×

বিনোদন

‘শিল্পী নিজেই একটি প্রতিষ্ঠান’

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ জানুয়ারি ২০২১, ১১:৩৮ এএম

‘শিল্পী নিজেই একটি প্রতিষ্ঠান’
‘শিল্পী নিজেই একটি প্রতিষ্ঠান’
চলচ্চিত্র নির্মাতা ও অভিনয়শিল্পী তৌকীর আহমেদ। সম্প্রতি তিনি নির্মাণ করছেন ‘স্ফুলিঙ্গ’ নামে নতুন একটি সিনেমা। এছাড়া মার্চে তিনি যোগ দেবেন ভারতের প্রখ্যাত নির্মাতা শ্যাম বেনেগালের ‘বঙ্গবন্ধু’ সিনেমার শুটিংয়ে। এ সিনেমায় তিনি অভিনয় করবেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর চরিত্রে। গত বৃহস্পতিবার এ নির্মাতার ‘নক্ষত্র চলচ্চিত্র’ কার্যালয়ে মেলার সঙ্গে সিনেমা ও অন্যান্য বিষয়ে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার রাব্বানী রাব্বি
কীভাবে কাটছে সাম্প্রতিক দিনগুলো? ‘স্ফুলিঙ্গ’ ছবির কাজ চলছে; কেবল শুটিং শেষ হলো। প্রায় ৯৮ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আরো একদিনের কাজ আছে, যা স্পেশাল অ্যারেঞ্জমেন্ট। আর্মিদের সহযোগিতা লাগবে, এটা আমরা তাদের সুবিধা অনুযায়ী করব। অন্য লোকেশনে দু-তিনটি দৃশ্যের শুট হবে। ইতোমধ্যে এ ছবির পোস্ট প্রোডাকশন ও মিউজিকের কাজ শুরু করেছি। একই সঙ্গে চ্যানেল আইয়ে ‘রূপালী জ্যোৎস্নায়’ নামে একটি নাটক চলছে। এটার কিছু কাজ আছে লিখতে হবে; শুট করতে হবে। মাথার মধ্যে কাজগুলো চলতেই থাকে। কিছু প্লট, কিছু ভাবনা। সুতরাং এক প্রকার মানসিক ব্যস্ততা সবসময়ই থাকে। মাত্র ২৩ দিনে ছবিটির শুটিং শেষ করেছেন... একটা বিষয় হল, এ বছর মার্চে ছবিটি রিলিজ করব। আরেকটি হচ্ছে, আমার সব ছবির কাজই ২০-২২ দিনে করা। কারণ আমাদের যে বাজেট থাকে, এতে আমরা চাইলেও দুই-তিন মাস ধরে শুটিং করা সম্ভব না। যদি ভালো প্রি-প্রোডাকশন আর পরিকল্পনা থাকে, তাহলে ২৩ দিন অনেক সময়। প্রি-প্রোডাকশন ভালো হলে, সময় নষ্ট হবে কম। এটা একটা টেকনিক। তরুণ নির্মাতাদেরও বলব, ভালো একটা পরিকল্পনা ফিল্মের খরচ অনেকাংশে কমিয়ে দিতে পারে। বিশেষ করে আমাদের যেহেতু কম বাজেটে কাজ করতে হয়, সেহেতু প্রি-প্রোডাকশন ও পরিকল্পনা সেই প্রস্তুতি থাকাটা খুব জরুরি। ‘স্ফুলিঙ্গ’র কাজ শুধু নক্ষত্রবাড়িতেই করেছেন? যেহেতু মহামারির মধ্যে কাজ করতে হয়েছে, সুতরাং পরিকল্পনাটা সে রকমই ছিল। আমার অন্যান্য ছবি বিভিন্ন জায়গায় শুট করেছি। এবার সেই সুযোগ ছিল না। আমরা ইনডোর সেট ফেলেছিলাম গাজীপুর নক্ষত্রবাড়িতে, আর আউটডোর কাজ গাজীপুর বঙ্গবন্ধু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস, রাজেন্দ্রপুর ও কাপাসিয়ার শীতলক্ষ্যা নদীতে হয়েছে। বাকি থাকা তিনটি সিন বাইরে শুট করব। এ জন্যই একটু দেরি হচ্ছে। আমরা অপেক্ষায় রইলাম সিনেমাটি দেখার... আমি ধারণা করি, ভালো জিনিসের দর্শক খুব কম থাকে। আর আমার ছবির জন্য যদি মানুষ অপেক্ষা করেন, তবে তা খুব আনন্দের ব্যাপার। ছবিটি একটি ব্যান্ডদলের গল্প নিয়ে এগিয়ে যায়, তারুণ্যের উচ্ছ্বাস-হতাশা-ক্রাইসিস রয়েছে এতে। সবমিলিয়ে তারুণ্যের এক ধরনের উদ্দীপনা রয়েছে গল্পে। জানুয়ারিতেই মুম্বাইয়ে ‘বঙ্গবন্ধু’ সিনেমার শুটিং শুরু হচ্ছে। আপনি কবে যোগ দিচ্ছেন? আগামী ৩ মার্চ মুম্বাই যাব শ্যাম বেনেগালের ছবিতে কাজ করতে। সেখানে শুটিং করে আবার কলকাতায় চলে আসব। ‘স্ফুলিঙ্গ’র পোস্ট প্রোডাকশনের কিছু কাজ সেখানে করব। আপনার রাজনৈতিক দর্শন সম্পর্কে শুনতে চাই... আমার মনে হয়, আমার ছবিগুলো