×

সাময়িকী

সে তখনো রং ও আলোর ভেতর নিমগ্ন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ জানুয়ারি ২০২১, ০৮:০০ পিএম

সে তখনো রং ও আলোর ভেতর নিমগ্ন

সে যখন রং ও আলোর ভেতর, আমি তখন রোদ পোহাচ্ছি, রোদ। একদমই প্রত্যুষ আয়নার সামনে। তখনো তাকে চেনা যাচ্ছিল না। আমি খুঁজছিলাম সকাল আলোর সাইকেল। দিগন্ত পর্যন্ত ঘূর্ণিন চাকা আলোর সাইকেল। অথচ আমি দেখছি না। দিনেও না, রাতেও না। কিছুই দেখছি না। রোদ পোহাচ্ছি, রোদ। একদমই প্রত্যুষ আয়নার সামনে। শেষে অনেক রাত্রির ভেতর দেখছি একটা আকাশ আলোর ডিম। ডিমের ভেতর যে আলো, তাও কিন্তু রং। সূর্য ও মানুষ হচ্ছে রঙের দরিয়া। এ দুইয়ের মধ্যে সমস্ত রং খুঁজে পাওয়া যায়। আমি খুঁজিনি, হয়তো বা খুঁজেছি। ধ্রুব এষ খুঁজে পেয়েছে রঙের দরিয়া। আকাশ পেয়েছে, জ্যোৎস্না পেয়েছে, পেয়েছে আলোর বৃষ্টি, আর আমি পেয়েছি ধ্রুবর মতো একটা নিদারুণ বন্ধু। বন্ধু তো অনেকেই আছেন, তাকে নিদারুণ বললাম কেন? নিদারুণ বললাম এই জন্য যে, ধ্রুব সবসময় অনুভ‚তিতে থাকার মতো একটা পাগলপারা মানুষ। তার সঙ্গে বন্ধুত্বের মাঝে আকাশ খুঁজে পাই, আলোর বৃষ্টি খুঁজে পাই। এ রকম সম্পর্ক হচ্ছে আমাদের অনাবিল সৌন্দর্যে ঘিরে রাখার মতোই। এবার তার সঙ্গে পরিচয়ের পর্বটা বলি। বছর আট-নয় হবে। পল্টনের নোয়াখালী টাওয়ার লিফটে আমি ও ধ্রুব। আমি তার অফিসে তার কাছেই যাচ্ছিলাম, আট তলায় রয়েছে সময় গ্রাফিক্সের অফিস। লিফটে চোখাচোখি হলেও কথা হয়নি। অনুভ‚তিতে ঠিকই কথা হয়েছে। ধ্রæবও আমাকে চিনেছে, আমিও তাকে চিনেছি। তবু আমরা কেউ কারও সঙ্গে কথা বলিনি। অবশ্য এর আগে আমার কাব্যগ্রন্থের প্রচ্ছদ নিয়ে তার সঙ্গে মোবাইলে দুই-তিনবার কথা হয়েছে। সেই আমাকে তার অফিসে আসতে বলেছে। আমি কখনো তার ছবিও দেখিনি, তবু অনুভ‚তিতে একটা চিত্রকল্প দাঁড়াল, যা হুবহু তার মতোই। লিফটের ভেতর আটতলায় উঠতে এক মিনিটের কিছু সময় বেশি লাগে। সেই এক মিনিট কয়েক সেকেন্ডে মনে হচ্ছে অনেক কথা হয়েছে, আসলে কোনো কথা হয়নি। সময় গ্রাফিক্স অফিসে ধ্রুব ও আমি ঢুকলাম। ধ্রুব তার নিজ কক্ষে প্রবেশ করল। আমি অফিসে ঢুকে একজন দরবেশ মার্কা শুভ্র বকের অবয়বের মানুষকে জিগ্যেস করলাম, ভাই, আমি ধ্রুব এষ-এর সঙ্গে দেখা করতে আসলাম। তিনি বললেন, আপনি