×

সম্পাদকীয়

ঢাকার খাল উদ্ধার ও সংরক্ষণ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ জানুয়ারি ২০২১, ০৬:৩৮ পিএম

রাজধানী ঢাকার সঙ্গে অসংখ্য খালের সরাসরি সম্পর্ক ছিল। সেই খালগুলো অধিকাংশেরই মরণদশা। এসব খাল ভরাট করে অবৈধভাবে দোকানপাট, বাড়িঘরসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করেছেন প্রভাবশালীরা। দীর্ঘ বছর ৭টি সংস্থার অধীনে ছিল খালগুলো অযত্নে-অবহেলায়। চলতি মাসের শুরু থেকে খালগুলোর দায়িত্ব পেয়েছে দুই সিটি করপোরেশন। দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে খাল পরিষ্কার ও খালপাড় থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযানে নেমেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। গত ৪ জানুয়ারি কার্যক্রমের প্রথম দিনে ইব্রাহিমপুর খাল পরিষ্কার এবং খালপাড় থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছে। অভিযানে ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম সরাসরি অংশ নিয়ে সার্বিক কার্যক্রম তদারকি করছেন। আমরা মনে করি, ঢাকার ভেতরে জলাভূমির স্বল্পতা দূর করা, জলাবদ্ধতা কমানোর সহায়ক পথ উন্মুক্ত করা, সর্বোপরি রাষ্ট্রের সম্পদকে অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে পুনরুদ্ধারের স্বার্থে সব খাল উদ্ধার করার সুপরিকল্পিত উদ্যোগ নেয়া উচিত। ঢাকা ‘প্রাকৃতিকভাবেই’ ছিল জলাবদ্ধতাবিহীন নগরী। এক সময় ঢাকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মূলে ছিল শহরের মধ্য দিয়ে বয়ে চলা খাল। যেগুলো নগরীর চারপাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ ও বালু নদের সঙ্গে সংযুক্ত ছিল। রাজধানীতে ৪৭টি খাল ছিল। এখন ২১টি খালের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। টিকে থাকা ২৬টি খালও অনেকটা প্রাণহীন। গত ৮ বছরে ঢাকার ১১টি খাল নর্দমা আর ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। আবর্জনায় জমাটবাঁধা খালের নর্দমায় খুঁটি পুঁতে পাটাতন বসিয়ে তার ওপর একের পর এক বস্তি তোলা হয়েছে। স্থায়ীভাবে আটকে গেছে পানিপ্রবাহের পথ। ৩০-৩২ বছর আগেও ঢাকার প্রান্তঃসীমায় স্রোতবাহী যেসব খালে পণ্যবাহী বড় বড় নৌকার আনাগোনা ছিল, সে খালগুলো এখন দুই-আড়াই ফুট চওড়া নর্দমার আকার ধারণ করেছে। ঢাকা ওয়াসার তথ্যানুযায়ী, দখলবাজদের আগ্রাসী থাবায় খালগুলোর অস্তিত্ব নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। এমনকি সরকারি ওই দপ্তরে খালগুলোর কোনো নথি নেই। সায়েদাবাদ থেকে দয়াগঞ্জ, রাসেল স্কয়ার থেকে গ্রিন রোড চৌরাস্তা, মহাখালী থেকে নিকেতন বক্স কালভার্ট, ইব্রাহীমপুর বক্স কালভার্টÑ প্রায় ১০ কিলোমিটার খাল ভরাট করে বক্স কালভার্ট করা হয়েছে। এ কারণে বর্ষায় পানি নিষ্কাশনে এসব খাল কার্যকর কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না। এ ছাড়া বিদ্যমান ২৬টির মধ্যে ৫টি খাল (হাজারীবাগ, বাইশটেকী, কুর্মিটোলা, মাণ্ডা ও বেগুনবাড়ি) ব্যক্তিমালিকানায় রেকর্ড হয়ে রয়েছে। ওয়াসার একশ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশেই প্রভাবশালী মহল বছরের পর বছর ধরে খাল দখলের মচ্ছব চালিয়েছে। সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, প্রায় সাড়ে ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৮ সালে মহানগরীর ড্রেনেজ নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ ও খাল উন্নয়ন প্রকল্প গৃহীত হলেও এর অগ্রগতি হতাশাজনক। রাজউক ও ওয়াসার মতো সংস্থার উদাসীনতা এবং কাজের ক্ষেত্রে তাদের সমন্বয়হীনতা খাল ও জলাশয়গুলো বিনষ্ট হওয়াকে বলা যায় অনিবার্য করে তুলেছে। নতুন করে সিটি করপোরেশনকে দায়িত্ব দেয়ার পর খালগুলো তার স্বরূপে ফিরবে বলে আশা করছি। সরকারের উচিত প্রতিটি খালের অবস্থান চিহ্নিত করে সেগুলোকে উদ্ধারের লক্ষ্যে জরুরি ভিত্তিতে তৎপর হয়ে ওঠা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App