দেখলেই আমার রাজনৈতিক ভাবনা বোঝা যায় বা বুঝে যাওয়া উচিত। আমি মুক্তিযুদ্ধের ছবি ‘জয়যাত্রা’ বানিয়েছি, ‘ফাগুন হাওয়ায়’ ভাষা আন্দোলনের ছবি, ‘অজ্ঞাতনামা’ প্রবাসী শ্রমিকদের অধিকারের গল্প, এছাড়া ‘রূপকথার গল্প’ শোষিত মানুষের ছবি। আমি সব সময় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, বাংলাদেশ ও সাধারণ মানুষের কথা বলতে চেয়েছি। আমি মনে করি, শিল্পী নিজেই একটি প্রতিষ্ঠান বা পার্টি। নির্দিষ্ট কোনো দলের নয়। সে মানুষের কথা বলবে, সমাজের সমস্যা চিহ্নিত করবে। শিল্পীর কিছু দায়িত্ব থাকে। সেটা মানুষ ও সমাজের প্রতি। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর চরিত্রটি প্লে করতে কীভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছেন? একজন অভিনেতার যেমন প্রস্তুতি থাকা উচিত। তার মানসিক ও শারীরিক ভঙিমা এবং রাজনৈতিক দর্শন সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেছি। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর যে সম্পর্ক, বঙ্গবন্ধুর ওপর তার গুরুস্থানীয় যে প্রভাব, সেগুলো জানা ও বোঝার চেষ্টা করেছি। সোহরাওয়ার্দী তিনি কিন্তু খুব এলিট শ্রেণির মানুষ ছিলেন। তার শিক্ষা-দীক্ষা বিদেশে এবং পারিবারিক ঐতিহ্য ছিল। বাংলা ভাষা তিনি পরে শিখেছিলেন। তবে তার ইংরেজি বক্তৃতাগুলো শুনেছি। তিনি ইংরেজি উচ্চারণ আমাদের মতোই করেন। জাতিসংঘে তার যে ভাষণ সেগুলো শুনেছি। মূল কথা, শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। আমাকে যেহেতু এই চরিত্রের জন্য নির্বাচন করেছেন, সুতরাং আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করব ভালো করার। একই সঙ্গে আমার আরেকটি লক্ষ্য আছে যে, কাছ থেকে শ্যাম বেনেগালের কাজ দেখার। দেশের চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রির বর্তমান পরিস্থিতি কেমন? নতুন বছরে ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে আপনার প্রত্যাশা কী? ইন্ডাস্ট্রির অবস্থা ভালো না। যা ভালো অবস্থা ছিল, করোনার কারণে আরো ঝামেলা সৃষ্টি হচ্ছে। ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয়, ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে তেমন প্রত্যাশার কিছু নেই। কারণ একটি ইন্ডাস্ট্রি তো একদিনে গড়ে ওঠেনি বা একদিনে ধ্বংসপ্রাপ্তও হয় না। আমাদের ইন্ডাস্ট্রি ভালো সময় পার করেছে, আবার এটা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তেও উপনীত হয়েছে। সুতরাং এটা একটা দীর্ঘ পরিক্রমা। কেন ধ্বংস হচ্ছে বা কেন আরো এগিয়ে গেল না তা সেমিনারের বিষয়! তবে এ বলা যায়, আমাদের পলিসিগুলো বোধহয় ঠিক ছিল না। মধ্যবিত্ত সিনেমা হল বিমুখ হয়ে গেল। আমার হয়তো মানুষের লোকায়িত সংস্কৃতি ও শিল্পমান নিয়ে ভাবিনি। ফিল্ম দিয়ে একটি জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়। চলচ্চিত্রকে ব্যবহার করা উচিত ছিল জাতির শিক্ষা ও সংস্কৃতির জন্য, সেটা করা হয়নি। শুনেছি আমেরিকায় স্থায়ী হচ্ছেন। তবুও কি অভিনয় কিংবা পরিচালনায় আপনাকে নিয়মিত পাওয়া যাবে? তা তো দেখতেই পাচ্ছেন! আমি ‘স্ফুলিঙ্গ’ ছবির স্ক্রিপ্ট করেছি আমেরিকায় বসে, কিন্তু শুট করেছি নিজের দেশে এসে। আমার জন্য সেই সুবিধাটুকু আছে। হ্যাঁ, আমার বাচ্চারা সেখানে পড়বে। কিন্তু আমি যাওয়া-আসার মধ্যেই থাকব।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App