×

জাতীয়

উপজেলা প্রশাসনে টানাপড়েন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ জানুয়ারি ২০২১, ০৯:৪০ এএম

উপজেলা প্রশাসনে টানাপড়েন

উপজেলা পরিষদ

তিন ধরনের জনপ্রতিনিধি বনাম সরকারি কর্মকর্তা

কোথাও দ্বিমুখী আবার কোথাও ত্রিমুখী দ্বন্দ্বে চরম বিশৃঙ্খলা উপজেলা প্রশাসনে। বিশেষ করে উপজেলায় কার ক্ষমতা বেশি; উপজেলা প্রশাসন তথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), উপজেলা চেয়ারম্যান না স্থানীয় সংসদ সদস্যের- এ নিয়ে নিত্য টানাপড়েন তৃণমূল প্রশাসনে। সম্প্রতি উপজেলা প্রশাসনের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হওয়ার জন্য উচ্চ আদালতে গেছেন উপজেলা চেয়ারম্যানরা। তবে উপজেলা প্রশাসন বলছে, সরকার উপজেলা চেয়ারম্যানদের জন্য উপজেলায় সুনির্দিষ্ট করে ১৭টি বিভাগের দায়িত্ব দিয়েছে। এমন কর্মকাণ্ডের ফলে প্রশাসনের একদম তৃণমূল স্তরে উপজেলা প্রশাসন বনাম উপজেলা চেয়ারম্যান এবং সংসদ সদস্যের প্রশাসনিক সম্পর্কের ফাটল আরো প্রকট হচ্ছে। এর ফলে প্রশাসনের কর্মকর্তারাও কাজ করতে আগ্রহ হারাচ্ছেন। জনসাধারণ কাক্সিক্ষত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান ভোরের কাগজকে বলেছেন, উপজেলা প্রশাসনে ত্রিমুখী দ্বন্দ্ব চলছে। উপজেলা পরিষদের উপদেষ্টা স্থানীয় সংসদ সদস্য, কিছু বিভাগের সভাপতি উপজেলা চেয়ারম্যান ও কিছু বিভাগের সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। এর ফলে উপজেলা প্রশাসনে কর্মরতদের ভারসাম্য রেখে চলতে হয়।

বিশ্লেষকরা বলেছেন, উপজেলা পরিষদ উপজেলা পর্যায়ের স্থানীয় সরকারের কাঠামো। আর উপজেলা প্রশাসন উপজেলায় জাতীয় বা কেন্দ্রীয় সরকার তথা ‘কেবিনেট ডিভিশনের’ প্রতিনিধি। উপজেলা প্রশাসন সরকারের মাঠ প্রশাসনের অন্যতম অঙ্গ। কেবিনেটের ‘এলোকেশন অফ বিজনেস’ অনুযায়ী মাঠ প্রশাসনের নানা বিষয় দেখার দায়িত্ব তাদের বলে উল্লেখ আছে। তবে কেউ কেউ বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর বোঝা উচিত, ভবিষ্যতে অশিক্ষিত কাউকে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন দেয়া উচিত নয়। কারণ যারাই উপজেলা চেয়ারম্যান পদে জয়ী হয়ে পরিষদে যাবেন তাকে অন্তত ৪/৫ জন বিসিএস ক্যাডার অফিসারকে মোকাবিলা করতে হবে। সেজন্য রাজনৈতিক দলের বিচক্ষণ ব্যক্তিকেই মনোনয়ন দেয়া উচিত।

স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ ভোরের কাগজকে বলেন, একদিকে ৩ ধরনের জনপ্রতিনিধি অন্যদিকে সরকারি কর্মকর্তা। এর মধ্যে উপজেলা পরিষদ আইনটিও ত্রুটিপূর্ণ। সঙ্গতকারণে সমস্যা হবেই এবং সেই সমস্যা নিরসনে সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের তাগিদ নেই। বিষয়গুলো অনেক দিন ধরে বলে এলেও কোনো কাজ হচ্ছে না।

বিভিন্ন নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, উপজেলায় ইউএনওদের দুটো সত্ত্বা রয়েছে। এর একটি হচ্ছে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে উপজেলা পরিষদকে সাচিবিক সহায়তা দেয়া এবং আরেকটি হচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে উপজেলা প্রশাসনের প্রধান হিসেবে

সমন্বয়ক হওয়া। অন্যদিকে উপজেলা পরিষদের কার্যক্রম সুনির্দিষ্ট। তাদের হাতে উপজেলা স্তরে মাত্র ১৭টি বিভাগের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। হস্থান্তরিত এই ১৭টি বিভাগ ছাড়া সরকারের অন্যান্য বিষয়ে উপজেলা চেয়ারম্যানের কোনো দায়িত্ব নেই।

