×

সারাদেশ

কেঁচো সারে সফলতার মুখ দেখছেন শিবগঞ্জের সুমন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ জানুয়ারি ২০২১, ১১:০১ এএম

কেঁচো সারে সফলতার মুখ দেখছেন শিবগঞ্জের সুমন

ছবি: প্রতিনিধি

কেঁচো সার বা জৈব সার উৎপাদন করে চাঁপাইনবাবগঞ্জের মো. সানাউল্লাহ সুমন এখন সফলতাকে ছুঁতে যাচ্ছেন। স্বপ্ন তার জৈব সারের আলোয় নিজেকে আলোকিত করার। জমিতে কেঁচো সার ব্যবহার করে কৃষি খাতকে আরো সম্প্রসারিত ও নিজ পরিবারকে আর্থিকভাবে সচ্ছল করতে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে এমনটাই জানিয়েছেন তরুণ উদ্যোক্তা সানাউল্লাহ সুমন। তার মতো জৈব সার উৎপাদনকারীদের সংখ্যাও এখন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে প্রান্তিক পর্যায়ে কেঁচো ও গোবর দিয়ে উৎপাদিত জৈব সার জমিতে প্রয়োগে দিন দিন আগ্রহী হয়ে উঠছে কৃষকরা। এ জৈব সার ব্যবহারে তাদের জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি শাকসবজি, ফলমূলের ফলনও ভালো হচ্ছে। গরুর গোবর, কলাগাছ ও কচুরিপানা থেকে কেঁচো সার উৎপাদন করছেন সুমন। ২০১৩ সালের ২৭ ডিসেম্বর কেঁচো সার উৎপাদন শুরু করেন তিনি। উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, তার থেকে পরামর্শ ও সহযোগিতা নিয়ে শিবগঞ্জ উপজেলায় প্রায় ১৭০-১৮০ জন কৃষক এই ভার্মি কম্পোস্ট কেঁচো সার উৎপাদন করছেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নের উত্তর চাঁদপুর গ্রামের মো. রুহুল আমিনের ছেলে মো. সানাউল্লাহ সুমন কেঁচো সংগ্রহ করে নিজের ফার্মের গরুর গোবর দিয়ে প্রাথমিক পর্যায়ে ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদন শুরু করেন। ২০১৩ সালে ভোলাহাট উপজেলার মান্নু মোড়ের সাদেক আলীর থেকে দেখে কেঁচো সার উৎপাদনে প্রথম উদ্বুদ্ধ হন সুমন। প্রথমদিকে অল্প পরিমাণ সার উৎপাদন হলেও তার কর্মকাণ্ড দেখে স্থানীয় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা তাকে কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে পরামর্শ ও সহযোগিতা দিলে সানাউল্লাহ সুমনের নিজ বাড়িতে ভার্মি কম্পোস্টের প্রদর্শনী চালু করেন। বর্তমান এখান থেকে সবজি চাষি ও নার্সারি মালিকরা প্রতি কেজি ১২-১৫ টাকা দরে জৈব সার নিয়ে যাচ্ছে এবং কেঁচো ২ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তিনি আরো জানান, উৎপাদনের তুলনায় চাহিদা প্রায় দ্বিগুণের বেশি। বর্তমানে সুমনের উৎপাদিত কেঁচো সার রাজধানী ঢাকা, বরিশাল, কক্সবাজারসহ চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলের বরেন্দ্র অঞ্চলে ব্যাপক পরিচিত। প্রত্যেক মাসে তার এগ্রে প্রজেক্টে উৎপাদিত কেঁচো সারের পরিমাণ ৫ টনের বেশি। সরকারি পর্যায়ে সহযোগিতা পেলে ব্যবসার পরিধি আরো প্রসার ঘটানো সম্ভব হবে বলে জানান বাংলাদেশ ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদক এসোসিয়েশন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সানাউল্লাহ সুমন। সুমন এগ্রো প্রজেক্টের স্বত্বাধিকারী মো. সানাউল্লাহ সুমন বলেন, কেঁচো সার উৎপাদনে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সহযোগিতা করছে। কলাগাছ, গোবর, কচুরিপানা ব্যবহার করেই তৈরি হয় এই কম্পোস্ট সার। তাই জমির হারানো জৈব শক্তি ফিরিয়ে আনতে এই সারের ব্যবহারে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। অন্যদিকে কেঁচো সারের বেশি উৎপাদন হওয়ায় বিগত বছরে ৫ হাজার টন কম রাসায়নিক সার বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়েছে। লাইসেন্স সহজীকরণ করলে আরো বেশি উদ্যোক্তা তৈরি হবে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, এতে বেকার জনগোষ্ঠী এই পেশার সঙ্গে জড়িত হতে পারবে। কোভিট-১৯ করোনা ভাইরাস সংক্রমণে কেঁচো সার চাষিরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই প্রণোদনার আওতায় তাদের নিয়ে আসার জন্য সরকারের কাছে আহ্বান জানান তিনি।সানাউল্লাহ সুমনের জৈব সার উৎপাদন দেখে বেকার যুবকরা দিন দিন আগ্রহী হয়ে উঠছে। কৃষি অফিস থেকে থাই কেঁচো থেকে শুরু করে প্রদর্শনীর জন্য সব প্রকার উপকরণ ও সার্বিক পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। জৈব সার উৎপাদন এবং নিজের সবজি ক্ষেত থেকে শুরু করে ধান ক্ষেতে সার ব্যবহারসহ প্রদর্শনীতে উৎপাদনকৃত সার সমিতির কিছু সদস্যদের মাঝে বিতরণও করছেন সানাউল্লাহ সুমন। আজমতপুর এলাকার তালিব আলী বলেন, সুমন ভাইয়ের দেখে তার সহযোগিতা নিয়ে গত ১ বছর ধরে এটি করছি। খুবই লাভজনক হওয়ায় অনেক নতুন উদ্যোক্তা এতে আকৃষ্ট হচ্ছে। আরেক নতুন উদ্যোক্তা বলেন, কেঁচো সার ব্যবহারে জমি ও গাছপালা ঠিক থাকে। অন্যদিকে রাসায়নিক সার ব্যবহারে জমির উর্বরতা শক্তি কমে যায়। খরচও বেশি হয়। সবদিক বিবেচনায় লাভজনক হওয়ায় অনেকেই কেঁচো চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছে। তাই সরকারের উচিত এমন নতুন উদ্যোক্তাদের পাশে দাঁড়ানো। চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ অফিসার ড. বিমল কুমার প্রামাণিক জানান, ফসলি জমিতে রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমানো ও কৃষকদের পরিবেশবান্ধব কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করতেই সরকার জৈব সার উৎপাদনকারীদের নানা সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে। বর্তমানে জৈব সার উৎপাদনের বিষয়টি জেলার কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ায় চাষিরা কেঁচো সার ব্যবহারে আগ্রহী হয়ে উঠছে। আমরা কৃষকদের পরিবেশবান্ধব জৈব সার ব্যবহারের নিয়মিত পরামর্শ প্রদান করছি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App