×

সারাদেশ

বাঁশখালীতে বালুখেকো সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ জানুয়ারি ২০২১, ০৯:১৫ পিএম

বাঁশখালীতে বালুখেকো সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য
চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার পুকুরিয়া, বৈলছড়ী, চাম্বল, পুইছড়ি এলাকায় বালুখেকো ৮/১০টি সিন্ডিকেটের সদস্যরা সাগর , নদী ও পাহাড়ি ছরা থেকে বালু উত্তোলন বেড়েছে। প্রতিদিন শঙ্খ নদীর পুকুরিয়া ও সাধনপুর অংশে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে ও চাম্বল, পুইছড়ি ও বৈলছড়ী পাহাড়ি ছরা থেকে সেচযন্ত্র মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এই বালু ব্যবসায়িরা ডেম্পার ট্রাক দিয়ে ধানী জমি ও পুকুর ভরাটে প্রতি গাড়ী ১৫শ-১৮শ টাকা দরে বিক্রি করছে। এ ব্যাপারে বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) আতিকুর রহমান ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়ে বালু ব্যবসায়িদের আটক করে নগদ টাকা জরিমানা ও শাস্তি প্রদান করেন। কিন্তু বালু ব্যবসায়ীদের এ অপতৎপরতা এখনো বন্ধ হয়নি। বালু ব্যবসায়িরা রাতভর বালু উত্তোলন করে ট্রাক যোগে ভোর সকাল থেকে বিক্রি শুরু করেন। ক্রেতারা বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাচ্ছেন। এই শুষ্ক মৌসুমে এলাকায় প্রবাসী ও ব্যবসায়িরা পাঁকা ভবন তৈরির কার্যক্রম শুরু করায় বালুর চাহিদা বেড়ে গেছে। এইজন্য বালু ব্যবসায়িদের তৎপরদাও বৃদ্ধি পেয়েছে। পুঁজি ছাড়া এই বালু ব্যবসার কাড়ি কাড়ি টাকার লোভে অতি মুনাফালোভী ব্যক্তিরা বালু ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছে। সরজমিনে উপজেলার পুকুরিয়া, সাধনপুর পশ্চিম বৈলগাঁও, চাম্বল ও বৈলছড়ি পাহাড়ি এলাকায় পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, শঙ্খ নদীর পুকুরিয়ার বরুমচড়া ও সাধনপুরের পশ্চিম বৈলগাঁও স্কুল সংলগ্ন স্থানে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করে স্তুপ করে রাখা হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, পশ্চিম বৈলগাঁও অংশে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করছে নিজাম উদ্দীন নামে এক যুবক। তারা রাজনীতির সাথে জড়িত থাকার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বালু উত্তোলন করছে বলে জানা যায়। পুকুরিয়ার বরুমচড়া এলাকায় রাস্তা ও বেড়িবাঁধ কেটে ফাইপ বসিয়ে শঙ্খ নদী থেকে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করছে ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মুজিবুল হক। এখানে ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়ে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করলেও তবুও বালু ব্যবসা বন্ধ হয়নি। শঙ্খ নদী থেকে পুকুরিয়া ও সাধনপুর অংশে অবাধে বালু উত্তোলনের ফলে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সদ্য নির্মিত ব্লক গুলো ধ্বসে পড়ছে নদীর কূল ভেঙে ফসলি জমি ও বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। এদিকে বৈলছড়ির অভ্যারখীল নামক পাহাড়ি এলাকায় ৬টি অবৈধ বালু মহাল রয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, বৈলছড়ি ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের মো. মনছুর, মো. মনছুর আলম ও আবদুল্লাহ এই অবৈধ বালু মহাল পরিচালনা করছেন। তারা রাজনৈতিক দলের পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে। পুঁইছড়ি ইউনিয়নের নাপোড়া এলাকায় সরকারি ভাবে চি‎হ্নিত একটি স্থানে বালু মহাল থাকলেও ওই এলাকায় অবৈধ মহাল রয়েছে আরো চারটি। শঙ্খ নদী থেকে বালু উত্তোলনের বিষয়ে জানতে চাইলে পুকুরিয়া ইউনিয়নের ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মুজিবুর হক বলেন, ‘আমি বালু উত্তোলনের সাথে জড়িত নই।’ ছাত্রলীগের মহিউদ্দিনরা এই ব্যবসার সাথে জড়িত। তারা গতবার ৫০ হাজার টাকা জরিমানাও দিয়েছেন। পুকুরিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আসহাব উদ্দিন বলেন, ‘শঙ্খ নদীর তীরবর্তী পুকুরিয়ার বরুমচড়া এলাকা থেকে বালু খেকোরা প্রকাশ্যে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করছে। বালু উত্তোলনের পর বালি পরিবহনের ফলে গ্রামীণ রাস্তার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বালু গুলো ডেম্পারের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে বিক্রির উদ্দেশ্যে নিয়ে যাচ্ছে। বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বালু উত্তোলনের বিষয়টি অবহিত করার পর কিছুদিন বন্ধ থাকলেও আবার বালু ব্যবসায়িরা তৎপর হয়ে পড়েছে। বৈলছড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. কফিল উদ্দিন বলেন, বৈলছড়ি পাহাড়ি ৬/৭টি ছরা থেকে অবৈধভাবে উত্তোলনকৃত বালু মহাল রয়েছে। প্রতিদিন ১০/১২টি ট্রাক বালু নিয়ে যাচ্ছে। এখানে পুলিশী অভিযান প্রয়োজন রয়েছে। বালু মহাল উচ্ছেদের ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসনের মাসিক আইনশৃঙ্খলা সভায় বালু তোলা বন্ধ ও উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত হয়েছে। বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার বলেন, বাঁশখালীর পাহাড়ি এলাকার চাম্বল, বৈলছড়ি ও সাধনপুর ছরা ও শঙ্খ নদী থেকে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলনের ব্যাপারে অভিযান পরিচালিত হয়েছে। পুকুরিয়া ও পুঁইছড়িতে অভিযান চালিয়ে জরিমানা আদায় করা হয়েছে। শুধু নাপোড়াতে একটি বালু মহাল নিলাম করা হয়েছে। করোনাকালীন সময়ে কিছুদিন অভিযান বন্ধ থাকার সুযোগকে কাজে লাগিয়েছে। অবৈধ বালু উত্তোলনের ব্যাপারে দ্রুত অভিযান পরিচালনা করা হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App