×

শিক্ষা

কামাল মারা গেলে রাতে পুরো জবি ক্যাম্পাস হয়ে যায় ফাঁকা!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ জানুয়ারি ২০২১, ০৯:০৭ পিএম

কামাল মারা গেলে রাতে পুরো জবি ক্যাম্পাস হয়ে যায় ফাঁকা!

প্রথম যখন করোনায় লকডাউন দিল তখন অনেকে ছিল অনেকে চলে গেছিল। কিন্তু ক্যাম্পাসে আমাদের কামাল ড্রাইভার মারা গেলে রাতারাতি পুরো ক্যাম্পাস সব ফাঁকা হয়ে যায়। কারণ লকডাইনে দিনে স্থান পরিবর্তন করা নিষিদ্ধ ছিল। তাই সবাই রাতের আধারে ১২ টার পর এক এক করে চলে যান। সেই আতঙ্কের কথা অনুভব করা যায় না। কামাল ভাই ক্যাম্পাসে থাকত আর সবসময় আমাদের সাথেই আড্ডা দিত। নিরাপত্তাকর্মীরা ছাড়া কর্মকর্তা, কর্মচারীরাসহ সবাই ওইদিন রাতের ভিতরেই চলে যায়। শুধু দায়বদ্ধতার কারনে আমরা চলে যেতে পারেনি। অথচ আমাদেরও পরিবার পরিজন আছে। এগুলো কেউ বুঝে না। আমাদের বাপ মাও কান্নাকাটি করেছে চলে আসার জন্য। কিন্তু দায়িত্বের কারণে আমরা যেতে পারি নি। চাকরি ছোট হলেও আমাদের দায়ভার অনেক বড় ভারী কন্ঠে ভোরের কাগজে করোনার সেই সময়ের কথা এভাবেই তুলে ধরেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) কয়েকজন নিরাপত্তাকর্মী।

তারা আরও বলেন, শুধু নিরাপত্তা না, ক্যাম্পাস পয়-পরিস্কার করা, ঝাড়ু দেওয়া, ক্যাম্পাসে ঔষধ স্প্রে করে রোগ জীবানুমুক্ত করার কাজও আমাদের করতে হয়েছে। কারণ ওই সময় সুইপাররাও ভয়ে ক্যাম্পাসে আসত না। ওই কয়মাস আমরা রফিক ভবনে খায়ছি, রফিক ভবনে ঘুমায়ছি আর চব্বিশ ঘন্টা ক্যাম্পাস পাহারা দিয়েছি। সেসময় আমাদের সঙ্গে থাকা নিরাপত্তাকর্মী খলিল ভাইও যখন করোনায় আক্রান্ত হয় তখন আমাদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরিবার থেকে কান্নাকাটি শুরু করে দেয়। তবুও ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার স্বার্থের আর আমাদের দায়ভারের কারনে ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যেতে পারি নি। তবে খলিল ভাইয়ের আক্রান্ত হলে পরিবারকে বুঝানো গেলেও পরে কামাল ভাই করোনায় মারা গেলে বুঝানো দায় হয়ে যায়। আমাদের সবার মাঝেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

করোনায় আক্রান্ত হওয়া নিরাপত্তাকর্মী মো. খলিল বলেন, করোনা আক্রান্তের সেই সময়ের কথা মনে পড়লে আজও গা শিউরে উঠে। ২২ দিন আমাকে এক ঘরে রেখে দেয়। খাবার দূরে রাখা হতো। নিজের ছেলে মেয়েদের দেখতে পেতাম না। করোনার যন্ত্রণার চেয়ে আমার প্রতি সমাজের আচরণ ও মৃত্যুর আতঙ্ক কবরের যন্ত্রণার চেয়েও বেশি অনুভব করেছি। তিনি বলেন, করোনা আক্তান্ত হওয়ার কারণে আবেদন করলে আমাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাঁচ হাজার টাকা দেওয়া হয়। ভিসি স্যার ও রেজিস্ট্রার স্যার ফোন করে আমার খোঁজ নিয়েছিলেন।

মার্চে দেশে করোনার প্রকোপ শুরু হলে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ন্যায় বন্ধ হয়ে যায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। করোনার প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় এলাকা ভিত্তিক দেশের বিভিন্ন জায়গাকে করা হয় লকডাউন। সারা দেশে আক্রান্তের ও মৃতের সংখ্যার দিক দিয়ে প্রথম থেকেই ঢাকা ছিল রেড জোনে। এজন্য রেড জোন ঢাকা ছেড়ে ঢাকার বাইরের প্রায় অধিকাংশ শিক্ষক, শিক্ষার্থী কর্মকর্তা, কর্মচারী সবাই করোনা থেকে সুরক্ষায় চলে যান ঢাকা ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ও মানুষ শুণ্য পরিবেশে ক্যাম্পাসে দেখা দেয় নিরাপত্তাহীনতা। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য সবাই নিজের নিরাপত্তায় বাসায় অবস্থান করলেও ক্যাম্পাসের নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২ নিরাপত্তাকর্মী। স্থায়ী ও হাজিরা ভিত্তিক এসব কর্মীরা করোনা আক্রান্তের কথা চিন্তা না করে সর্বদা সজাগ থেকেছেন ক্যাম্পাস নিরাপত্তায়। ওই সময় তাদেরকে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার আশ্বাস দেওয়া হলেও তা বাস্তবায়ন করা হয়নি বলে দুঃখ প্রকাশ করে জানান তারা।

হাজিরা ভিত্তিক নিরাপত্তাকর্মীরা বলেন, ক্যাম্পাসে যখন করোনার আতঙ্ক তখনও আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাহারা দিয়েছি। কিন্তু আমাদের মূল্যায়ন হয় নি। আমরা কোন ঝুঁকি ভাতাও পায়নি। এমনকি আমরা প্রত্যেক কুরবানী ঈদে যে বাৎসরিক ১৫ হাজার টাকার বোনাস পায় সেটা এখনও পায়নি। ওইসময় আমাদেরকে সবাই আশ্বাস দিয়েছে। কিন্তু এখন কেউ আমাদের কথা মনে রাখেনি।

নিরাপত্তাকর্মীদের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মোস্তফা কামাল বলেন, করোনার ভিতর ঝুঁকি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তাকর্মীদের কাজ অত্যন্ত প্রশংসনীয়। আমি রফিক ভবনে তাদের থাকার ব্যবস্থা সহ খাবারের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম। বার্ষিক বোনাসের বিষয়ে অর্থ ও হিসাব দপ্তর বলতে পারবে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ও হিসাব দপ্তরের পরিচালক কাজী মো. নাসির উদ্দীনের সাথে একাধিক বার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায় নি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App