×

জাতীয়

দেশে নদী দখলদারের সংখ্যা ৬৩ হাজার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ জানুয়ারি ২০২১, ০৮:৫১ পিএম

দেশে নদী দখলদারের সংখ্যা ৬৩ হাজার

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠান/ছবি: ভোরের কাগজ

সারা দেশে নদ-নদীর ৬৩ হাজার ২৪৯ জন অবৈধ দখলদার চিহ্নিত করেছে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন। যা ২০১৯ সালের তালিকার চেয়ে ৫ হাজার ৮৫৯ জন বেশি। ওই সময়ে মোট দখলদার ছিল ৫৭ হাজার ৩৯০। তবে তালিকায় দখলদার বাড়লেও বাস্তবে দখলের মাত্রা কমেছে বলে জানিয়েছে কমিশন। জেলা প্রশাসকদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য ক্রমশ যুক্ত হয়ে এ সংখ্যা বেড়েছে বলে দাবি তাদের। নদী দখল ও দূষণের তালিকায় রয়েছে দেশের বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান। মেঘনা, ব্রহ্মপুত্র, ধলেশ্বরী ও শীতলক্ষ্যায় দখল-দূষণের চিত্র ভয়াবহ।

রাজধানীর নয়াপল্টনে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের অস্থায়ী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে মঙ্গলবার (১২ জানুয়ারি) এসব তথ্য জানানো হয়। নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার এতে সভাপতিত্ব করেন। অনলাইনে যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, ডেইলিস্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল, আইনজীবী এডভোকেট মনজিল মোর্শেদ প্রমুখ এ সময় অনলাইন আলোচনায় যোগ দেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন কমিশনের সদস্য শারমীন সোনিয়া মুরশিদ। প্রতিবেদনটি ১ হাজার ৪৫৬ পৃষ্ঠার বিশাল বই আকারে প্রকাশ করা হয়।

ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, আমরা ২০১৯ সালের নদ-নদী, খাল-বিলের দখলদার ও উচ্ছেদ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করছি। এটি ৮ বিভাগ অনুযায়ী ভাগ করে প্রতিটি নদী ও খাল ধরে করা হয়েছে। সেখানে কার সংশ্লিষ্টতা ছিল, কোথায় ব্যর্থতা রয়েছে, কী করা যেতে পারে-সবই উপস্থাপন করা হয়েছে।

কমিশন চেয়ারম্যান বলেন, ২০১৯ সালে দখলদার তালিকায় নাম উঠেছে ৫৭ হাজার ৩৯০ জনের। এদের মধ্যে উচ্ছেদ করা হয়েছে ১৮ হাজার ৫৭৯ জনকে। ২০১৮ সালে দখলদার ছিল প্রায় ৪৯ হাজার । ২০২০ সালের তথ্য এখনও পুরোপুরি সংগ্রহ করা হয়নি। এখন পর্যন্ত জেলা প্রশাসকদের কাছ থেকে যে তথ্য পেয়েছি, তাতে ৬৪ জেলায় দখলদারের সংখ্যা ৬৩ হাজার ২৪৯ জন। এই তালিকা প্রতিদিনই বাড়বে। তবে এর অর্থ এই নয় যে, নতুন করে তারা দখল করছে। যাচাই-বাছাই শেষে জেলা প্রসাশকরা তালিকা করছে বলে প্রতিদিনই তথ্য যুক্ত হচ্ছে। তিনি বলেন, এই তালিকা এখনো পূর্ণাঙ্গ হয়নি। আমরা শুরু করেছি। সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে দখলের মাত্রা কমেছে।

ব্রহ্মপুত্র, শীতলক্ষ্যা, মেঘনা ও ধলেশ^রী নদীগুলোর অনেক যায়গা বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানের কারণে ভয়াবহ দখল ও দূষণের শিকার হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, সরকারের নদী রক্ষার চার হাজার কোটি টাকার যে প্রকল্প শুরু হয়েছে তা বাস্তবায়নে জটিলতার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কারণ সেখানে বিদ্যুৎ ও সোলার প্ল্যান্ট, সিমেন্ট ফ্যাক্টরিসহ অনেক বড় বড় শিল্প কারখানা রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও আমরা ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেছি। দখল উচ্ছেদ করতে জেলা প্রসাশনের লোকবল, বাজেট ও প্রয়োজনীয় লজিস্টিক নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় আমরা শ্লোগান দিয়েছি, ‘পদ্মা-মেঘনা- যমুনা, তোমার আমার ঠিকানা’। এখন যদি নদীই না বাঁচে, তবে আমাদের অস্তিত্বই থাকবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নদীরক্ষায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞ উল্লেখ করে তিনি বলেন, নদীর দখল ও দূষণকারীদের নির্বাচনে অযোগ্য করতে আইন করা যায় কি না তা সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা করা হবে।

ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, আমরা নদী দখল ও দূষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার। কিন্তু নদীকে লালনও করতে হবে। নদী আমাদের ইতিহাস, ঐহিত্য ও বিকাশের অংশ। তিনি বলেন, উন্নয়ন মানেই পরিবেশ ধ্বংস নয়। পরিবেশ ও অর্থনীতি মেনে নিয়েই নদী রক্ষা করা সম্ভব। এজন্য শুধু প্রয়োজন মানসিকতার পরিবর্তন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App