×

রাজধানী

ঘুড়ির ডানায় সাকরাইন উৎসব

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ জানুয়ারি ২০২১, ০৭:২৪ পিএম

ঘুড়ির ডানায় সাকরাইন উৎসব

ঘুড়ি উড়াচ্ছে শিশুরা। ছবি: ভোরের কাগজ।

ঘুড়ির ডানায় সাকরাইন উৎসব

আকাশে উড়ছে নানা রঙের ঘুড়ি। ছবি: ভোরের কাগজ।

পুরান ঢাকার আকাশ ছেয়ে গেছে বাহারী রং এর ঘুড়িতে। একজন আরেকজনের ঘুড়ি কাটায় ব্যস্ত। কুয়াশায় ঢাকা শীতের সকাল ও বিকালে ঘুড়ির সুতা কাটার মাধ্যমে আনন্দ উল্লাসে মাতামাতি। আর সন্ধ্যায় আতোশবাজি ও আধুনিক সাইন্ডে পুরান ঢাকা যেন পরিনত হয় এক উৎসবের নগরীতে।

বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি) পুরান ঢাকায় শুরু হওয়া ঐতিহ্যবাহী সাকরাইন উৎসবে সর্বত্র এমন চিত্র দেখা যায়।

দুই দিনব্যাপী সাকরাইন উৎসবের প্রথমদিনে পুরান ঢাকাবাসীর দিন কাটে ঘুড়ি হাতে নিয়ে। সারাদিন ঘুড়ি উড়ানো আর সুতা কাটার উৎসবে মাতে বালক বালিকা, কিশোর কিশোরীসহ নানা বয়সের মানুষজন। সন্ধ্যার আয়োজনে ছিল ফানুস আর আলোকসজ্জার সাথে আধুনিক সাউন্ড সিস্টেম। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছরের করোনার কারণে কিছুটা ভিন্নতা দেখা গেছে। তাই আয়োজনে বাড়তি আনন্দ যোগ করতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন থেকেও আয়োজন করা হয়েছে ঘুড়ি উড়ানোর উৎসব।

পুরান ঢাকার দয়াগঞ্জ, মুরগিটোলা, কাগজিটোলা, গেন্ডারিয়া, বাংলাবাজার, ধূপখোলা মাঠ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, শাখারিবাজার, সদরঘাট, কোটকাচারী, তাঁতীবাজার, শিংটোলাসহ পুরান ঢাকার বিভিন্ন স্থানে জাঁকালো ভাবে সাকরাইন উৎসব পালন হতে দেখা গেছে। এর আগে সাকরাইন উৎসবকে ঘিরে বেশ কদিন আগে থেকেই পুরান ঢাকার বিভিন্ন অলিগলিতে চলছিল ঘুড়ি, নাটাই ও সুতা বেচাকেনার ধুম। ছাদ ভর্তি ছিল পুরোদমে রোদে সুতা শুকানোর কাজ।

জানা যায়, পৌষ মাসের শেষ দিন সাকরাইনে নতুন ধানের চালের পিঠাপুলি খেয়ে ঘুড়ি উড়িয়ে আনন্দ উৎসব করার রেওয়াজ। পুরান ঢাকার মানুষ এই উৎসব পালন করে আসছে প্রায় ৪০০ বছর ধরে। এখন আর আগের মতো সবার ঘরে ঘরে পিঠা তৈরি হয় না। ডিজে গান আর বাজি ফুটানোর মতো আধুনিকতার ছোয়া লেগেছে এখনকার সাকরাইনে। তবে এখনো কিছু কিছু ঘরে সে সময়ের রেওয়াজ ধরে পিঠা তৈরি করে। পিঠার সংস্কৃতিটা কমে গেরেও অন্যান্য সংস্কৃতির মতো ঘুড়ি উড়ানোর মতো উৎসবে পিছিয়ে নেই এ প্রজন্মের তরুণরা।

[caption id="attachment_260533" align="aligncenter" width="687"] আকাশে উড়ছে নানা রঙের ঘুড়ি। ছবি: ভোরের কাগজ।[/caption]

সাকরাইন উৎসব নিয়ে কথা হয় পুরান ঢাকার সুত্রাপুরের আদনান, আল আমিন, রোকাইয়া, সজিব, তৌকির, সুজন, মেহেদি, নামের কয়েকজনের সঙ্গে। তারা বলেন, এই সাকরাইন উৎসব পুরান ঢাকার ঐতিহ্য ও প্রাণের উৎসব। আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন থেকেই এ উৎসব পালন করে আসছি। আগে এখনকার মতো সাউন্ড সিস্টেমের গান বাজনা ছিল না। তবে সেসময় ছিল অকৃত্রিম আনন্দ আর ভোকাট্টা লোটের আকাশস্পর্শী শব্দ। আগে সাকরাইন উৎসব এলে আত্মীয়-স্বজনকে দাওয়াত দিয়ে খাওয়ানো হতো। যা এখন অনেকটাই কমে গেছে।

তারা আরো বলেন, পাশ্চাত্য সংস্কৃতির ছোবলে বাংলার প্রাচীন অনেক উৎসবের মতো সাকরাইনও তার জৌলুস হারাতে বসেছে। কমে আসছে সাকরাইন উৎসবের পরিধি। তবে উৎসবের অনুষঙ্গে পরিবর্তন এলেও আমেজ আর আবেগটা এখনো রয়ে গেছে আগের মতো।

গাজীপুর থেকে পুরান ঢাকায় সাকরাইন দেখতে আসা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নিহাল আহমেদ বলেন, পুরান ঢাকায় ঘুড়ি উড়ানোর প্রাচীন ঐতিহ্যের সাকরাইন উৎসব সম্পর্কে অনেক শুনেছি। এবার নিজ চোখে দেখতে আসলাম। তিনি বলেন, সত্যিই পুরান ঢাকাবাসী অনেক সংস্কৃতি প্রিয়। আজ সারা দিন আকাশে রংবেরং হাজারো ঘুড়ি উড়তে দেখেছি। সন্ধ্যায় আতোজবাজি ও লাইটিং সাউন্ডে পুরো পুরান ঢাকা যেন উৎসবের রাজধানীতে পরিনত হয়েছে।

পুরান ঢাকাবাসি থেকে জানা যায়, প্রায় এক দশক আগে প্রতিটি বাড়ির ছাদে ছাদে থাকতো মাইকের আধিপত্য। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আর আধুনিকতার সংস্পর্শে মাইকের স্থান দখল করেছে আধুনিক সাউন্ড সিস্টেম।

এই উৎসবটি প্রায় ৪০০ বছর ধরে পালন করে আসছে পুরান ঢাকার বিভিন্ন স্তরের মানুষ। তরুণদের সঙ্গে ছোট-বড় সব বয়স্ক মানুষকে দেখা যেত নিজ নিজ বাড়ির ছাদে ঘুড়ি ওড়াতে। মেয়েদেরকেও দেখা যেত ছেলেদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ঘুড়ি ওড়াতে।

তবে ঘুড়ি উড়ানো, আতশবাজির জমকালো আলো ও শব্দে এবং সাউন্ড সিস্টেমে বাংলা বছরের পৌষকে বিদায় জানাচ্ছে পুরান ঢাকাবাসী। সাউন্ড সিস্টেমের সঙ্গে সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছে নাচ গানের আনন্দও। ঘুড়িতে ঘুড়িতে হৃদ্যতামূলক কাটাকাটি খেলাও চলেছে। এক ছাদ থেকে অন্য ছাদের ঘুড়ি কাটাকাটিতে মাততে দেখা গেছে তরুণ-তরুণীদের।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App