চরফ্যাশন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দালালের দৌরাত্ম্য
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৩ জানুয়ারি ২০২১, ০৭:০২ পিএম
নামে বেনামে ব্যাঙ্গের ছাতার মতো গড়ে ওঠা ডায়াগণস্টিক ও বেসরকারি ক্লিনিকের দালালদের হাকডাক ও টানাহেচরায় রোগী ও রোগীর স্বজনদের বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে চরফ্যাশন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে এসে। ঘটছে নানা ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা। তবুও টনক নড়ছেনা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনের।
জরাজীর্ণ ৫০ সয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালটি প্রায় ১২কোটি টাকায় নব নির্মিত ১০০ সয্যা হাসপাতালে উন্নীত হলেও সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে অনুমোদন বিহীন বেসরকারী হাসপাতাল ও ডায়াগণস্টিক সেন্টারসহ ওষুধ ফার্মেসীর দালালদের জন্য। এমনটাই বলছেন দূর,দূরান্ত থেকে আগত চিকিৎসা প্রার্থীরা।
চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর স্বজন জিয়াউল হক বলেন, চরফ্যাশন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যুগযুগ ধরে উপজেলার ৭লাখ মানুষকে প্রচিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছে। কিন্তু বর্তমানে এই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতে সাম্প্রতিক সময়ে হাসপাতালে বেড়েছে দালাল চক্রের দৌরত্ম্য। রোগীর ওই স্বজন ক্ষুব্ধ হয়ে আরও বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কি চিকিৎসা সেবা দিবেন তাড়াতো বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগণস্টিকে চেম্বার করার অপেক্ষায় থাকেন।
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা আবদুল্লাহপুরের বাসিন্দা সেলিনা আকতার (৩২) বলেন, জরুরী বিভাগে টাকা ছাড়া মেলেনা সেবা। আমার ছেলের চিকিৎসা করেই বলেন, হাসপাতালে ওষুধের সাপ্লাই নেই বাহির থেকে কিনতে হবে বলে দালালের হাতে কাগজ লিখে ওষুধ আনান। পরে ওই দালালকে বাড়তি টাকাও দিতে হয়। এছাড়াও জরুরী বিভাগের সেবাদানকারীরাও হাত পেতে ২শ টাকা নেয়। এমন যদি হয় সরকারি হাসপাতালে তাহলে আমরা কোথায় যাব।
ব্যবসায়ী রাসেল বলেন, আমার বড় বোনকে নিয়ে চিকিৎসা নিতে এসেছি হাসপাতালে মেডিকেল অফিসার বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা দিলেন। বোনকে নিয়ে যাওয়ার পথে ডায়াগণস্টিকের কিছু লোক আমাদের টানাহেচরা শুরু করলে বেগতিক অবস্থায় পড়তে হয় আমাদের। এমন পরিস্থিতিতে প্রশাসনের নিরোবতাও এখন চিন্তার বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যক্তি বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা উপজেলা মাসিক শৃঙ্খলা বিষয়ক আলোচনায় যদি দালাল ও বেসরকারি ডায়াগণস্টিক সেন্টারসহ সিজারে অনুনোমদিত বেসরকারি ক্লিনিকের এজেন্টদের বিষয়ে কথা বলতেন এবং প্রশাসন যদি হাসপাতাল এলাকায় অভিযান চালাতো তাহলে আজ রোগীদের এতো টানাহেচড়ায় পড়তে হতোনা।
উপজেলা নাগরিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ইয়াহ ইয়া ইসলাম মনির বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স অবকাঠামোগত অনেক উন্নয়ন হয়েছে। এ হাসপাতালে গাইনি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থাকলেও এখানে সিজারের রোগীর কোনো সিজার হয়না। অথচ নামে বেনামের অনুমোদন বিহীন বেসরকারি হাসপাতালে দৈনিক ৩০ থেকে ৪০ টা সিজার হচ্ছে। এছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে অবস্থিত কমিউনিটি ক্লিনিকে দায়িত্বরত চিকিৎসকরা ক্লিনিকে ঠিকমতো চিকিৎসা সেবা বাড়িয়ে দিলে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত প্রত্যেক নাগরিকের দোড়গোড়ায় চিকিৎসা সেবা পৌঁছে যেত।
এবিষয়ে চরফ্যাশন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার শোভন কুমার বসাক বলেন, হাসপাতাল বাউন্ডারির বাহির থেকে কিছু রোগী ধরার দালাল আসে। এসব দালালদের বিরুদ্ধে রোগী ও রোগীর পরিবারকে বিভিন্ন হয়রানীসহ রোগীদের নিয়ে টানাটানি করার মতো তথ্য রয়েছে। এদের লিস্ট করা হয়েছে এবং ঊর্ধ্বোতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন বলেন, দালালদের বিরুদ্ধে এর আগেও অভিযান দিয়ে আটক ও জরিমানা করা হয়েছে। এবং খুব শিগগিরই ভ্রাম্যমান অভিযান পরিচালনা করা হবে।