×

জাতীয়

কাউন্সিলর পদে আ.লীগ বিদ্রোহীরা মাঠে, সংঘাত সৃষ্টির আশঙ্কা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ জানুয়ারি ২০২১, ০৯:৪৬ এএম

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে কাউন্সিলর পদে মাঠে থাকা বিদ্রোহী প্রার্থীদের পক্ষে নগর আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে অবস্থান নিয়ে সহযোগিতা করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিদ্রোহীদের নিয়ে নগর আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে মতবিরোধ ও পাল্টাপাল্টি অবস্থান লক্ষ্য করা গেছে। নগরীর অধিকাংশ ওয়ার্ডেই বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে দলেরই বিদ্রোহীরা মাঠে থাকায় ক্রমেই সংঘাতপ্রবণ হয়ে উঠেছে নির্বাচনী পরিবেশ। এই পরিস্থিতিতে সংঘাত এড়ানো এবং মেয়র পদে দলীয় প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত করতে বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীদের তালিকা করে কেন্দ্রের কাছে তাদের বহিষ্কারের সুপারিশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নগর আওয়ামী লীগ।

গত মঙ্গলবার রাতে নগরীর পাঠানটুলি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাহাদুর ও বিদ্রোহী প্রার্থী আবদুল কাদেরের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে একজন নিহত হন। নিহত আজগর আলী বাবুল (৫০) প্রার্থী বাহাদুরের সমর্থক ছিলেন। ঘটনার পর কাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। বাহাদুর উপমন্ত্রী নওফেল এবং কাদের আ জ ম নাছিরের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। এ ঘটনার একদিন পর বুধবার রাতে নগরীর দারুল ফজল মার্কেটের দলীয় কার্যালয়ে কার্যনির্বাহী কমিটির জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় শীর্ষ নেতাদের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় ও তর্ক-বিতর্ক হয়েছে বলে জানা গেছে। এ নিয়ে সভায় উত্তেজনাও সৃষ্টি হয়। তবে শেষ পর্যন্ত বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীদের বহিষ্কার করার সুপারিশ করে কেন্দ্রের কাছে চিঠি দেয়া হবে বলে সভায় সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া বিদ্রোহীদের যারা সহযোগিতা করছেন, চিঠিতে তাদেরও বহিষ্কারের সুপারিশ থাকবে বলে জানা গেছে। আজ শুক্রবার সেই সুপারিশের চিঠি কেন্দ্রে পাঠানোর কথা রয়েছে।

চসিক নির্বাচনে নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৩৪টিতেই আওয়ামী লীগের মনোনীত কাউন্সিলর প্রার্থীদের বিরুদ্ধে এক বা একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। নগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের কেউ কেউ এসব বিদ্রোহী প্রার্থীদের সমর্থন-সহযোগিতা দিয়ে আসছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টেও বিষয়টি তুলে এনে দলীয় হাইকমান্ডকে পাঠানো হয়েছে বলেও জানা গেছে। চসিক নির্বাচনে মাঠে থাকা বিদ্রোহী প্রার্থীর মধ্যে বেশির ভাগের বিরুদ্ধে হত্যা, চাঁদাবাজি, হামলাসহ বিভিন্ন ঘটনায় মামলা, ভোটকেন্দ্র দখলসহ নানা অভিযোগ আছে। বিদ্রোহী প্রার্থীদের অধিকাংশই নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। অন্যদিকে চসিক নির্বাচনে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের সরে যেতে অনুরোধ-আহ্বান, নির্দেশ ও হুঁশিয়ারি দিয়ে আসছিলেন চসিক নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, ‘মহানগর আওয়ামী লীগ সভা করে বিদ্রোহীদের বহিষ্কারের সুপারিশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যারা বিদ্রোহীদের নেপথ্যে সমর্থন দিচ্ছেন আমি মনে করি, তারা দল করেন না। তারা দলের বিরোধিতা করছেন। তাদেরও দল থেকে বহিষ্কার করা উচিত।’

বুধবার রাতের জরুরি সভায় উপস্থিত বিভিন্ন নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সভায় নেতাদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য, উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। সভায় নাছির এবং নওফেলের মধ্যে পাল্টাপাল্টি বাক্যবিনিময় হয়। সভায় আ জ ম নাছির উদ্দিন বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থী তার অনুসারী নন বলে দাবি করে তিনি বলেন, পাঠানটুলির হত্যাকাণ্ড কোনো ধরনের নির্বাচনী সহিংসতা নয়। এটা নিজেদের মধ্যে ব্যক্তিস্বার্থে হয়েছে। সে জন্য মহানগর আওয়ামী লীগ কোনো বিবৃতি দিতে পারে না। নাছির অভিযোগ করেন, নওফেলের অনুসারীদের কেউ কেউ ফেসবুকে দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী ও অসৌজন্যমূলক কথাবার্তা লেখেন। জবাবে নওফেল তাদের সতর্ক করার কথা বলেন। এছাড়া সভার শেষ পর্যায়ে সম্প্রতি মেয়রপ্রার্থী রেজাউলের সমর্থনে আয়োজিত একটি সমাবেশ থেকে বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থী আনজুমান আরা বেগমকে নামিয়ে দেয়া নিয়ে নাছিরের তোপের মুখে পড়েন চন্দন ধর। এদিকে নগর কমিটির এক শীর্ষ নেতা সভায় ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনেও কয়েকজন বিদ্রোহী প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন বলে বক্তব্য দেন। নওফেল প্রতিবাদ করে বলেন, ‘ঢাকায় ২-৩ জন বিজয়ী হয়েছেন। এটা উদাহরণ হতে পারে না। আমরা কোনো অবস্থাতেই আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে পারি না।’

অন্যদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে নগরীর জিইসি মোড়ে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান নওফেলের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন। সভার বিষয়ে নওফেল বলেন, বুধবার রাতের সভার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। দল যাদের মনোনয়ন দিয়েছে তাদের পক্ষে আমরা সবই ঐক্যবদ্ধ থাকব। বিদ্রোহীদের কেউ পৃষ্ঠপোষকতা না করার বিষয়ে একমত হয়েছি। নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকও এ ব্যাপারে একমত হয়েছেন। বিদ্রোহীদের বহিষ্কারের জন্য নগর আওয়ামী লীগ তালিকা করে দ্রুততম সময়ে কেন্দ্রে পাঠাবে।

নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, দলের কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ড সিদ্ধান্ত নেয়ার সর্বোচ্চ ফোরাম। ওই ফোরামের সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার সুযোগ দলের কোনো নেতার নেই। সেই বোর্ডের সিদ্ধান্ত মোতাবেক চসিক নির্বাচনে মেয়র পদে ও কাউন্সিলর পদে যারা মনোনয়ন পেয়েছেন তাদের জন্য কাজ করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।

নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ইব্রাহীম হোসেন চৌধুরী বাবুল বলেন, চসিক নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বাইরে বিদ্রোহীদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য কেন্দ্রের কাছে চিঠি পাঠানোর বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বিদ্রোহীদের দল ও সহযোগী সংগঠন থেকে বহিষ্কারের সুপারিশ করে তালিকা কেন্দ্রে পাঠানো হবে। ভবিষ্যতে যেন তারা নির্বাচনের সুযোগ না পায় এবং বিদ্রোহীদের যারা সহায়তা করছে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App