ফেডারেশন কাপের ফাইনালে রবিবার সাইফ স্পোর্টিংকে ১-০ গোলের ব্যবধানে হারিয়ে শিরোপা নিজেদের কাছেই রেখে দিয়েছে বসুন্ধরা কিংস। আর এর মাধ্যমে ফেডারেশন কাপের ইতিহাসে ঢাকা মোহামেডান, ঢাকা আবাহনী ও শেখ জামালের পর চতুর্থ দল হিসেবে শিরোপা অক্ষুণ্ন রাখতে সমর্থ হয়েছে বসুন্ধরা কিংস। ম্যাচটিতে বসুন্ধরার হয়ে একমাত্র গোলটি করেন আর্জেন্টিনার রাউল বেসেরা। তিনি ম্যাচের ৫১ মিনিটের সময় গোলটি করেন। আর এই একটি গোলই বসুন্ধরাকে দ্বিতীয়বারের মতো শিরোপা এনে দেয়। তিনি সব মিলিয়ে ৫টি গোল করে সাইফ স্পোর্টিংয়ের কেনেথ ইকেচুকুর সঙ্গে যৌথভাবে সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছেন।

এদিকে সাইফ স্পোর্টিং যদি শিরোপা জিতে নিতে পারত তবে ২০১০ সালের পর শেখ রাসেলের পর প্রথম দল হিসেবে প্রথম চেষ্টায় শিরোপার স্বাদ পেত। কিন্তু তাদের এই স্বাদ আর পাওয়া হয়নি। যদিও সাইফ স্পোর্টিং বসুন্ধরাকে খুব সহজে শিরোপা নিয়ে যেতে দেয়নি। বসুন্ধরাকে ঘাম ঝরিয়ে তবেই শিরোপা জয় করতে হয়েছে। ম্যাচটিতে ৪ মিনিটের সময় তপু বর্মন জাল খুঁজে পেলেও অফসাইডের কারণে গোল হয়নি। ১৬ মিনিটে সতীর্থের লং বল ধরে ডান দিক দিয়ে আক্রমণে ওঠা বিশ্বনাথ ঘোষের শট ফিস্ট করে ফেরান সাইফ স্পোর্টিংয়ের গোলরক্ষক পাপ্পু হোসেন। একটু পর ডি-বক্সের ভেতর থেকে কিংসের বেসেরার শট বেরিয়ে যায় দূরের পোস্ট দিয়ে।

১৯তম মিনিটে সতীর্থের থ্রুস পাস অফসাইডের ফাঁদ ভেঙে নিয়ন্ত্রণে নিলেও তালগোল পাকিয়ে শট নিতে পারেননি সাইফ স্পোর্টিংয়ের কেনেথ ইকেচুকু। নাইজেরিয়ান ফরোয়ার্ডের ব্যাকপাসে স্বদেশী জন ওকোলির জোরালো শট ক্রসবারের উপর দিয়ে যায়। আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে জমে ওঠা ম্যাচে পরের মিনিটেই আরেকটি ভালো সুযোগ পায় প্রথমবারের মতো কোনো প্রতিযোগিতার ফাইনালে ওঠা সাইফ স্পোর্টিং। বাঁ দিক দিয়ে ডি-বক্সে ঢোকা ফয়সাল আহমেদ ফাহিমের শট ছুটে এসে ফেরান আনিসুর রহমান জিকো। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে ডি-বক্সের একটু বাইরে বিশ্বনাথ ঘোষের হাতে বল লাগলে ফ্রি কিক পায় সাইফ স্পোর্টিং। রহমত মিয়ার দারুণ বাঁকানো শট ফিরিয়ে কিংসের অতন্দ্র প্রহরী জিকো। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে রহমতের আচমকা দুরপাল্লার শট প্রথম দফায় লাফিয়ে ফিস্ট করার পর দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় গ্লাভসে নেন জিকো।

অবশেষে ৫২তম মিনিটে গোলের অপেক্ষা ফুরোয় কিংসের। প্রতি আক্রমণে রবসন দি সিলভা রবিনিয়োর পাস ধরে গায়ের সঙ্গে সেঁটে থাকা ডিফেন্ডারের প্রতিরোধ ভেঙে বাঁ পায়ের নিখুঁত শটে দূরের পোস্ট দিয়ে লক্ষ্যভেদ করেন বেসেরা। প্রতিযোগিতায় সাইফ স্পোর্টিংয়ের কেনেথের মতো তার গোলও হলো ৫টি। ৬০তম মিনিটে ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার জোনাথন দা সিলভেইরা ফের্নান্দেসের বাড়ানো বল অফসাইডের ফাঁদ ভেঙে নিয়ন্ত্রণে নিলেও ব্যবধান দ্বিগুণের সুযোগ নষ্ট করেন রবিনিয়ো। দ্রুত ছুটে এসে বল গ্লাভসবন্দি করেন পাপ্পু।

মরিয়া সাইফ স্পোর্টিংয়ের সমতায় ফেরার ভালো সুযোগ নষ্ট হয় ৬৯তম মিনিটে। কেনেথের বুলেট গতির শট কর্নারের বিনিময়ে ফেরান জিকো। একটু পর ডি-বক্সের ভেতর থেকে শরীরটাকে ঘুরিয়ে নাইজেরিয়ান ফরোয়ার্ডের শট বেরিয়ে যায় পোস্ট ঘেঁষে। ৮৩তম মিনিটে মতিনকে তুলে তৌহিদুল আলম সবুজকে নামান বসুন্ধরা কিংস কোচ। তিন মিনিট পর ওকোলির দুর্বল শট ফিরিয়ে দলকে ফেডারেশন কাপের টানা দ্বিতীয় শিরোপা জয়ের পথে রাখেন জিকো। ৮৯তম মিনিটে বেসেরার কাছের পোস্টে নেয়া শট কর্নারের বিনিময়ে পাপ্পু ফেরালে ব্যবধান দ্বিগুণ হয়নি।

ফেডারেশন কাপের শিরোপা অক্ষুণ্ন রাখা বসুন্ধরা এবার চোখ দেবে প্রিমিয়ার লিগের দিকে। আগামী ১৩ জানুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে প্রিমিয়ার লিগের নতুন মৌসুমের খেলা। আর ফেডারেশন কাপের মতো তারা যদি প্রিমিয়ার লিগের শিরোপাও অক্ষুণ্ন রাখতে পারে তাহলে তা হবে ক্লাবটির জন্য অসাধারণ এক ব্যাপার।