সরকার থেকে এভাবে দায়িত্ব বণ্টনের ফলে উপজেলায় উপজেলা চেয়ারম্যানরা ভূমি, আইনশৃঙ্খলা, বিচারিক ক্ষমতা (ম্যাজিস্ট্রেসি), নির্বাচন, খাদ্য ইত্যাদি বিভাগ সংক্রান্ত কোনো কমিটির সভাপতি হতে পারেন না। নামসর্বস্ব উপদেষ্টা হয়ে এসব কমিটিতে থাকতে হয় উপজেলা চেয়ারম্যানদের। অন্যদিকে এসব কমিটির প্রধান হয়ে থাকেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা। কিন্তু বাস্তবে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানরা এসব মানতে চান না। প্রায়ই উপজেলায় সব বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে চান, যেগুলো তার এখতিয়ার বহির্ভূত। ক্ষেত্রবিশেষে উপজেলা প্রশাসনের অস্তিত্বও স্বীকার করতে চান না উপজেলা চেয়ারম্যানরা।

নথিপত্র ঘেঁটে আরো দেখা গেছে, ১০টি মন্ত্রণালয়ের সুনির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে উপজেলা পর্যায়ের ১৭টি স্থায়ী কমিটির সভাপতি উপজেলা চেয়ারম্যানরা। হস্তান্তরিত বিষয়ে সরকার স্পষ্ট করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এছাড়া উপজেলা পরিষদের কার্যাবলিও আইনে সুনির্দিষ্ট করা আছে। আর ইউএনওর হস্থান্তরিত অংশের কাজও সুনির্দিষ্ট করা আছে। এসব কাজের বাইরে ইউএনওদের বাকি সব কাজ কেন্দ্রীয় সরকারের আওতাভুক্ত। এক্ষেত্রে উপজেলা পরিষদের কোনো দায়-দায়িত্ব বা খবরদারির সুযোগ নেই। এসব কাজের তত্ত্বাবধান করবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনার।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, উপজেলা পরিষদ আইন ১৯৯৮-এর ২৪ ধারায় হস্তান্তরিত বিষয় এবং ৬২ ধারায় সরকার ও পরিষদের কাজের বিরোধ নিয়ে বলা আছে, সরকারের সব কাজ পরিষদের নয়, যেগুলো আইনের তফসিলে বর্ণিত শুধু সেগুলো পরিষদের। বাকি কাজ সরকারের। ইউএনও উপজেলা পর্যায়ে সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে অন্যান্য কাজ সম্পাদন করবেন। সব মিলিয়ে আইনেই স্পষ্ট করা আছে কার কী দায়িত্ব। কিন্তু যখন কেউ আইনের বাইরে ক্ষমতা খাটাতে যায় তখনই বিরোধ তৈরি হয়।

চেয়ারম্যানরা স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হওয়ায় উপজেলার সব বিষয়ে তারা হস্তক্ষেপ করতে চান। ফলে বিরোধ তৈরি হয়। জমি/সায়রাতমহাল/অবৈধ দখল উদ্ধার/বাজার ইজারা দেয়া/খাস জমি-সংক্রান্ত কোনো দায়িত্ব পরিষদ তথা উপজেলা চেয়ারম্যানের নেই। কিন্তু প্রায়ই বিভিন্ন কারণে চেয়ারম্যানরা হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু ঠিক এই জায়গাতেই ইউএনওরা যখন উপজেলা চেয়ারম্যানের অন্যায় আবদার শুনতে চান না তখনই বিরোধ শুরু হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ইউএনও বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ নিয়ে কোনো কোনো চেয়ারম্যান অভিযোগ তুলেছেন। কারণ এসব ক্ষেত্রে উপকারভোগী বাছাই, নির্মাণকাজ প্রভৃতি ক্ষেত্রে অনেকের ব্যক্তি স্বার্থ জড়িত থাকে। অনেকে নিজেদের লোকদের ঘর বা জমি দিতে চান। তখন বিরোধ তৈরি হয়। অথচ এ বিষয়টি পরিষদে হস্থান্তরিত নয়। তাছাড়া এ ধরনের কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য সরকার ইউএনওকে সভাপতি করে কমিটি গঠন করেছে যাতে নিরপেক্ষভাবে বাছাই কাজ করা যায়। আরেকজন ইউএনও বলেছেন, সরকারি ধান কেনা নিয়েও বিরোধ হয়। অনেকে নিজেদের লোকদের নাম দিতে চান। অনেকে লটারির মাধ্যমে বাছাই বা প্রকৃত কৃষক বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করেন। অথচ খাদ্য বিভাগ উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছে হস্তান্তরিত নয়।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, অনেক সময় পরিষদের নিজস্ব কাজ নিয়েও বিরোধ তৈরি হয়। যেমন- আইন অনুযায়ী পরিষদের উন্নয়ন তহবিল বা এডিপি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কেউ কেউ নীতিমালা বহির্ভূত প্রকল্প নিতে চান। আবার অনেক সময় অনেকে পিআইসির মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে চান, কারণ তারা নিজেরা কাজ করতে চান, উন্মুক্ত টেন্ডার করতে দিতে চান না। অথচ আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ অর্থ পিআইসির মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা যায়। ইউএনও এক্ষেত্রে আইনের বাইরে যেতে না চাইলেই বিরোধ তৈরি হয়। এছাড়া বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ব্যানারে কার নাম থাকবে না থাকবে, কে কোথায় বসবে না বসবে, স্থানীয় রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ইত্যাদি অসংখ্য বিষয়ে বিরোধ হয়। ইউএনও চান আইনের মধ্যে থাকতে (এটাকে চেয়ারম্যান ধরে নেন তাকে পাত্তা/গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না), অন্যদিকে চেয়ারম্যান চান তার কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে। অনেক সময় ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বও থাকে। সব মিলিয়ে উপজেলা পর্যায়ে বিষয়গুলো বেশ জটিল।

