×

জাতীয়

বখে যাওয়া দিহানের বাবার এত সম্পত্তির উৎস কোথায়?

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ জানুয়ারি ২০২১, ০৭:১০ পিএম

বখে যাওয়া দিহানের বাবার এত সম্পত্তির উৎস কোথায়?

দিহান ও তার বাবা আব্দুর রব

বছরের শুরুতেই আলোচনার শীর্ষে রাজধানীর কলাবাগানে ঘটে যাওয়া নেক্কারজনক ঘটনা। মাস্টারমাইন্ড স্কুলের ও লেভেলের শিক্ষার্থী ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তারের পর আদালতের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে ফারদিন ইফতেখার দিহান। দিহানকে ধর্ষক হিসেবে গণ্য করা হলেও এরই মধ্যে বেরিয়ে আসে নানা ফাঁক ফোঁকড়। ঘটনা মোড় নেয় বিভিন্ন দিকে। ইতোমধ্যে দুই পরিবারের অনেক তথ্য বেরিয়ে এলেও অভিযুক্ত দিহানের বাবা আব্দুর রব সরকারের সঙ্গে কথা হয়নি গণমাধ্যমের। কিন্তু কে এই রব সরকার? তদন্তে বেড়িয়ে এসেছে, দামি গাড়ি দেখিয়ে উঠতি বয়সী তরুণীদের আকৃষ্ট করতেন দিহান। এর পর ঢাকায় নিজস্ব ফ্ল্যাট, অঢেল সম্পত্তি এসব দেখিয়ে প্রেমের ফাঁদে ফেলতো সো। এভাবে তাকে দেখে আকৃষ্ট হয়ে এর আগেও একাধিক তরুণী নির্যাতনের শিকার হয়েছে বলে জানা গেছে। এ যেন ‘কোঁচো খুঁড়তে কেউটে’ বের হয়ে আসার মতো। ছেলের অপকর্মের কারণে এখন বাবার সম্পত্তি নিয়ে প্রশ্ন করছেন অনেকেই। পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, ফারদিন ইফতেখার দিহানের বাসা রাজধানীর লেক সার্কাস এলাকায়। তার বাবা সদ্য অবসরপ্রাপ্ত জেলা রেজিস্ট্রার আব্দুর রব সরকার। তিন ভাইয়ের মধ্যে দিহান সবার ছোট। গত বছর ম্যাপল লিফ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল থেকে ‘ও’ লেভেল শেষ করে দিহান। দিহান ছোট বেলা থেকেই ঢাকা থাকেন। তাই রাজশাহীর এলাকাবাসী কেউই দিহানের বিষয়ে তেমন কিছুই জানে না। দিহানের বাবা রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার রাতুগ্রাম গ্রামের আবদুর রউফ সরকার ছিলেন জেলার সাব রেজিস্টার। গড়েছেন বিপুল অর্থসম্পদ। ঢাকা ও রাজশাহীতে একাধিক বাড়ি-ফ্ল্যাটের মালিক তিনি। অবসরপ্রাপ্ত আবদুর রওফ তার বড় ছেলে সুপ্তসহ রাজশাহীতেই থাকেন। মাঝে মাঝে ঢাকার বাসায় আসেন। তবে বেশিদিন থাকেন না। মেঝ ভাই ও ছোটভাই দিহানসহ তাদের মা থাকেন কলাবাগানের বাসায়। তাদের গ্রামের প্রতিবেশীরা জানান, ‘এ বাড়ি ছাড়াও জেলার বাগমারা উপজেলার তাহেরপুরে তাদের আরও একটি বাড়ি আছে। রাজশাহী শহরেও আছে দু’টি বাড়ি। এর একটি সাগরপাড়া এলাকায়। আরেকটি বাড়ি মহানগরীর পদ্মা আবাসিক এলাকায়। ঢাকায়ও রয়েছে ফ্ল্যাট’। আলোচিত এই ধর্ষণের ঘটনার পর সবদিক ছড়িয়ে পড়ে তাদের পরিবারের বিভিন্ন তথ্য। দিহানের সম্পর্কে তেমন কিছু না জানলেও তার বড় ভাই সুপ্তর ব্যাপারে স্থানীয়দের ধারণা নেতিবাচক। এর আগেও রাজশাহীতে থাকাকালীন সময়ে ২০১১ সালে দিহানের বড় ভাই সুপ্ত রাজশাহী নগরীর হোসেনীগঞ্জের দরিদ্র পরিবারের মেয়ে রুনা খাতুনকে বিয়ের পর অত্যাচার করে মুখে বিষ ঢেলে হত্যা করে বলে অভিযোগ রয়েছে। বাবা আব্দুর রউফ সরকার সে সময় সাব-রেজিস্ট্রার থাকায় টাকার বিনিময়ে ঘটনা ধামাচাপা দেয়। অভিযুক্ত দিহান ও সুপ্তের বারবার অপরাধ বাবার প্রশ্রয়ে সীমা ছাড়িয়েছে বলেও জানায় তাদের গ্রামের বাড়ি দুর্গাপুরের লোকেরা। ছেলের এমন নেক্কারজনক ঘটনায় লজ্জায় গণমাধ্যমে সামনে না আসলেও গণমাধ্যমকে চিঠি দিয়েছেন দিহানের মা। ছেলেকে নির্দোশ বলেই দাবি করেছেন তিনি। এদিকে দিহানের বাবারও একই কথা। ছেলে এমন জঘন্ন কাজ করতে পারে বিশ্বাস করতেই পারছেন না তিনি। যদিও স্থানীয়রা বলছেন, দিহানের বাবার প্রশ্রয়েই দুই ছেলে অপরাধের মাত্রা ছাড়িয়েছে। গণমাধ্যমের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলেও কোনো প্রশ্নের উত্তর দেননি আব্দুর রব। শুধু বলেছেন “আমার সাড়ে উনিশ বছরের ছেলে এমনটি করবে বলে আমার বিশ্বাস হচ্ছে না”। সারা জীবন সৎভাবে জীবনযাপন করছেন বলে নিজেকে দাবি করেন তিনি। আলোচিত এই ঘটনার মধ্য দিয়েই সামাজিক অবক্ষয়ের বিভিন্ন দিক ফুটে উঠেছে। নিহত শিক্ষার্থী নির্যাতিতা হলেও, তার অবাধ চলাফেরা ও বন্ধুর বাসায় আড্ডা নিয়েও সামনে এসেছে নানা প্রশ্ন। অপর দিকে দুই ছেলের বিভিন্ন অপকর্মই বলে দেয় দিহানের বাবার অঢেল সম্পত্তি পেয়ে বখে গিয়েছে দুই ছেলে। একজন জেলা সাব রেজিস্ট্রারের এত সম্পত্তির উৎস কোথায় নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App