×

সারাদেশ

ফেসবুকের কল্যাণে ১৭ বছর পর পরিবারের সন্ধান পেল তানিয়া

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০ জানুয়ারি ২০২১, ০৮:৪৭ পিএম

ফেসবুকের কল্যাণে ১৭ বছর পর পরিবারের সন্ধান পেল তানিয়া

নিজ পরিবারের সাথে হারিয়ে যাওয়া তানিয়া (ডান থেকে দ্বিতীয়)

ছোট্ট তানিয়ার বয়স তখন মাত্র আট। আদরের মেয়েকে শহর দেখাতে সঙ্গে করে ঢাকা নিয়ে আসেন পিতা সুন্দর আলী। এক সময় মেয়েকে এক আত্মীয়ের বাসায় রেখে কাজে চলে যান। কিন্তু ফিরে এসে আদরের মেয়েকে আর খুঁজে পাননি। পাগলপ্রায় হয়ে বিভিন্ন জায়গায় মেয়েকে খুঁজতে থাকেন। মেয়েও বাবাকে খুঁজেন। অবশেষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের কল্যাণে ১৭ বছর পর বাবা-মেয়ের দেখা হলো। তানিয়ার বাবা সুন্দর আলী জানান, তার গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ায়। তৎকালীন সময়ে তিনি ঢাকার একটি বাস কাউন্টারে কাজ করতেন। ২০০৪ সালে শহর দেখাতে মেয়েকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। প্রথমে তাকে বোনের বাড়ি পরে ফুফুর বাসায় আগারগাঁও রেখে তিনি কাজে বেরিয়ে পড়েন। বাবা বেরিয়ে যাওয়ার পর তানিয়া ফুফুর মেয়ের সঙ্গে স্কুলে গিয়ে আর ফিরে আসেনি। মেয়ের সন্ধানে শহরে মাইকিং, পত্রিকায় হারিয়ে যাওয়া বিজ্ঞাপন এমনকি থানায় জিডি পর্যন্ত তিনি করেন। তবুও মেয়ের কোনো সন্ধান পাননি। তানিয়া জানায়, স্কুলের প্রহরী তাকে ভিতরে ঢুকতে দেয়নি। অনেকক্ষণ রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকেন। রাস্তা-ঘাট না চেনায় একটি বাসে করে একসময় সংসদ ভবন এলাকায় চলে আসেন। সেখানে একটি চায়ের দোকানে টেলিভিশন দেখতে দেখতে রাত হয়ে যায়। বাসায় ফেরার জন্য অনেক কান্নাকাটি করেন। কিন্তু ঠিকানা বলতে না পারায় কেউ তাকে সাহায্য করতে পারছে না। এ সময় এক হিন্দু ভদ্রলোক এগিয়ে আসেন। পরে তাকে বাসায় নিয়ে যান। পরদিন তাকে পরিবারের কাছে পৌঁছে দিতে ওই লোক অনেক জায়গায় খোঁজাখোঁজি করেন। তানিয়া আরো জানায় খোঁজাখোঁজির এক পর্যায়ে আরজুা খাতুন ও তার ছেলে রিপনের সঙ্গে দেখা হয়। তাদের গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার রায়তলা গ্রামে। তারা আমাকে তাদের বাসায় নিয়ে যান এবং আশ্রয় দেন। এরপর থেকে তারা আমাকে আদর-যত্নে দিয়ে বড় করে তোলেন। আমি রিপনকে বাবা বলে ডাকি। তারা আমাকে বিয়েও দেন। তানিয়ার স্বামীর নাম আনোয়ার হোসেন। স্বামীর সঙ্গে আখাউড়া পৌরশহরের শান্তিনগর এলাকায় থাকেন। তাদের এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। কিছুদিন আগে তানিয়ার স্বামী আনোয়ার হোসেন তার ফেসবুক আইডিতে তানিয়ার ছোট বেলার একটি ছবি পোষ্ট করেন। পরে সেই পোস্টটি বিভিন্ন গ্রুপে শেয়ার করেন আনোয়ার হোসেনের বন্ধু মেহেদী হাসান। সেই সূত্র ধরে পোস্টটি তানিয়ার এক আত্মীয়র চোখে পড়ে এবং তানিয়ার বাবা সুন্দর আলীকে জানায়। অবশেষে শনিবার (৯ জানুয়ারি) ১৭ বছর পর দেখা হলো বাবা-মেয়ের। পরিবারের সবাই এখন খুশিতে আত্মহারা। তানিয়ার স্বামী আনোয়ার হোসেন বলেন, বিয়ের পর স্ত্রীর পরিবারের সন্ধান পেতে অনেক চেষ্টা করেন তিনি। আল্লাহর অশেষ রহমতে সেই ইচ্ছা পূরণ হয়েছে। স্ত্রীসহ এখন আমারা সবাই খুশি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App