×

মুক্তচিন্তা

বিসিএসের নিয়োগে দীর্ঘসূত্রতা কেন?

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ জানুয়ারি ২০২১, ০৯:৩৮ পিএম

বর্তমানে বাংলাদেশ সিভিস সার্ভিসের ২৬টি বিভিন্ন ক্যাডারের জন্য বিসিএসে অংশ নেন দেশের লাখো মেধাবী তরুণ। বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের অধীনে বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ক্যাডারদের সর্বোচ্চ মেধাবী হিসেবে গণ্য করা হয়। কিন্তু বিসিএসের সার্কুলার থেকে নিয়োগ প্রক্রিয়ার সর্বশেষ পর্যায়ের জন্য লেগে যায় কয়েক বছর। এতে করে বেকারত্বের সমস্যায় পড়তে হয় অপেক্ষারত মেধাবীদের। পরিসংখ্যান দেখলে বলা যায়, ৩৮তম বিসিএসের সার্কুলার হয় ২০১৭ সালের ২০ জুন, প্রিলি পরীক্ষা হয় ২৯ ডিসেম্বর ২০১৭। লিখিত পরীক্ষা শুরু হয় ৮ আগস্ট ২০১৮, লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ভাইবা শুরু হয় ৩১ জুলাই ২০১৯ তারিখে এবং ভাইবা শেষ হয় ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। ৩৮তম বিসিএসের চ‚ড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করা হয় ৩০ জুন ২০২০-এ। ৩৮তম বিসিএসের গেজেট এখনো প্রকাশিত হয়নি, যদি দ্রুত সময়ের মধ্যে গেজেট প্রকাশ ও জয়েনিং হয় তারপরও সার্কুলার দেয়া থেকে চ‚ড়ান্ত নিয়োগ প্রক্রিয়া পর্যন্ত প্রায় ৪ বছর লেগে যাচ্ছে! নিকট অতীতের অন্য বিসিএসগুলোর পরিসংখ্যানও প্রায় একই রকমের (বিশেষ বিসিএস ব্যতীত)। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলো থেকে হাজার হাজার শিক্ষার্থী প্রতি বছর স্নাতক পাস করে বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন। কিন্তু বিসিএসের এই দীর্ঘসূত্রতার দরুন অনেক মধ্যম আয়ের ও নিম্ন আয়ের পরিবার থেকে উঠে আসা শিক্ষার্থীদের জন্য এতদিন ধৈর্য ধরে থাকার মতো অবস্থা থাকে না।

৩৪তম বিসিএসের নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করতে সরকারি কর্মকমিশনের সময় লেগেছিল ৩ বছর ৪ মাস। ৩৫তম বিসিএসের নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ হয় তুলনামূলক কিছুটা কম সময়ের মধ্যে, যেখানে সময় লেগেছিল প্রায় ২ বছর ৮ মাসে। ২৯ ও ৩০ বিসিএসের নিয়োগ প্রক্রিয়াও দ্রুত শেষ হয়েছিল, তবে নিকট অতীতের কোনো বিসিএসের নিয়োগ প্রক্রিয়াই দ্রুত সময়ের শেষ হয়নি। পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক একাধিকবার বিসিএসের নিয়োগ প্রক্রিয়ার সময় কমিয়ে আনার কথা বলেছিলেন। তবে পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি।

পরিসংখ্যান বলছে প্রতি বছর বিসিএসের আবেদন সংখ্যা বেড়ে চলছে। সর্বশেষ ৪১তম বিসিএসে আবেদন সংখ্যা রেকর্ড পরিমাণ, যা প্রায় ৪ লাখ ৭৫ হাজারের মতো। ৪০তম বিসিএসে আবেদন করেছিলেন প্রায় ৪ লাখ ১২ হাজার প্রার্থী। ৪১তম বিসিএসে পদসংখ্যা ২ হাজার ১৩৫টি, যার বিপরীতে আবেদন ৪ লাখ ৭৫ হাজার! যদিও ভাইবাতে উত্তীর্ণ হলে প্যানেল থেকে নন-ক্যাডার হওয়ারও সুযোগ থাকে। তারপরও পদসংখ্যা টোটাল আবেদন সংখ্যার তুলনায় অতি নগণ্য। এই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে শুধু মেধার প্রয়োজনই নয়, দরকার ধৈর্য ও আর্থিক সাপোর্ট। কিন্তু অনেকের জন্যই অনার্স পাস করার পর এত দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করা কষ্টকর হয়ে যায়, পরিবারের কথা চিন্তা করে অন্য পেশায় যেতে হয়।

বিসিএসের নিয়োগ প্রক্রিয়ার এই দীর্ঘসূত্রতা হতাশ করছে স্নাতক পাস করে বেকার অবস্থায় থাকা হাজারো তরুণ মেধাবীকে। যে মেধাগুলোকে আরো ভালো করে কাজে লাগানো যেত দেশের প্রয়োজনে। পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়ার এই সময়টা তো (৩-৪ বছর) একজন তরুণ দেশকে আরো ভালো কিছু দিতে পারতেন। পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যানের কাছ থেকে এসেছিল আশার বাণী, সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) অধীনে ক্যাডার ও নন ক্যাডারের বিভিন্ন পদে নিয়োগের দীর্ঘসূত্রতা কমিয়ে অর্ধেকে নিয়ে আসার ঘোষণা দিয়েছিলেন সংস্থাটির সাবেক আরেক চেয়ারম্যান ইকরাম আহমেদ। এই ঘোষণা বাস্তবায়ন হলে হয়তো কমে যেত দীর্ঘসূত্রতা, আর নিয়োগ দ্রুত হলে মেধাবীরা আরো বেশি করে দেশ সেবা করার সুযোগ পাবেন।

লেখক ও ব্যাংকার। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App