×

সারাদেশ

পর্যটনে অপার সম্ভাবনা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ জানুয়ারি ২০২১, ১১:২৮ এএম

পর্যটনে অপার সম্ভাবনা

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপরূপ লীলাভূমি সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার বুড়িপোতাজিয়া মৌজার বাথান এলাকা -ভোরের কাগজ

প্রাকৃতিক নৈসর্গিক সৌন্দর্যের এক অপরূপ লীলাভূমি সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার বুড়িপোতাজিয়া মৌজার বাথান এলাকা। শাহজাদপুরের অনেক ঐতিহ্যের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখ করার মতো এখানকার অসাধারণ বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত বাথানভূমি- অর্থাৎ বিশাল সুবিস্তৃত গোচারণ ভূমি।

এই বিশাল বাথানভ‚মি দিনে দিনে পর্যটকদের আকৃষ্ট করেই চলেছে। বাংলাদেশে আর কোথাও এত বড়, এত উর্বর গোচারণ ভূমি নেই। এর আয়তন প্রায় ১ হাজার ৪০০ একর। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ বিল ‘চলন বিল’-এর দক্ষিণ-পূর্বাংশ এই ঐতিহ্যবাহী বাথানভ‚মি। এটি প্রতি বছর আষাঢ়ের শেষ দিকে পানিতে ডুবে যায় এবং আশ্বিন মাসে ধীরে ধীরে জেগে উঠে। প্রায় ৩ মাস বন্যার পানির নিচে ডুবে থাকে।

ফলে পলি পড়ে অসাধারণ উর্বর হয় প্রতি বছর এ বাথানভূমি। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বাথানি কৃষকরা কাদা মাটির ওপর মাষকলাই ও খেসারির বীজ ছিটিয়ে দেয়। নরম নতুন পলি মাটিতে মাষকলাইগুলো দ্রুত বেড়ে উঠে দিগন্ত বিস্তৃত মাঠকে সবুজ শ্যামল সৌন্দর্যে অপূর্ব করে তোলে। যতদূর দৃষ্টি যায় শুধু সবুজ সৌন্দর্যের অপরিমিত প্রাণপ্রবাহ। পৌষ মাস থেকে এখানে আসে গরুর পাল।

নানা রং চেহারার অগণিত গরু মহানন্দে লেজ নেড়ে নেড়ে কচি কচি মাষকলাইয়ের গাছ খেতে থাকে পরম তৃপ্তিতে। বক, শালিক, ফিঙে, দোয়েলসহ নানা জাতের পাখি গরুগুলোর চারপাশে উড়তে থাকে। কখনো বা গরুর পিঠের ওপর বসে দোল খায়। গরুর গায়ের আটালি বা অন্য কোনো পোকা ধরে খায়। পাখিগুলো এ অপূর্ব দৃশ্যে সৌর্ন্দযের এক নতুন মাত্রা যোগ করে। মেঘমুক্ত জোছনা প্লাবিত রাতের আকাশে যেমন ছোট বড় অসংখ্য তারা জ্বলে, দূর থেকে তাকালে এই গোচারণ মাঠে তেমনি হাজার হাজার নানা রঙের গরু চরতে দেখা যায়। না দেখলে সে দৃশ্যের সৌন্দর্য এবং আনন্দ বোঝানো অসম্ভব প্রায়। এই ঐতিহাসিক বাথানভ‚মি সৃষ্টির একটা সুন্দর ইতিহাস রয়েছে। বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তখন জমিদারি তত্ত্বাবধানের কাজে শাহজাদপুরে আসতেন এবং এখানে অবস্থান করতেন। কবি শাহজাদপুরের প্রকৃতির সৌন্দর্য এবং বিচিত্র জীবন প্রবাহের সৌন্দর্যে আনন্দ বিস্ময়ে অভিভূত হন। সৃষ্টি করেন অসাধারণ সব সাহিত্যকর্ম। ভালোবাসেন এখানকার মানুষকে।

শাহজাদপুরে এসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অপার আনন্দ অনুভব করতেন। এখানকার ঘোষদের দুধ, ঘি, দধি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর খুব পছন্দ করতেন। পোতাজিয়া ও রাউতারার ঘোষদের কাছ থেকে খাঁটি গাওয়া ঘি সংগ্রহ করে তার জোড়াসাঁকোর বাড়িতে পাঠাতেন। কবির স্ত্রী মৃণালিনী দেবীর কাছে শাহজাদপুর থেকে লেখা একটা চিঠি থেকে এ কথা জানা যায়।

একদিন রাউতারার এক ঘোষ কবিকে বলল, ‘আর বোধ হয় আপনাদের ভালো দুধ, ঘি খাওয়াতে পারব না বাবু।’ রবীন্দ্রনাথ এর কারণ জানতে চাইলে ঘোষ জানাল, ‘গরু চরাবার মাঠ নেই- গরুকে ভালো ঘাস না খাওয়ালে ভালো দুধ ঘি হবে কী করে?’ এ কথা শুনে কবি রাউতারার পাশে বুড়িপোতাজিয়া ও রামকান্তপুর মৌজার বিস্তৃত ভূখণ্ড গোচারণের জন্য লাখেরাজ হিসেবে দান করে দেন। সেই থেকে এই বিশাল এলাকা বাথানভূমি নামে পরিচিত হয়ে আছে।

উল্লেখ্য, কৃষকরা মাঠের ফসল পাহারা দেয়া এবং পশু পালনের জন্য অস্থায়ী বাসস্থান নির্মাণ করেন। এর নামই বাথান। শুধু যে গোচারণের জন্য জমি দিয়েছেন তা নয়, ভালো উন্নত শাহিওয়াল জাতের ষাঁড় এনে গাভি প্রজননের মাধ্যমে উন্নত গোসম্পদ সৃষ্টির ব্যবস্থা করেছিলেন। বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে সমৃদ্ধ এবং উন্নত দুগ্ধশিল্প গড়ে উঠেছে শাহজাদপুরে। এরই ধারাবাহিকতায় শাহজাদপুরে তৈরি হয়েছে বাংলাদেশের বৃহত্তম দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা ‘মিল্ক ভিটা’। আর এর মূলে রয়েছে এখানকার ঐতিহ্যবাহী বাথানভূমির আবদান। শাহজাদপুর একটি পর্যটন কেন্দ্র হওয়ার যোগ্যতা রাখে। এর জন্য যেসব বিষয় রয়েছে তার মধ্যে এই বিখ্যাত বাথানগুলো অন্যতম আকর্ষণীয় একটি বিষয়।

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামানুসারে তার নিজস্ব জায়গায় উপজেলার বুড়ি পোতাজিয়া মৌজায় বাথানভূমিতে স্থাপিত হয়েছে ‘রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ’। ২০১৮ সাল থেকে শিক্ষার্থী ভর্তির মাধ্যমে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App