×

জাতীয়

৬২ সহযোগীর মাধ্যমে টাকা পাচার করতেন হালদার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ জানুয়ারি ২০২১, ০৯:৩৮ এএম

হাজার কোটি টাকা ফ্রিজ

প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ মাথায় নিয়ে বিদেশে পাড়ি দেয়া ইন্টারন্যাশনাল লিজিং এন্ড ফাইন্যান্স সার্ভিস লিমিটেডের পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদার (পি কে হালদার) ৬২ সহযোগীর মাধ্যমে অর্থ পাচার করেছেন বলে জানিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল বৃহস্পতিবার সংস্থাটির সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, বিভিন্ন ব্যাংকে এসব ব্যক্তির অ্যাকাউন্টে রাখা প্রায় এক হাজার ৬০ কোটি টাকা ফ্রিজ করা হয়েছে।

দুদক সচিব বলেন, পি কে হালদারের ইস্যুটি এখন অনেক বড়। বিভিন্ন ব্যক্তির মাধ্যমে তার বিভিন্ন দিকে সূত্র আছে। আমরা এরই মধ্যে অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। মোটামুটি এ পর্যন্ত ৬২ ব্যক্তির সঙ্গে তার লিংক বা সূত্র পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, পি কে হালদার সংশ্লিষ্টতায় বুধবার এক নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে তিন দিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এ সময় দুদক সচিব বলেন, বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের পাচার করা অর্থে বিদেশে (কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুর) বিলাসবহুল বাড়ি বা ফ্ল্যাট কিনেছেন এমন বাংলাদেশিদের পরিচয় জানতে চেয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আমরা চিঠি পাঠিয়েছি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তারা স্ব স্ব এজেন্সির মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে আমাদের জানাবে। এটি কমিশনের নিয়মিত কাজের অংশ বলেও তিনি জানান।

দুদক সূত্র জানায়, পিপল লিজিং এর ৩৬শ কোটি টাকা লোপাটের পেছনে রয়েছে পিকে হালদারের আত্মীয় স্বজনের নামেই ভুয়া প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংক হিসাব খুলে ঋণ দেয়া। পিকে হালদারের ন্যাচার এন্টার প্রাইজ ও এমটিবি মেরিন লিমিটেডের মালিক নওশের উল ইসলাম ও তার স্ত্রী মমতাজ বেগম এবং এমটিবি মেরিন লিমিটেডের মালিক সনজিব কুমার হাওলাদার, বাসুদেব ব্যানার্জী ও পাপিয়া ব্যানার্জীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টের এসব টাকা জব্দ করা হয়। এর মধ্যে জব্দ করা টাকা ছাড়া বাকি অর্থ তুলে নেয়া হয়।

তথ্য প্রমাণের প্রেক্ষিতে এরই মধ্যে নওশেরুল ইসলামের কোম্পানির ৯৫২ কোটি টাকা, মমতাজ বেগমের নামের কোম্পানির হিসাবের ২.৬৯ কোটি টাকা, বাসুদেব ব্যানার্জীর কোম্পানির ৪.৬৪ কোটি টাকা, পাপিয়া ব্যানার্জীর নামে থাকা কোম্পানির ৪.২৭ কোটি ৬১ লক্ষ টাকা জব্দ করেছে দুদক। বাকি অর্থ সংশ্লিষ্ট ৬২ ব্যাক্তির হিসাবের মাধ্যমে পাচার হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এদিকে এসব অভিযুক্তকে কয়েক দফা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হলেও তারা দুদকে হাজির হন নি। দুই দফার নোটিশে পিপল লিজিংসহ অর্থ পাচারে সহযোগিতায় ন্যাচার এন্টার প্রাইজ ও এমটিবি মেরিন লিমিটেডসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতনকে জিজ্ঞাসাবাদে তলব করা হয়।

দুদক সূত্র জানায়, আগামী দুই কার্যদিবসে পিপল লিজিং ফিন্যান্সিয়াল এন্ড সার্ভিসেস লিমিটেডের সিইও-সহ এসব প্রতিষ্ঠানের আরো ৬ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের কথা রয়েছে। এ সময়ের মধ্যে অভিযুক্তরা তাদের বক্তব্য দিতে দুদকে উপস্থিত না হলে অভিযোগের বিষয়ে তাদের কোন বক্তব্য নেই বলে গণ্য হবে।

এর আগে পি কে হালদারের ৭০ থেকে ৮০ জন গার্লফ্রেন্ডের সন্ধানের কথা জানায় দুদক। গত ২০

ডিসেম্বর দুদকের আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান বলেন, পি কে হালদারের এসব গার্লফ্রেন্ডের অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য মিলেছে। পি কে হালদার বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে লাপাত্তা রয়েছেন। মাঝে একবার টাকা ফেরতের শর্তে দেশে ফিরতে চাইলেও দেশে ফিরলে গ্রেপ্তার হতে হবে হাইকোর্টের এমন আদেশের পর অসুস্থতার কথা বলে আর ফেরেননি তিনি। জানা গেছে, কানাডার বেগমপাড়ায় বাড়ি করে রাজকীয় জীবনযাপন করছেন তিনি। উল্লেখ্য, এর আগে পিকে হালদারের নামে বেনামে থাকা সব স্থাবর সম্পদ আদালতের নির্দেশে জব্দ করা হয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App