মৌলভীবাজারের জুড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল-ইমরান রুহুল ইসলাম ভোরের কাগজকে বলেন, উপজেলা পরিষদ স্থানীয় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান যা স্থানীয় উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে। উপজেলা পরিষদের কার্যক্রম ও পরিষদের চেয়ারম্যানের কার্যপরিধি আইনে সুনির্দিষ্ট করে দেয়া আছে, একইভাবে ইউএনওর কার্যপরিধিও সুনির্দিষ্ট। যার যার আইনানুগ পরিধির মধ্যে থাকলে সমস্যা বা বিরোধ তৈরি হয় না। ইউএনওরা অবশ্যই চেয়ারম্যানদের পরিষদের কাজে সহায়তা করবেন ও জনপ্রতিনিধি হিসেবে তাদের সম্মান করবেন। তবে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানদের এটা মাথায় রাখা প্রয়োজন, ইউএনও পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন ছাড়াও সরকারের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রতিনিধি হিসেবে মাঠ প্রশাসনের অন্যান্য দায়িত্ব পালন করেন, যেখানে পরিষদের সম্পৃক্ততা নেই। হস্তান্তরিত বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রক্রিয়া আইনানুগ হলে এবং পরিষদ বা চেয়ারম্যান অন্যান্য বিষয়ে অযথা হস্তক্ষেপ না করলে চেয়ারম্যান ও ইউএনওর মধ্যে দ্বন্দ্ব থাকার কোনো কারণ নেই। পাশাপাশি স্থানীয় সরকারের ইউনিট হিসেবে উপজেলা পরিষদের নিজস্ব আয়ের সক্ষমতা বাড়ানো প্রয়োজন, এতে জাতীয় তহবিলের ওপর চাপ কমবে, পরিষদ স্থানীয় উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে অধিকতর মনোযোগী হবে এবং সরকারি অন্য দপ্তরের সঙ্গে দ্বন্দ্ব নিরসন হবে।

এদিকে গত ২ জানুয়ারি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছেন উপজেলা চেয়ারম্যানরা। এতে তারা অভিযোগ করেন, ইউএনওরা উপজেলা পর্যায়ে শাসকের ভূমিকা পালন করছেন। তাদের আমলাতান্ত্রিক মনোভাব জনপ্রতিনিধিদের কাজে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে।

স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধিদের সংগঠন বাংলাদেশ উপজেলা পরিষদ এসোসিয়েশনের উদ্যোগে আয়োজিত ওই সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে, কর্মকর্তারা জনপ্রতিনিধিদের আলাদা করে সামন্তবাদী শাসন প্রতিষ্ঠার ষড়যন্ত্র করছেন। কর্মকর্তাদের আইন পরিপন্থি আচরণ ও কাজের কারণে মাঠপর্যায়ে সমন্বয়হীনতা চলছে বলেও অভিযোগ করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।

