×

জাতীয়

বাড়ছে সংঘাত-সংঘর্ষ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ জানুয়ারি ২০২১, ০৯:৩৯ এএম

বাড়ছে সংঘাত-সংঘর্ষ
স্থানীয় সরকারের সিটি করপোরেশন এবং পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সারাদেশে সংঘাত ও সংঘর্ষের ঘটনা বাড়ছে। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এবং দলটির বিদ্রোহী প্রার্থীরা সংঘাতে জড়াচ্ছেন। এছাড়া প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে দিন দিন সংঘাত বাড়ছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে গত মঙ্গলবার একজন নিহত হয়েছেন। নোয়াখালীর বসুরহাট পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী দলটির সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই আব্দুল কাদের মির্জার বিভিন্ন জনসভায় দেয়া বক্তব্য সারাদেশে আলোচনার খোরাক হয়েছে। গত শনিবার প্রকাশ্যে নৌকায় ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন কুষ্টিয়ার মিরপুর পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এনামুল হক। কয়েকটি উপজেলায় দল মনোনীত ও বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘাত ও সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, নির্বাচনের দিন যত ঘনিয়ে আসবে সংঘাতের মাত্রা তত বাড়বে। এছাড়া তৃণমূল আওয়ামী লীগে হাইব্রিড প্রার্থীদের কারণে এই সংঘাতের আশঙ্কা আরো বাড়ছে। এ পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশন এবং স্থানীয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলারও অভিযোগ উঠেছে। তাদের মতে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা, অবৈধ অস্ত্র ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ায় পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। ব্রিটিশ রাজনীতির অনুকরণে দলীয়ভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের উদ্যোগ নেয়া হয় ২০১৫ সালে। ওই বছরের ১৩ অক্টোবর দলীয় মনোনয়ন ও প্রতীকে স্থানীয় নির্বাচন করার আইন অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। ওই বছরের ডিসেম্বরে পৌরসভা নির্বাচন দিয়েই শুরু হয় দলীয় মনোনয়নের ভিত্তিতে প্রথম স্থানীয় নির্বাচন। এরপর ২০১৬ সালের মার্চে শুরু হওয়া দেশের ৪ হাজারের বেশি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচন হয় রাজনৈতিক দলের পরিচয় ও প্রতীকে। আর তখন থেকেই রাজনীতির তৃণমূলে পেশিশক্তির চর্চা নতুন রূপ লাভ করে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে উদ্দেশ্য নিয়ে এই পদ্ধতি চালু করা হয়, সে লক্ষ্য পুরোপুরি অর্জিত হয়নি। একই সঙ্গে নির্দলীয় ও সামাজিক নেতৃত্ব বিকাশের পথ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দলীয় নেতৃত্ব বিকশিত হলেও একই সঙ্গে বেড়েছে দলীয় কোন্দল, বেড়েছে রাজনীতিবহিভর্‚ত পেশিশক্তির চর্চা। এ পরিস্থিতিতে দ্বিতীয়বারের মতো দলীয় ভিত্তিতে হচ্ছে স্থানীয় সরকার পর্যায়ের নির্বাচন। আগামী ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয় ধাপের পৌরসভা নির্বাচন। এই নির্বাচনে বাড়তি উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচন সামনে রেখে বিভিন্ন স্থানে বাড়ছে সংঘাত-সংঘর্ষ। একই দল মনোনীত ও বিদ্রোহী প্রার্থীর মধ্যে সংঘর্ষের পাশাপাশি প্রতিদ্ব›দ্বী দলীয় প্রার্থীদের মধ্যেও ঘটছে। ঘটছে গুলিবর্ষণ ও গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা। সম্প্রতি আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আব্দুল কাদের মির্জার বক্তব্যে তোলপাড় চলছে স্থানীয় ও জাতীয় রাজনীতিতে। ভোট কারচুপিসহ নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলে আসছেন তিনি। তবে এসবের বাইরে নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের বিষয়টি এখন সামনে এসেছে। শুধু তাই নয়, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও নোয়াখালী-৪ আসনের সাংসদ একরামুল করিম চৌধুরীর সঙ্গে তার দ্বন্দ্বের বিষয়টিও তার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সামনে নিয়ে এসেছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, যে কোনো নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে ইসি প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিতে পারেন। এ ব্যাপারে আইনগত বাধা নেই। কিন্তু শুরু থেকেই তাদের কাজকর্মে এক ধরনের ঢিলেঢালা ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটি স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর কাজে অসন্তোষ প্রকাশ করেই দায়িত্ব শেষ করছে। এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, নির্বাচন কমিশনকে এ বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে। প্রার্থীদের সংঘর্ষ-সংঘাত যেন সাধারণ ভোটারদের আতঙ্কের কারণ না হয়। তিনি বলেন, ইসিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা নিয়ে ভোটকেন্দ্র, প্রার্থী এবং ভোটারদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App