×

মুক্তচিন্তা

ধর্ষণ মহামারির ভ্যাকসিন কবে আসবে?

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ জানুয়ারি ২০২১, ১০:৩৮ পিএম

পুরো বিশ্ব আজ প্রকম্পিত করোনা ভাইরাসের ভয়াল থাবায়। এখন পর্যন্ত লাখো প্রাণ কেড়ে নিয়েছে, নিচ্ছে। তবে এই ঘোর অমানিশায় আচ্ছন্ন থেকেও জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত উৎকর্ষে ভরপুর বিশ্ব মানবসভ্যতাকে বাঁচানোর আলো দেখিয়েছে ভ্যাকসিন আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে। হ্যাঁ, আমরা সবাই মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি করোনা কেটে গিয়ে পৃথিবী আবার সুস্থ হয়ে উঠবে। কিন্তু করোনা মহামারি সঙ্গে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে যা আবিভর্‚ত হয়েছে তা কি আদৌ কোনো ভ্যাকসিন দিয়ে রোধ করা সম্ভব? প্রায় প্রতিদিনই পত্রিকার পাতা, টেলিভিশনের পর্দা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম খুললেই অত্যন্ত নান্দনিক উপমায় উপমিত হয়ে নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, গণধর্ষণ, ধর্ষণের পর হত্যার খবর চোখের সামনে ভেসে ওঠে। এ ছাড়া সোশ্যাল মিডিয়া তো আছেই। যদিও অনেকেই মনে করেন, পত্রিকা ও মিডিয়ায় নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের খবরগুলো অতিরঞ্জিত করে প্রচার করা হয়। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) সাম্প্রতিক প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী চলতি বছর গড়ে প্রতি মাসে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১১১ জন নারী। সত্যিই সাম্প্রতিক দিনগুলোতে নারী ধর্ষণসহ নারীঘটিত অপরাধের সংখ্যা, ব্যাপ্তি ও বিস্তার ঊর্ধ্বমুখী। সমাজের প্রগতিশীল ও বিজ্ঞজনরা ধর্ষণের কার্যকারণ ও হেতু বিচার-বিশ্লেষণ করে করণীয় বাতলাচ্ছেন। তরুণ-যুবা, রাজনৈতিক-সমাজকর্মী ধর্ষণ প্রতিরোধে রাজপথ তর্জন-গর্জনে মুখরিত করে তুলছেন। আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, অনেক দাবি-দাওয়া উত্তোলন করলেও যে বিষয়ে বেশি সোচ্চার হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করি সেটাই উঠে আসছে না। বিভিন্ন গবেষণা প্রতিবেদনের সারাংশ লক্ষ্য করলেই বোধগম্য হয় আমাদের সমাজে বিচারহীনতার সংস্কৃতি ও বিচারে দীর্ঘসূত্রতা এখনো ব্যাপকভাবে বিরাজমান। বিখ্যাত চৈনিক দার্শনিক কনফুসিয়াসের কাছে তার এক শিষ্য জানতে চেয়েছিলেন, ‘রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলিক উপাদানগুলো কী কী?’ জবাবে কনফুসিয়াস বলেন, ‘খাদ্য, নিরাপত্তা এবং জনগণের আস্থা অর্জন।’ শিষ্য পুনরায় জানতে চাইল, ‘দুর্যোগ মুহূর্তে জরুরি প্রয়োজনে রাষ্ট্রকে যদি কোনো কিছু উৎসর্গ করতে হয়, তবে সেটি কী?’ কনফুসিয়াস উত্তরে বলেন, খাদ্য বা নিরাপত্তা যদি বিসর্জন দিতেও হয়, তবুও জনগণের আস্থা যেন কখনো না হারায়। দার্শনিকের উক্তির মর্মার্থের মধ্যেই প্রতীয়মান হয় রাষ্ট্র পরিচালনায় জনগণের আস্থা অর্জন কতটা গুরুত্বপূর্ণ। বিচারহীনতার সংস্কৃতি ও বিদ্যমান বিচার ব্যবস্থার প্রতি আস্থাহীনতার কারণে সমাজে ধর্ষণের মতো সামাজিক ব্যাধি আজ লাগামহীন পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। যাকে মহামারির সঙ্গেই তুলনা করা যায়। এসব কারণ ছাড়াও আইনের সঠিক ও যথাযথ বাস্তবায়ন না হওয়াও একটি বড় কারণ বলে বিবেচিত। আর এসব সমস্যার মূলে রয়েছে রাজনৈতিক প্রভাব-প্রতিপত্তি ও দলীয় ছত্রছায়া। অপরাধীরা রাজনৈতিক সংগঠনের সদস্য বলে নিজেদের ধরাছোঁয়ার বাইরে বলে মনে করে। কেউ আমার কিছু করতে পারবে না, আমি আইনের ঊর্ধ্বে এমন আগ্রাসী মনোভাব রেখেই তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিদ্যমান বিচার ব্যবস্থাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দিনের পর দিন এসব অপরাধ করেই চলে। আর এখানে তাদের অপরাধ করার ফুয়েল জুগিয়ে চলে রাজনৈতিক প্রভাব বলয়। ফলস্বরূপ সমাজে ভিক্টিমদের মধ্যে সৃষ্টি হয় রাষ্ট্রের প্রতি আশাহীনতা। প্রশ্নবিদ্ধ করে দেশের আইনশৃঙ্খলা ও বিচার ব্যবস্থাকে। এ কথা অনেকখানি তাত্তি¡ক হলেও সত্য যে, আইনের কঠোরতার মাধ্যমে বিচার ব্যবস্থার প্রতি বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ানো সম্ভব। কিন্তু একই সঙ্গে সামাজিক মূল্যবোধ উন্নয়ন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার প্রতি জোর দেয়া উচিত। কারণ সুশাসনের অনুপস্থিতিতে সমাজে সামাজিক ভারসাম্য বিঘিœত হয়। এর সমান্তরালে সমাজের একটি সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ মনে করে ‘সমাজ না বদলালে অবস্থা বদলাবে না, আর কোনো দিন ধর্ষণ কমানোও যাবে না।’ এক্ষেত্রে দার্শনিক ইমানুয়েল কান্টের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে হাড় শয়তানদের সমাজেও সুশাসন সম্ভব। আমাদের সমাজেও ধর্ষণ কমানো সম্ভব যদি আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা যায় ও দ্রুত বিচার সম্পন্ন করা যায়। শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App