তো ধ্রুবদার সঙ্গে এক সঙ্গেই আসলেন। একটু অপেক্ষা করুন। আমি অপেক্ষা করলাম। আধা ঘণ্টা পর ধ্রুব তার কক্ষ থেকে বের হলো আমি পরিচয় দিতেই, ধ্রুব বললেন আমি আপনাকে চিনতে পেরেছি। বললাম কীভাবে চিনলেন? ধ্রুব বললেন লিফটেই আপনাকে চিনেছি। আশ্চর্য লিফটে তো আরও মানুষ ছিল, আমাকে কীভাবে চিনলেন এবং বুঝলেন? কেন কথা হয়েছে না দুই-তিনবার। ধারণা করেছি আপনি এ রকমই হবেন, একদম পাগলপারা, ছয় ফুট দুই ইঞ্চি। হা হা হা। তারপর পরিচয় করিয়ে দিলেন ওই দরবেশমার্কা মঈনভাইয়ের সঙ্গে। তিনি উপন্যাস লেখেন। একে একে পরিচয় করে দিলেন বুলবুল ভাই, রহীম শাহ, পান্থ, মিথুন আরো অনেকের সঙ্গে। তারা প্রত্যেকেই স্ব-স্ব ক্ষেত্রে সবাই খ্যাতিমান। সবার সঙ্গে পরিচয় হলেও ধ্রুবর সঙ্গে পরিচয়টা ছিল আমার অসম্পূর্ণ। সে অসম্পূর্ণ বোঝাতে পারব না। সেটাও অনুভ‚তির বিষয়। একদিন ধ্রুব মোবাইলে এসএমএস করে জানালেন, ওরে আমার পাগল বন্ধু, পাগল, অফিসে একটু আসবে? আমি তো অবাক এভাবে পাগল শব্দটা মাঝেমধ্যে মায়ের মুখে শুনতাম। মায়েরা তো দরদ দিয়ে সন্তানকে পাগল-রাজা-বাদশা কতকিছুই-বা ডাকেন। আমার অধিকাংশ প্রেমিকরাও আমাকে পাগল বলত। আর কেউ বলেনি। ধ্রæব বলেছে। এটা তার স্পর্ধা। মারাত্মক স্পর্ধা। আমার জন্মের শহর নোয়াখালীতেও কেউ কোনোদিন পাগল বলেনি। অন্যকিছু বলেছে। অন্যকিছু কী বলেছে তা বলব না। ধ্রুবকে বলেছি। ধ্রুব জানে। অন্য কারও জানতে ইচ্ছা করলে ধ্রুবর থেকে জেনে নেবেন। মনে হয় সে বলবে না। না বলারই কথা। কিন্তু আমি তার সব কথা বলে দেব। তার আমানত খেয়ানত করব। ধ্রুব এষ হচ্ছেন বইয়ের প্রচ্ছদ জগতের একটা টার্নিং পয়েন্ট। বাংলা প্রচ্ছদে সুররিয়ালিজমের প্রবর্তক ধ্রুব এষ। দু-বাংলার সালভাদর দালি। এ কথা আমি বলিনি, বলেছেন অদ্রীশ বিশ্বাস। হুমায়ূন আহমেদ স্যার বলেছেন ভিন্ন কথা, সে কথা নাই-বা লিখলাম। পাঠক হুমায়ূন আহমেদের গ্রন্থ হিজিবিজি পড়ে দেখবেন। আহম্মদ ছফা বলেছেন, ধ্রুব একদল তারুণ্যের মাঝখানে বসবে। ধ্রুব ঠিকই বসেছে। দরবেশ ও বুড়োদের মাঝখানে চেপে বসেছে। আর তারুণ্যকে মাথায় রেখেছে সূর্যের মতোই। শিশুর প্রাণে রেখেছে যিশুর দৃষ্টি। সে তখনও রং ও আলোর ভেতর নিমগ্ন চিত্তে অনাবিল।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App