সংগঠনের সভাপতিও দুমকি উপজেলা চেয়ারম্যান হারুন-অর রশীদ হাওলাদার বলেন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের অনুমোদনক্রমে কাজ সম্পাদনের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে একাধিকবার পরিপত্র ও আদেশ জারি করা হয়। কিন্তু উপজেলা পর্যায়ে এই নির্দেশনা বা আদেশের কোনো প্রতিপালন হয় না। এতে আরো বলা হয়, উপজেলা পরিষদে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি থাকলেও প্রজাতন্ত্রের একজন কর্মকর্তা (ইউএনও) সবকিছু উপেক্ষা করে উপজেলায় শাসকের দায়িত্ব পালন করছেন। কিছু প্রশাসনিক কর্মকর্তা গণতান্ত্রিক বিকেন্দ্রীকরণকে পাশ কাটিয়ে জনপ্রতিনিধিবিহীন জনপ্রশাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।

এদিকে স্থানীয় প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যানকে বাদ দিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও) কীভাবে উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন স্থায়ী কমিটিতে সভাপতি হন, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে হাইকোর্ট। আগামী ১০ দিনের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সচিব, আইন মন্ত্রণালয় সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। রিট আবেদনে উপজেলা পরিষদ আইনের ৩৩ ধারা চ্যালেঞ্জ করা হয়। এই ধারায় ইউএনওদের উপজেলা পরিষদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন ও আর্থিক শৃঙ্খলা আনয়নসহ সাচিবিক দায়িত্ব পালনের বিধান রাখা আছে। এছাড়া রিটে ইউএনওরা বিভিন্ন আমন্ত্রণপত্রে উপজেলা পরিষদ না লিখে উপজেলা প্রশাসন লিখে থাকেন, তারও বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। পাশাপাশি মন্ত্রণালয় থেকে সরকারি আদেশ বাস্তবায়নে যেসব কমিটি গঠন করা হয়, সেসব কমিটিতে ইউএনওকে চেয়ারম্যান করার বৈধতাও চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে।

আইনের ৩৩ ধারার (১) উপধারায় বলা হয়েছে, ‘উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হইবেন এবং তিনি পরিষদকে সাচিবিক সহায়তা প্রদান করিবেন।’ ৩৩-এর (২) উপধারায় বলা হয়েছে, ‘পরিষদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন, আর্থিক শৃঙ্খলা প্রতিপালন এবং বিধি দ্বারা নির্ধারিত অন্যান্য কার্যাবলি পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা সম্পাদন করিবেন’।

রিটকারীদের আইনজীবী ব্যারিস্টার হাসান এম এস আজিম বলেন, পরিষদ কোনো সিদ্ধান্ত দিলে তা ইউএনও বাস্তবায়ন না করলে পরিষদের করণীয় কিছু থাকে না। কারণ উপজেলা পরিষদের কাছে ইউএনওর জবাবদিহির বাধ্যবাধকতা আইনে রাখা হয়নি। স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার স্বাধীনতাকে এই একটি ধারার মাধ্যমে কেড়ে নেয়া হয়েছে। এই ৩৩ ধারা সংবিধানের ৭ ও ৫৯ অনুচ্ছেদের পরিপন্থি। ৫৯(১)-এ স্থানীয় শাসন সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘আইনানুযায়ী নির্বাচিত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর প্রজাতন্ত্রের প্রত্যেক প্রশাসনিক একাংশের স্থানীয় শাসনের ভার প্রদান করা হবে’।

তিনি আরো বলেন, মাঠ প্রশাসন কোনো চিঠিপত্র লিখলে বা অনুষ্ঠান করলে দাওয়াতপত্র বা ব্যানারে উপজেলা পরিষদ না লিখে লিখছে উপজেলা প্রশাসন। এই ‘উপজেলা প্রশাসন’ কোথাও উল্লেখ নেই। এর মাধ্যমে ইউএনওরা স্থানীয় সরকারের ক্ষমতার অপব্যবহার করে থাকেন। এছাড়া সরকারি কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে যত কমিটি গঠন করা হয় তার সবগুলোয় ইউএনওকে চেয়ারম্যান করা হয় এবং উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানদের করা হয় উপদেষ্টা। আবার মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় উল্লেখ থাকে, ইউএনও ইচ্ছে করলেই আরো সদস্য অন্তর্ভুক্ত করতে পারবেন। এর মধ্য দিয়ে উপজেলা পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের প্রায় নিষ্ক্রিয় করে রাখা হয়। এমনই অনেক ক্ষেত্রে আয়-ব্যয়ের হিসাবও তাদের দেয়া হয় না, যা সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক ও স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার চেতনার পরিপন্থি। রিট আবেদনে অন্তর্বর্তী নির্দেশনাও চাওয়া হয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App