×

সারাদেশ

শ্রমিকদের নামে একাউন্ট, টাকা তুলছেন চেয়ারম্যানরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ জানুয়ারি ২০২১, ০৬:৪৬ পিএম

শ্রমিকদের নামে একাউন্ট, টাকা তুলছেন চেয়ারম্যানরা

ছবি: প্রতিনিধি

লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে ৪০ দিনের কর্মসৃজন কর্মসূচির নামে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার অফিস-ইউপি চেয়ারম্যান ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতিরা শ্রমিকদের বঞ্চিত করে ব্যাপক অনিয়মের মাধ্যমে প্রকল্পের টাকায় নিজেদের পকেট ভারি করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সরেজমিনে উপজেলার চরগাজী, চরপোড়াগাছা বড়খেরী, চরআব্দুল্লাহ, চররমিজ, চর আলেকজান্ডার, চরআলগী ও চরবাদাম ইউনিয়ন ঘুরে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

জানা যায়, ২০২০-২১ অর্থ বছরে রামগতি উপজেলায় গ্রামীণ রাস্তাঘাটের উন্নয়নে প্রতিদিন ১৬২২ হারে ৪০ দিনে ৬৪৮৮০ জন শ্রমিকের বিপরীতে ১ কোটি ২৯ লাখ ৭৬ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। এই টাকা লুটপাট করার জন্য উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার যোগসাজশে ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা তাদের অনুসারীদের শ্রমিক বানিয়ে অন্তত কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। তবে ইউএনও বলছেন, অভিযোগটি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উপজেলা পরিষদ ও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অতি উৎসাহী হয়ে চেয়ারম্যান ও পরিষদের সদস্যরা তাদের অনুসারীদের দিয়ে ইউনিয়ন ব্যাপী শ্রমিকদের তালিকা করান। পরে তা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে দাখিল করা হয়। কাগজে-কলমে প্রতিদিন ১৬২২ জন শ্রমিকের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়। অথচ তালিকায় থাকা শ্রমিকদের কোন কাজে ব্যবহার না করে ভেকু মেশিন দিয়ে দায়সারাভাবে কাজ করিয়ে নিচ্ছে চেয়ারম্যানরা।

শ্রমিকের নাম তালিকায় উঠানো হলেও কাজ সম্পর্কে কিছুই জানেন না তারা এমন অভিযোগও রয়েছে অনেক শ্রমিকের।

বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে উপজেলা পিআইও অফিস প্রতিটি প্রকল্প থেকে শতকরা ২৫ টাকা হারে উৎকোচ গ্রহণের রেওয়াজ চালু রাখার কারণেই মূলত: প্রকল্পের কাজে শ্রমিকদের বঞ্চিত করে ভেকু মেশিনে কাজ করানো নিয়মে পরিণত হয়েছে।

এছাড়া সরেজমিন তদন্তে কোন প্রকল্পেই শ্রমিক পাওয়া যায়নি। সবখানে ভেকু মেশিনেই মাটি কাটা হচ্ছে। তাতেও হচ্ছে নয় ছয় যেন সরকারি টাকা লুটপাটের এক মহা উৎসব চলছে। শ্রমিক নেই, কিন্ত ব্যাংক হিসাবে শ্রমিকের নাম ব্যবহার হচ্ছে ঠিকই। শ্রমিকের নামে একাউন্ট থাকলেও টাকা তুলছেন প্রকল্প সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যানরা।

ইউপি সদস্য শেখ ফরিদ অভিযোগ করে বলেন , কাজ হউক বা না হউক শতকরা ২৫ টাকা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার অফিসকে দিতে হয়। না হলে অর্থ ছাড় হবে না। এমন অভিযোগ প্রায় সবকটি প্রকল্প সভাপতি, ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের।

ভুক্তভোগী চরবাদাম ইউনিয়নের রফিক, বালুচর এলাকার বাসিন্দা রায়হান ও চরগাজীর তেগাছীয়া এলাকার ইলিয়াস বলেন, শ্রমিক দেখি নাই। ভেকু মেশিনে মাটি কাটা হচ্ছে। ৪০ দিনের কর্মসূচির কাজ মানেই নয় ছয় লুটপাট।

একাধিক প্রকল্প সভাপতিরা জানান, পিআইও ও চেয়ারম্যানরা কমিশন বাণিজ্য করায় ইচ্ছা স্বত্ত্বেও প্রকল্পের মানসম্মত কাজ করা সম্ভব হয় না। স্বল্প খরচে ভেকু মেশিনে তড়িঘড়ি কাজ শেষ করেন তারা।

জানতে চাইলে চর আব্দুল্লাহ ইউপি চেয়ারম্যান কামাল উদ্দীন মন্জু ,আলেকজান্ডার ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন পিআইও অফিসকে ২৫% কমিশন দেয়ার বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, সরকারি বরাদ্দকৃত অল্প টাকায় রাস্তা নির্মাণ সম্ভব নয়। আর ২শ’ টাকা দিয়ে শ্রমিক পাওয়া যায় না, তাই ভেকু মেশিন ব্যবহার করছি।

এ প্রসঙ্গে রামগতি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) রিয়াদ হোসেন কমিশন গ্রহণের বিষয়টি সঠিক নয় দাবি করে বলেন, শ্রমিক দিয়েই কাজ করা হচ্ছে। অন্য অনিয়মগুলো খতিয়ে দেখবেন বলে জানান তিনি।

রামগতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আব্দুল মোমিনের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক আনোয়ার হোসেন আকন্দ বলেন, শ্রমিকের অধিকার নিয়ে নয় ছয় করার কোন সুযোগ নেই। কমিশন বাণিজ্যসহ সব ধরনের অনিয়ম খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেন তিনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App