×

মুক্তচিন্তা

খোলা সব, বন্ধ শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ জানুয়ারি ২০২১, ১০:৩৭ পিএম

খোলা সব, বন্ধ শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান!

ফাইল ছবি

চরম স্বাস্থ্যবিধির প্রাচীর রক্ষা করে পৃথিবী আবার চলতে শুরু করেছে। বাংলাদেশও ব্যতিক্রম নয়। বরং বলা যায় পৃথিবীর অন্যান্য দেশ থেকে বাংলাদেশ অনেক বেশি নিশ্চিন্তে চলছে। দেশের জনগণের জীবন পদ্ধতি এবং চলাফেরা দেখলে মাঝে মধ্যে অনেকের চিন্তা আসতে পারে এই দেশে কি সত্যিই করোনার প্রাদুর্ভাব ছিল! এটা ঠিক যে, প্রয়োজন কোনো বাধা মানে না। জীবন-জীবিকার তাগিদে তাই তথাকথিত স্বাস্থ্যবিধির প্রলেপে মানুষ ফিরেছে কর্মসংস্থানে। দিব্যি চলছে হাটবাজার, পার্ক, পর্যটন শিল্প, অফিস-আদালত, যানবাহন, সভা-সমাবেশ, উদ্বোধন অনুষ্ঠান, বিয়ে-শাদি, প্রচার-প্রচারণা থেকে শুরু করে সবকিছু। সারাদেশে নির্বাচনী হাওয়া আসতে শুরু করেছে। আগামী ২৭ জানুয়ারি করোনার কারণে স্থগিত বন্দর নগরী চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচনও হতে যাচ্ছে। জোরেশোরে চলছে প্রচার-প্রচারণা, মানুষের ঢল যেন চোখে পড়ার মতো। সোশ্যাল ডিসটেন্স তেমন একটা চোখে পড়ে না বাজারে, লোকালয়ে কিংবা অফিস-আদালতে।

দেশে যেখানে সবকিছুই খোলা, সেখানে একমাত্র ব্যতিক্রম এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। দীর্ঘ প্রায় এক বছর হতে যাচ্ছে দেশে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে আছে। স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতেই বাংলাদেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে এবং অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। যদিও অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্ত করার সামর্থ্য সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নেই, ছিল না। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে কিছুদিন পর পর ছুটি বাড়ানো ছাড়া কোনো কার্যকরী ঘোষণা এখনো পর্যন্ত আসেনি। কেননা তারা মনে করছেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলে দিলে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা পড়বেন মারাত্মক ঝুঁকিতে, করোনার প্রাদুর্ভাব চলে যেতে পারে নিয়ন্ত্রণের বাইরে। তাই সরকার চাইছে না কোমলমতি শিক্ষার্থীদের নিয়ে ঝুঁকি নিতে। কিন্তু আমাদের হর্তাকর্তারা কি এই কোমলমতি শিক্ষার্থীর অভিভাবক থেকে বেশি দরদি হয়ে গেলেন! যেখানে পর্যটন এলাকা, পার্ক, শপিংমল থেকে শুরু করে হাটবাজার কোথায় নেই এই কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পদচারণা? কই এদের অভিভাবকদের এই নিয়ে কোনো মাথাব্যথা আছে কি? তাহলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে লাভের লাভই কি বা মিলছে, কাজের কাজই বা কি হচ্ছে? সবকিছু চলমান রেখে শুধু শিক্ষা কার্যক্রমের গতিরোধ করা কতটা যুক্তিযুক্ত ও শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের জন্য কল্যাণকর ভেবে দেখা দরকার। এদিকে উচ্চতর শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বছর লসকে যেমন মেনে নিতে পারছে না, হতাশায় নিমজ্জিত হচ্ছে, ভবিষ্যৎ জীবন নিয়ে চিন্তিত, তদ্রুপ অতি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে শিশু শিক্ষার্থীরাও। এটা তো অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই যে, স্কুল, কোচিং সেন্টার ও শিক্ষককেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থায় বাংলাদেশের শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীরা অভ্যস্ত এবং শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের অজ্ঞতা, উদাসীনতাই এ অভ্যস্ততার অন্যতম একটা কারণ। আর উচ্চশিক্ষার শিক্ষার্থীরা মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার কী যৌক্তিকতা আছে? স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা না হয় শিশু-কিশোর, স্বাস্থ্য বিষয়ে অতটা সচেতন নয়, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের কেন একই দশা? তারা তো যথেষ্ট পরিপক্ব। এদিকে আবার আমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষকরাও অতটা অভ্যস্ত নন অনলাইন ক্লাসে, তাই তারাও চান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলে দেয়া হোক।

জীবন-জীবিকায়নের জন্য কর্মসংস্থানে ফিরে আসার প্রয়োজনীয়তা যেমন সত্য তেমনি আরেকটা সত্য যে, শিক্ষা কার্যক্রম দীর্ঘদিন বন্ধ থাকলে ভবিষ্যতের জন্য আশানুরূপ মেধা বিকশিত হবে না। উন্নয়নের জন্য মেধার বিকল্প তো নেই। বলা হয়ে থাকে শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড এবং যে জাতি যত বেশি শিক্ষিত, সে জাতি তত বেশি উন্নত। তাহলে শিক্ষার মতো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় এতটা হেলাফেলায় এগিয়ে নিলে আদতে ফলাফল কী হতে পারে, ভাবা দরকার। আশা করি শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা গুরুত্ব সহকারে বিষয়টি ভাববেন।

শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App