×

মুক্তচিন্তা

বাংলাদেশ এই বোঝা থেকে মুক্তি চায়

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ জানুয়ারি ২০২১, ১০:২৩ পিএম

করোনা পরিস্থিতির কারণে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া বন্ধ ছিল। কিন্তু থেমে ছিল না রাখাইনে দমন-পীড়ন ও কথিত শুদ্ধি অভিযানের নামে মিয়ানমার সেনাবাহিনী অত্যাচার। অভিযানের ভয়ে হাজার হাজার মিয়ানমার নাগরিক রাখাইন ছেড়ে পালাচ্ছে বলে গণমাধ্যমে খবর আসছে। এ পর্যন্ত বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা। তাদের প্রতি সমবেদনা এবং মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রতি সংহতি এবং রোহিঙ্গাদের স্বদেশে প্রত্যাবাসনের তাগিদ জানিয়ে আসছে বিশ্ব সম্প্রদায়। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে রাজি হয়েছে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও চীনের মধ্যে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে ত্রিপক্ষীয় ভার্চুয়াল বৈঠকে এ নমনীয় অবস্থান দেখায় দেশটি। বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দ্রুত এই রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে একমত পোষণ করেছে চীন, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার। এর আগেও আমরা কয়েকবার এমন আশার কথা শুনেছি। বিশেষ করে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে রোহিঙ্গাদের ফেরাতে একাধিকবার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। তখন জাতিসংঘ কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে মিয়ানমার ঘোষণা দিয়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে রাজি হয়েছিল। বিস্তারিত তথ্য দিয়ে একটি তালিকাও তাদের দিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কথা রাখেনি দেশটি। মিয়ানমারের অভিযানের পর ৮ লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এই তালিকা মিয়ানমারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। মিয়ানমার তালিকা থেকে ৪২ হাজার রোহিঙ্গা নাম যাচাই করেছে। তার মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ নাম মিয়ানমার প্রত্যাখ্যান করেছে। ফলে প্রায় ২৮ হাজার রোহিঙ্গাকে মিয়ানমার ক্লিয়ার করেছে। কিন্তু তার মধ্যে কোনো রোহিঙ্গাকে এখনো ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি। এর আগে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষায় মিয়ানমারকে চারটি অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা নেয়ার আদেশ দিয়েছিলেন নেদারল্যান্ডসের হেগে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালত (আইসিজে)। এই রায়কে রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে বড় অগ্রগতি হিসেবে দেখা হয়েছে। আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা ছাড়া রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি নেই। ২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হত্যা, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের মুখে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। বর্তমানে বাংলাদেশে ১১ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রিত। ভারত, জাপানের মতো দেশগুলো চায় এ সংকট এ অঞ্চলের মধ্যেই সমাধান হোক। এই ক্ষেত্রে চীন, রাশিয়ার সমর্থনও জরুরি। মানবিক কারণেই প্রতিবেশী মিয়ানমারের নাগরিকদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়া হয়েছে। এই বিপুলসংখ্যক মানুষের বাড়তি দায়িত্ব বাংলাদেশের জন্য অবশ্যই বড় বোঝা। আমরা আশা করছি, দ্রুত এই সংকটের সমাধান হবে। এ অঞ্চলে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি, স্থিতি এবং নিরাপত্তার জন্য রোহিঙ্গা ইস্যুর রাজনৈতিক সমাধান অপরিহার্য। প্রত্যাবাসন না হওয়ায় মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অবনতি হচ্ছে। বাড়ছে আঞ্চলিক সংকটও। রোহিঙ্গাদের কারণে নানা সমস্যায় জর্জরিত স্থানীয়রা। প্রত্যাবাসন শুরুর জন্য মিয়ানমারের ওপর জোরালো চাপ রাখতে আন্তর্জাতিক মহলের সঙ্গে ক‚টনৈতিক প্রক্রিয়া নতুন করে শুরু করতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App