×

সারাদেশ

নিখোঁজের ৫ দিন পর কলেজ ছাত্রের মরদেহ উদ্ধার, আটক ৪

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ জানুয়ারি ২০২১, ১১:৩৫ পিএম

নিখোঁজের ৫ দিন পর কলেজ ছাত্রের মরদেহ উদ্ধার, আটক ৪

পঞ্চগড়ের আটোয়ারীতে নিখোঁজের ৫ দিন পরে মাটির নিচ থেকে ফাহিদ হাসান সিফাত (১৮) নাম এক কলেজ ছাত্রের লাশ উদ্ধার করেছে র‌্যাব। শনিবার উপজেলার রাধানগড় ইউনিয়নের ছোটদাপ এলাকায় নিহতের বাড়ির ২০০ গজ উত্তরে একটি ক্ষেতের মাটির নিচ থেকে সিফাতের মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় মতিউর রহমান নামে এক কলেজ ছাত্র ও তার বাবা মোখলেছার রহমান, মা ময়না বেগম ও মতিউরের চাচাতো ভাই লিমনকে তাদের নিজ বাড়ি থেকে আটক করেছে রংপুর র‌্যাব-১৩। এসময় ঠাকুরগাঁও পিবিআইয়ের এএসপি এবিএম রেজাউল ইসলামের নেতৃত্বে পিবিআই ও পঞ্চগড় সিআইডির একটি দল মরদেহের বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করে। এদিকে এ ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে পুরো এলাকা জুড়ে।

নিহত সিফাত ওই এলাকার সফিকুল ইসলামের ছেলে এবং দিনাজপুর আদর্শ কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। গ্রেফতারকৃত মতিউর একই এলাকার মোখলেছার রহমানের ছেলে এবং পঞ্চগড় মকবুলার রহমান সরকারী কলেজের ব্যাবস্থাপনা বিভাগের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র।

এসময় সংক্ষিপ্ত সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-১৩ রংপুরের অধিনায়ক কমান্ডার রেজা আহমেদ ফেরদেীস জানান, পারিবারিক কলহের জের ধরেই ৪ জানুয়ারি সিফাতকে বাড়ির পাশের নির্জন স্থানে ডেকে নিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে তারই প্রতিবেশি চাচাতো ভাই মতিউর রহমান । হত্যা আগেই গর্ত করে রাখে সে। পরে সেই গর্তেই লাশ মাটি চাপা দেয়া দিয়ে ফুরফুরে মেজাজে ঘুরতে থাকে হত্যাকারী। এদিকে সিফাতকে খুঁজে না পেয়ে ৫ জানুয়ারি আটোয়ারী থানায় সাধারণ ডারেয়ি করে তার বাবা সফিকুল ইসলাম। ওই দিন সন্ধ্যাতেই হত্যাকারী সিফাতের ফোন থেকে তার বাবার কাছে দেড় লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। মুক্তিপণের জন্য এক লাখ টাকা দিতেও রাজি হয় তার বাবা। এদিকে পুলিশ সিফাতের কোন সন্ধ্যান বের করতে না পারায় শুক্রবার র‌্যাব-১৩ সদরে অভিযোগ করেন সিফাতের বাবা সফিকুল ইসলাম। ওই দিনই মাঠে নামে র‌্যাব। সন্ধ্যায় তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে সন্দেহভাজন হিসেবে সিফাতের প্রতিবেশি মতিউর রহমানসহ চার জনকে র‌্যাবের এএসপি শিমুল বিশ্বাসের নেতৃত্বে আটক করা হয় তাদের। পরে জিজ্ঞাসাবাদে মতিউর হত্যার পর সিফাতকে মাটি চাপা দেয়ার কথা স্বীকার করে। তার দেয়া তথ্য মতেই বাড়ির পাশের ফসলি জমি থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ সময় হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত কোদাল ও হত্যাকারীর মোবাইল ফোন জব্দ করে পুলিশ। র‌্যাবকে বিষয়টি জানানোর ১৮ ঘন্টার মধ্যেই লাশ উদ্ধার ও হত্যাকারীকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় র‌্যাব।

নিহতের বাবা সফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, আমার দুই ছেলে ও এক মেয়ে। সিফাত সবার বড়। গত ৩ জানুয়ারী সিফাত দিনাজপুর থেকে বাসায় আসে। সে সেখানে দিনাজপুর আদর্শ কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষে পড়ালেখা করতো। কিছুদিন ধরে সিফাত দিনাজপুরে কোচিং করছিল। পরে ৪ তারিখ রাত ৮টায় বন্ধুদের ব্যাটমিন্টন খেলতে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। এরপরে রাত অনেক গভীর হলেও সে আর বাসায় ফিরে আসেনি। পরের দিন ৫ জানুয়ারী আটোয়ারী সাধারণ ডায়েরী করি। ওই দিন রাতেই সিফাতের মোবাইল নম্বর থেকে আমাকে একটি ফোন করে দেড়লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবী করা হয় এবং সেই টাকা কয়েকদফায় ৩০ হাজার করে টাকা দেয়ার কথা বলা হয়। পরে তাদের সাথে ১ লাখ টাকায় মুক্তিপণ ঠিক করা হয়। এরপরে বিকাশের মাধ্যেমে একটি নম্বরে ৮ হাজার টাকা প্রদান করি। এরপরেও সিফাত না ফিরে এলে ৮ জানুয়ারী র‌্যাব-১৩ এর নীলফামারী কোম্পানীকে এ বিষয়ে অবগত করি। পরে তারা দীর্ঘ প্রচেষ্টার পরে শনিবার সকালে আমাদের বাড়ির পাশের একটি ক্ষেতের মাটির নীচ থেকে আমার ছেলের মরদেহ উদ্ধার করে। এসময় তিনি আরো বলেন, যারা আমার নিরীহ ছেলেটাকে নির্মমভাবে হত্যা করলো আমি তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবী করছি। যাতে করে আর কেউ এধরনের হত্যাকান্ড ঘটানোর সাহস না পায়।

আটোয়ারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইজার উদ্দীন জানান, হত্যাকান্ডের ঘটনায় এ পর্যন্ত ঘাতক মতিউর সহ ৪ জনকে আটক করা হয়েছে। উদ্ধারকৃত মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে আটোয়ারী থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App