×

সারাদেশ

পুনর্খননের ৩ মাসের মধ্যে খাল ভরাট

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ জানুয়ারি ২০২১, ০৯:৩০ পিএম

পুনর্খননের ৩ মাসের মধ্যে খাল ভরাট

ছবি: প্রতিনিধি

যশোরের কেশবপুর উপজেলার ২৭ বিল এলাকার ডায়ের খালের ৮ ব্যান্ড স্লুইচ গেট পুনর্খননে ১২ লাখ টাকা ব্যয় করা হলেও সেই খাল ৩ মাসেই পলিতে ভরাট হয়ে গেছে। পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় পাঁজিয়া ইউনিয়নের ৩ গ্রামের ৪‘শ হেক্টর জমির বোরো আবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। অপরদিকে, বোরো আবাদের লক্ষ্যে কয়েক দিন ধরে ঘের মালিকরা ঘেরের পানি স্যালো মেশিন দিয়ে নিষ্কাশন কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। সেচের পানি ডায়ের খাল দিয়ে নিষ্কাশিত না হওয়ায় বাগডাঙ্গা, মনোহরনগর গ্রামে ঢুকে অর্ধশত বাড়ি তলিয়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষকে দুর্বিসহ জীবনযাপন করতে হচ্ছে।

জানা গেছে, ২৭ বিল সংলগ্ন পাঁজিয়া ইউনিয়নের বাগডাঙ্গা, মনোহরনগর ও মাদারডাঙ্গা গ্রামের বর্ষার অতিরিক্ত পানি ডায়ের খালের ৮ ব্যান্ড স্লুইচ গেট দিয়ে হরি নদীতে নিষ্কাশন হয়ে থাকে। ২০১০ সালের পর হরি নদী নাব্যতা হারানোর কারণে ২৭ বিল সংলগ্ন এলাকায় ভয়াবহ জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। জলাবদ্ধতা নিরসনে হরি নদী খনন না করে পানি উন্নয়ন বোর্ড ২০১৮ সালে অপরিকল্পিতভাবে কেশবপুরের প্রধান ৩ নদীসহ সংযোগ খালগুলি প্রায় ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে খনন করে। ফলে হরি নদী দিয়ে পানি নিষ্কাশন হতে না পেরে অতিরিক্ত পলিতে নদী আপারভদ্রা নদী মরে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। এ কারণে গত অক্টবরে ৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ডায়ের খালের ৮ ব্যান্ড স্লুইচ গেটটি পুনর্খনন করা হলেও ৩ মাসেই তা পলিতে ভরাট হয়ে গেছে। ফলে ২৭ বিলসহ পাঁজিয়া ইউনিয়নের বাগডাঙ্গা, মনোহরনগর ও মাদারডাঙ্গা গ্রামের পানি নিষ্কাশন পথ বন্ধ হয়ে গেছে।

চলতি মৌসুমে বোরো আবাদের লক্ষ্যে বাগডাঙ্গা, মনোহরনগর এলাকার অধিকাংশ ঘেরের পানি গত কয়েক দিন ধরে ঘের মালিকরা স্যালো মেশিন দিয়ে নিষ্কাশন কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এ স্যালো মেশিন দিয়ে নিষ্কাশিত অতিরিক্ত পানি পলিতে ভরাট ডায়ের খাল দিয়ে নিষ্কাশন না হয়ে ঢুকে পড়ছে লোকালয়ে। অসময়ে ঘের মালিকদের সেচের পানি বাগডাঙ্গা, মনোহরনগর গ্রামের পরিতোষ রায়, বিকাশ রায়, মানিক চাঁদ রায়, সুকচাঁদ রায়, কার্তিক রায়, অসিম রায়, প্রদীপ রায়, সমিরন রায়সহ অর্ধশত ব্যক্তির বাড়িঘরে পানি থৈ থৈ করছে। স্যালো মেশিন দিয়ে ঘেরের পানি অপসারণ অব্যাহত থাকলে ওই গ্রামের অধিকাংশ বাড়িতে পানি উঠে যাবে বলে এলাকাবাসির অভিযোগ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, কেশবপুর উপজেলার পার্শ্ববর্তী মনিরামপুর উপজেলার শ্রীফলা বিলের পানি গত ১ জানুয়ারি থেকে বয়ারখোলা ভায়া কুশখালি সড়কের ওপর ৬টি স্যালো মেশিন দিয়ে নিষ্কাশন চলছে। এ পানিও ঢুকছে কেশবপুর উপজেলার বাগডাঙ্গা, মনোহরনগর গ্রামে।

এছাড়া বাগডাঙ্গা, মনোহরনগর গ্রামের ঘেরের পানি ঘের মালিক দীন মোহাম্মদ খিরু ও সেলিমুজ্জামান আসাদ স্যালো মেশিন দিয়ে নিষ্কাশন কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ডায়ের খাল ভরাট হওয়ায় এ পানিও বাগডাঙ্গা, মনোহরনগর গ্রামে প্রবেশ করায় অধিকাংশ রাস্তা পানিতে তলিয়ে গেছে। পানির হাত থেকে রক্ষায় জনগণকে বাঁশের সাকো, ভেলা, ডিঙি নৌকায় পারাপার হচ্ছে ।

পাঁজিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম মুকুল বলেন, এবছর পানি না সরায় সেচের পানি লোকালয়ে ঢুকছে। জনগণের অভিযোগের ভিত্তিতে ১৫/১৬ দিন আগে ঘেরের পানি নিষ্কাশন বন্ধে এলাকায় মাইকিং করা হয়েছে। কিন্তু ঘের মলিকরা তা না মেনে সেচ অব্যাহত রেখেছেন।

এ ব্যাপারে উপজেলা সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা এমএম আলমগীর কবির জানান, কৃষকের বোরো আবাদের সময় ঘেরের পানি নিষ্কাশনের শর্তে তারা ঘেরে সেচ দিচ্ছেন। নিষ্কাশন সম্ভব না হলে চলতি বছর ৪‘শ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ অনিশ্চিত।

কেশবপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মুন্সি আছাদুল্লাহ বলেন, গত অক্টোবরে ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে ডায়ের খালের ৮ ব্যান্ড স্লুইচ গেটের পলি অপসারণ করা হয়েছিল। কিন্তু হরিনদী দিয়ে পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। হরি নদীর ভবদহ থেকে খর্নিয়া পর্যন্ত ১৯ কিলোমিটার পলিতে ভরাট হয়ে গেছে। ভবদহ প্রকল্পের মধ্যে ওই নদী অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। যদি প্রকল্প অনুমোদন হয় তাহলে ৮/১০ বছর এলাকা জলাবদ্ধতার হাত থেকে রক্ষা পাবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App