×

আন্তর্জাতিক

ট্রাম্প অধ্যায়ের অবসান, বাইডেনের শপথ আজ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ জানুয়ারি ২০২১, ১০:২৮ এএম

ট্রাম্প অধ্যায়ের অবসান, বাইডেনের শপথ আজ

ট্রাম্প-বাইডেন।

অনেক জল্পনা শেষে আজ অবসান ঘটতে যাচ্ছে ট্রাম্প অধ্যায়ের। বুধবার (২০ জানুয়ারি) ওয়াশিংটন সময় মধ্যদুপুরে (বাংলাদেশ সময় রাত ১১টা) মঞ্চে দাঁড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন জো বাইডেন ও কমলা হ্যারিস। শপথ পাঠের জন্য নির্মিত হয়েছে সুউচ্চ মঞ্চ।

বাইডেন ও কমলা হ্যারিসকে শপথ পাঠ করাবেন প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস ও বিচারপতি সোনিয়া সটোমাইয়র। শপথ পাঠকে ঘিরে ক্যাপিটাল হিলের কংগ্রেস ভবনের আশেপাশে মোতায়েন করা হয়েছে ২৫ হাজার সৈন্য।

ভবনের সামনের উন্মুক্ত চত্বর লিংকন মেমোরিয়ালে স্বাভাবিক সময়ে যেখানে কয়েক লাখ দর্শকের সমাগম হওয়ার কথা, স্থান নিয়েছে দুই লাখ পতাকা। যে চার লাখ মার্কিন নাগরিক করোনার কারণে মৃত্যুবরণ করেছেন, এই পতাকা ও আলোকবাতি তাঁদের প্রতিনিধি।

শপথ অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে থাকবেন কংগ্রেস সদস্য ও বাইডেন-হ্যারিস পরিবারের লোকজন, বিদায়ী ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স এবং আরো হাজারখানেক অতিথি। বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শপথ অনুষ্ঠানের ঘণ্টাতিনেক আগে স্ত্রী মেলানিয়াসহ ওয়াশিংটন ছেড়ে চলে যাবেন ফ্লোরিডায়।

আমেরিকা এখন একটি প্রবল বিভক্ত দেশ। ট্রাম্পের অনুগত রিপাবলিকানদের অধিকাংশ এখনো বাইডেনকে বৈধ প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্বীকার করেন না। কোনো প্রমাণ ছাড়াই ট্রাম্প ক্রমাগত দাবি করে গেছেন, নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে, জয় ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। সে কথায় বিশ্বাস করে কয়েক হাজার ট্রাম্প-সমর্থক ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিল আক্রমণ করেছেন, যার লক্ষ্য ছিল কংগ্রেসে বাইডেন-হ্যারিসের বিজয় সত্যায়নে বাধা দেওয়া।

এ ঘটনায় সরাসরি উসকানি দেওয়ার জন্য গত সপ্তাহে ট্রাম্প প্রতিনিধি পরিষদে দ্বিতীয়বার অভিশংসিত হয়েছেন। তাঁর শাস্তি নির্ধারণের জন্য বৃহস্পতিবার থেকে সিনেটে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হওয়ার কথা। কংগ্রেস ভবনে হামলার ঘটনা উপেক্ষা করে রিপাবলিকান দলের ১৪৭ জন প্রতিনিধি ও ৬ জন সিনেটর বাইডেন-হ্যারিসের জয়ের সত্যায়নের বিরুদ্ধে ভোট দেন। এ থেকেই বোঝা যায়, হোয়াইট হাউস ছেড়ে যাওয়ার পরও রিপাবলিকান দলে ট্রাম্পের প্রভাব কমবেশি অটুট থাকবে।

ট্রাম্পকে দোষী সাব্যস্ত করতে প্রয়োজন হবে ৬৭ জন সিনেটরের ভোট। সিনেট এখন যদিও ডেমোক্র্যাটদের নিয়ন্ত্রণে, কিন্তু তাঁদের আছে মাত্র ৫০টি ভোট। ১৭ জন রিপাবলিকান সিনেটর ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ভোট দেবেন, এটা ভাবা কঠিন।

রাজনৈতিক বিভক্তি ছাড়া আরও দুটি বড় চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে হবে বাইডেনকে। করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ ও অর্থনীতি চাঙা করা। দ্বিমুখী সমস্যা মাথায় রেখে বাইডেন একটি উচ্চাশাপূর্ণ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন, যার কেন্দ্রে রয়েছে ১ দশমিক ৯ টিলিয়ন ডলারের প্রণোদনা প্রস্তাব। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, প্রথম ১০০ দিনে তিনি ১০০ মিলিয়ন মানুষকে কোভিড টিকা প্রদান করবেন। অবকাঠামো উন্নয়নে আড়াই ট্রিলিয়ন ডলারের একটি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবেন। জলবায়ু সংকট রোধে তাঁর রয়েছে একটি ব্যয়বহুল দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। অভিবাসন সংকট নিরসনে ব্যাপক সংস্কার কর্মসূচিও তিনি প্রস্তাব করেছেন।

এর কোনোটার বাস্তবায়নই সহজ নয়। অনেকেই বলছেন, যা সম্ভব, তার চেয়ে বেশি প্রতিশ্রুতি দিয়ে ফেলেছেন বাইডেন। পরিকল্পনা বাস্তবায়ন বিলম্বিত হলে অথবা প্রত্যাশামতো ফল না পেলে, ঝামেলায় পড়বেন বাইডেন।

শুরু থেকেই একটি পদ্ধতিগত বিপদের মুখোমুখি হতে হবে বাইডেনকে। নিজের মন্ত্রিসভার সদস্যদের নিয়োগ নিশ্চিত করতে তাঁকে সিনেটের দ্বারস্থ হতে হবে। অভিশংসন বিচার শুরু হলে তা শেষ না হওয়া পর্যন্ত সিনেট অধিবেশন একটানা চলবে, যার ফলে বাইডেন প্রশাসনের কাজকর্ম বিঘ্নিত হবে। এ বিবেচনা মাথায় রেখে সিনেটের নতুন ডেমোক্রেটিক নেতা চাক শুমার সিনেট অধিবেশনকে দুই ভাগে ভাগ করার প্রস্তাব করেছেন। প্রাতঃকালীন অধিবেশনে বাইডেন অ্যাজেন্ডা নিয়ে আলোচনা হবে, দুপুর থেকে বসবে অভিশংসন বিচার।

বাইডেনকে শুধু ট্রাম্প-সমর্থক ও রিপাবলিকান কংগ্রেস সদস্যদের বিরোধিতা নয়, নিজ দলের ভেতরের অন্তর্দ্বন্দ্বও সামলাতে হবে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ডেমোক্রেটিক পার্টির ভেতরে তথাকথিত বামপন্থীদের গুরুত্ব বেড়েছে। তৃণমূল পর্যায়েও ঘটেছে ‘র‍্যাডিক্যালাইজেশন’। চলতি কংগ্রেসে এই চিন্তাধারার সমর্থকদের উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি রয়েছে। চাইলে শুধু স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি নয়, প্রেসিডেন্ট বাইডেনের জীবনকেও এরা অতিষ্ঠ করে তুলতে সক্ষম। রিপাবলিকানদের হাতে রাখতে বাইডেন কোনো সুপরিচিত ‘প্রগতিশীল’ ব্যক্তিকে নিজ মন্ত্রিসভায় স্থান দেননি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App