×

মুক্তচিন্তা

এই পাশবিকতার শেষ কোথায়?

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ জানুয়ারি ২০২১, ১০:২৪ পিএম

দেশব্যাপী যে হারে ধর্ষণের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হয়ে পারা যায় না। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন ওঠে, এ কোন বর্বরতার মধ্যে আমরা বসবাস করছি? কোথাও না কোথাও ঘটে চলেছে ধর্ষণের পর হত্যার মতো নৃশংস ও ঘৃণ্য অপরাধও। বিচারহীনতা ও ভয়ের সংস্কৃতির কারণে ধর্ষণের ঘটনা বেড়েই চলেছে। গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর কলাবাগানে ডলফিন গলিতে ‘ও লেভেল’-এ পড়ূয়া এক কিশোরীকে শারীরিক নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগীর পরিবার। এ ঘটনায় মেয়েটির বন্ধু দিহানকে আটক করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আরো তিন বন্ধুকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। জানা গেছে, ফারদিন ইফতেখার দিহান ঘটনার দিন দুপুর আনুমানিক ১২টার দিকে ওই স্কুলছাত্রীকে প্রেমে প্রলুব্ধ করে মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে যায়। ৬৩/৪, লেক সার্কাস ডলফিন গলি পান্থপথ কলাবাগানের বাসায় নিয়ে যায় তাকে। এরপর ফাঁকা বাসায় মেয়েটিকে একা পেয়ে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষণ করে। ধর্ষণের সময় শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণ রক্তক্ষরণের কারণে মেয়েটি অচেতন হয়ে পড়ে। তখন বিবাদী ধর্ষণের বিষয়টি ভিন্ন খাতে প্রভাবিত করার জন্য মেয়েটিকে নিয়ে আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে যায়। সেখানে ভিকটিমের মৃত্যু হয়। এমন ধর্ষণের ঘটনা প্রায় প্রতিদিন ঘটছে দেশের কোথাও না কোথাও। সব খবর গণমাধ্যমে আসছে না। জাতীয়ভাবে বড় প্রতিবাদ না হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তেমন জোরালো ভ‚মিকা দেখা যায় না। অর্থবিত্ত বা সামাজিকভাবে প্রভাবশালীরা বা তাদের মদদপুষ্টরাই ধর্ষণের মতো অপরাধ করে। ফলে এসব ক্ষেত্রে পুলিশ মামলা নিতে গড়িমসি করে, মামলা নিলেও তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে টালবাহানা করে, অপরাধীদের বাঁচিয়ে প্রতিবেদন দেয় কিংবা অপরাধী প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ তাদের দেখতে পায় না। এ রকম অভিযোগ অজস্র। স্বীকার করতেই হবে যে, ধর্ষকরাও আমাদের সমাজেরই কোনো না কোনো পরিবারের সদস্য। তাদের বখে যাওয়ার দায় রয়েছে পরিবার-সমাজেরও। তরুণদের সুস্থ-সুন্দর মন ও মূল্যবোধ সম্পন্ন করে গড়ে তুলতে পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলো যথাযথ ভ‚মিকা রাখতে পারছে না, এটাও স্পষ্ট। মাদকের ব্যবহার বৃদ্ধির সঙ্গেও এ রকম অপরাধের হার বৃদ্ধির যোগসূত্র আছে বলে অপরাধ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধ যে মাত্রায় বেড়েছে, লাগাম টেনে না ধরা গেলে তা সামাজিক ব্যাধিতে রূপ নেবে। ধর্ষণ প্রতিরোধে জরুরি অপরাধীর যথার্থ শাস্তি নিশ্চিত করা। দুর্বল ভিকটিমদের পক্ষে রাষ্ট্রকেই এগিয়ে আসতে হবে। অপরাধ তদন্তে ও অপরাধীদের বিচারাধীন করায় পুলিশকে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। সামাজিক প্রতিরোধ গড়তে এগিয়ে আসতে হবে ব্যক্তি-সংগঠনকে। কলাবাগানে ধর্ষিতা শিক্ষার্থীর সুরতহাল রিপোর্টেও শরীরের গোপনাঙ্গসহ বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। আমরা চাইব, যথাযথ তদন্তসাপেক্ষে ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তির নিশ্চিত হবে। এর পাশাপাশি সর্বত্র স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও সুশাসন নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App