কঠোরভাবে নিরুৎসাহিত করার কথাও ইশতেহারে জানান রেজাউল। স্বল্প খরচে শিক্ষার মানসম্মত বিকাশে সর্বোচ্চ মনযোগ দেয়ার প্রতিশ্রুতি জানিয়ে রেজাউল সিটি কর্পোরেশনের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সাতটি প্রস্তাবনা দেন।

রেজাউল করিম বলেন, ধনাঢ্য ব্যক্তিদের ও কর্পোরেট গ্রুপকে এ খাতে যুক্ত করা, চলমান স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও হাসপাতগুলো উন্নত করা, বন্ধ থাকা হাসপাতাল ও মাতৃসদন আবার চালু, আর্থিক সহায়তা পেলে সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে মেডিকেল কলেজ ও পাঁচশ শয্যার হাসপাতাল চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। লিখিত ইশতেহারের শেষাংশে রেজাউল করিম বলেন, নগরীর বিপুল জনগোষ্ঠীকে নূন্যতম সেবা দিতে পারাটাই আসল যোগ্যতা। আামার কিছুই পাওয়ার নেই। সুযোগ পেলে মেধা-মনন, কর্মে সবকিছু নগরবাসীর জন্য উৎসর্গ করাই আমার অঙ্গীকার। সকলের সহযোগিতা পেলে যোগ্যতার পরীক্ষায় জিতব বলে বিশ্বাসী। সবশেষে রেজাউল করিম বলেন, “সব মতের মানুষের মতামত নিয়ে অতীতকে ফেলে নতুনের দিকে এগুতে চাই। এই চট্টগ্রাম প্রত্যেকের। সবার সাথে পরামর্শ করে সবার মেধাকে কাজে লাগাব। বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে সেই পরামর্শ যদি মানুষের উপকারের হয়, টেকসই হয়, বাস্তবায়নযোগ্য হয় তাহলে সব কাজে লাগাব।

এসময় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য ড. অনুপম সেন, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, সহ-সভাপতি নঈম উদ্দিন চৌধুরী, ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল ও আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উত্তর জেলার সভাপতি এম এ সালাম, সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান, ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য্য উপস্থিত ছিলেন।

ইশতেহার ঘোষণার আগে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, ‘নেত্রী নৌকা প্রতীক যাকে দিয়েছেন তিনি চট্টগগ্রমের মানুষের কাছে একজন সৎ, সাদামনের মানুষ। তিনি মুক্তিযোদ্ধা। প্রয়াত নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী যেভাবে চট্টগ্রামকে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছেন সেই লক্ষকে সামনে রেখে নগরীকে আধুনিক চট্টগ্রাম হিসেবে গড়ে তুলবেন। আশাকরি চট্টগ্রামবাসী নৌকার পক্ষে রায় দেবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App