×

জাতীয়

 কাঙ্ক্ষিত টিকা আসছে আজ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ জানুয়ারি ২০২১, ০৯:১৮ এএম

 কাঙ্ক্ষিত টিকা আসছে আজ
অবশেষে সময়ের দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ। আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা পর বহুল কাক্সিক্ষত করোনা টিকা দেশে পৌঁছুবে। অবসান ঘটবে দীর্ঘ প্রতীক্ষার। ভারত সরকারের উপহার এবং সিরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে চুক্তির প্রথম চালানের করোনার টিকা দেশে আসছে আজ বৃহস্পতিবার। উপহারের ২০ লাখ এবং চুক্তির প্রথম চালান হিসেবে ১৫ লাখ সর্বমোট ৩৫ লাখ ডোজ করোনার টিকা আজ দুপুরে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বিশেষ ফ্লাইটে দেশে এসে পৌঁছাবে। গতকাল বুধবার এক অনুষ্ঠান শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, টিকা দেশে আসার পরপরই টিকা দান কর্মসূচি শুরু হবে। এ সময় প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। এদিকে, গতকাল করোনার টিকা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নান জানান, বিমানবন্দর থেকে এসব টিকা গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম দোরাই স্বামীসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। টিকা বিমানবন্দরে আসার পর সেখান থেকে নিয়ে রাখা হবে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ইপিআইয়ের স্টোরেজে। টিকার ব্যবস্থাপনা নিয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, আপাতত রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল থেকে দেশে করোনা টিকাদান কর্মসূচি শুরুর প্রাথমিক পরিকল্পনা রয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি সাপেক্ষে চ‚ড়ান্ত দিনক্ষণ ও স্থান নির্ধারিত হবে। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি যুক্ত হবেন। প্রথম দিনে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ২০ থেকে ২৫ জন নাগরিককে টিকা দেয়া হবে। তাদের মধ্যে ডাক্তার, নার্সসহ ফ্রন্টলাইনে যারা কাজ করছেন তারা তো থাকবেনই। এ ছাড়া শিক্ষক, মুক্তিযোদ্ধা, সেনাবাহিনী, পুলিশ, সিভিল প্রশাসন ও গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা থাকবেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) মন্ত্রণালয়ের যৌথ আয়োজনের এই সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক জুয়েনা আজিজ, আইসিটি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম। স্বাস্থ্যসেবা সচিব বলেন, কেনা টিকার প্রথম চালান ও উপহারের টিকা মিলিয়ে প্রথম মাসে আসবে ৭০ লাখ ডোজ টিকা। প্রতিদিন দুই লাখ ডোজ হিসেবে প্রথম মাসে ৬০ লাখ মানুষকে টিকা দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। দ্বিতীয় মাসে ৫০ লাখ এবং তৃতীয় মাসে আবার ৬০ লাখ মানুষকে টিকা দেয়া হবে। প্রথম মাসের ৬০ লাখের দ্বিতীয় ডোজ সংরক্ষিত থাকবে এবং প্রথম মাসে টিকা পাওয়া ব্যক্তিরা পুনরায় তৃতীয় মাসে টিকা পাবেন। টিকা হাতে আসার পর ২৭ অথবা ২৮ জানুয়ারি ঢাকায় প্রথমে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ হবে। ঢাকা মেডিকেল, মুগদা জেনারেল হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল ও কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে প্রাথমিকভাবে এই টিকা দেয়া হবে। পরীক্ষামূলক প্রয়োগের পর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রকোটল অনুযায়ী, পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণের জন্য এক সপ্তাহ অপেক্ষা করা হবে। এরপর টিকা দেয়া হবে সারাদেশে। সম্ভাব্য আগামী ৮ ফেব্রæয়ারি থেকে উপজেলা ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে টিকা দেয়া হবে। আব্দুল মান্নান বলেন, কোভ্যাক্স থেকে মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশ হিসেবে ৬ কোটি ৮০ লাখ টিকা আসবে। ৬ কোটি ৮০ লাখ ডোজ দেয়া হবে ৩ কোটি ৪০ লাখ মানুষকে। আর ভারত থেকে কিনে আনা তিন কোটি ডোজ দেয়া হবে ১ কোটি ৫০ লাখ মানুষকে। তাতে করে ৪ কোটি ৯০ লাখ মানুষ এই দুই উৎস থেকে আসা টিকা পাচ্ছে। এর সঙ্গে রয়েছে উপহারের ২০ লাখ। এই হিসাবে মোট জনসংখ্যা হয় ৫ কোটি ১০ লাখ। কিন্তু দেশের অন্তত ৮ থেকে ৯ কোটি মানুষকে যেন টিকা দেয়া যায় সরকার সেই প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, যদি দেশের মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকা দেয়া যায়, তাহলে সে দেশে হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হবে। আমাদের মাইক্রো প্ল্যানে এই ৮০ শতাংশ মানুষকেই টিকা দেয়ার প্রস্তুতি রয়েছে। মোট ৫ কোটি ১০ লাখের মানুষকে টিকা দেয়ার পরেও যদি প্রয়োজন হয়, তাহলে আরো টিকা আমদানি করা হবে। আগামী জুন-জুলাইয়ের মধ্যে বাংলাদেশেই টিকা তৈরি হবে এবং এটা সহজলভ্য হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম বলেন, প্রথম পর্যায়ে সারাদেশে সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা টিকাদান কেন্দ্র হবে। এ ছাড়া হাসপাতালের বাইরে আর কোথাও টিকাদান কেন্দ্র হবে না। টিকা দেয়ার পর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হয় কিনা তা পর্যবেক্ষণের জন্য টিকা গ্রহণকারী ব্যক্তিকে ১০-১৫ মিনিট পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে যাতে দেশে কোনো ধরনের গুজব তৈরি হয় না সেজন্য সরকারের উদ্যোগ রয়েছে উল্লেখ করে এ বিষয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সহযোগিতা চান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী, টিকাদান কর্মযজ্ঞটি আমরা অত্যন্ত স্বচ্ছতার সঙ্গে সম্পাদন করতে চাই। তাই এ সম্পর্কিত সব ধরনের তথ্য আমরা গণমাধ্যমকে জানাবো। করোনা পরিস্থিতির সর্বশেষ তথ্য আমরা যেভাবে জানাচ্ছি টিকাদান কর্মসূচির তথ্যও আমরা প্রতিদিন জানাব। জিয়াউল আলম জানান, টিকা নিবন্ধন অ্যাপ ‘সুরক্ষা’র কাজ চূড়ান্ত হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে ২৫ জানুয়ারি অ্যাপটি বুঝিয়ে দেয়া হবে। নিবন্ধনের বাইরে কাউকে টিকা দেয়া হবে না। প্রসঙ্গত, ১৮ জানুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, ভারত সরকার বাংলাদেশকে কিছু ভ্যাকসিন উপহার হিসেবে দেবে। যা যে কোনো সময় দেশে চলে আসতে পারে। এর আগে গত ১১ জানুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের মাধ্যমে যে ৩ কোটি ডোজ টিকা কেনা হবে সেটি দেশে আসবে ২১ থেকে ২৫ জানুয়ারির মধ্যে। আর ফেব্রæয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হবে। সেজন্য আগামী ২৬ জানুয়ারি থেকেই শুরু হবে অনলাইনে নিবন্ধন।      

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App