×

জাতীয়

জবাবদিহিতা বড় চ্যালেঞ্জ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ জানুয়ারি ২০২১, ০৯:৩০ এএম

সরকারি কাজে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি বাড়ানো, সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতকরণ এবং প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা অর্জনের লক্ষ্যে কর্মসম্পাদন ব্যবস্থাপনার আওতায় মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর বার্ষিক অগ্রগতি মূল্যায়ন করে সরকার। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ) অনুযায়ী, গত অর্থবছরে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ। দ্বিতীয় স্থানে কৃষি এবং তৃতীয় স্থানে আছে অর্থনীতি। তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়াকে গুরুত্ব দিয়ে আসছে সরকার। ভিশন-২০২১ অনুযায়ী, মধ্যম আয়ের দেশের সূচকে অগ্রগতির জন্য অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও কৃষিতে নীরব বিপ্লবে সরকারের সাফল্য তৃতীয় বিশ্বের রোলমডেল। মহামারি করোনাকালেও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঠিক রেখে উতরে গেছে সরকার। তবে জনগণের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে শিক্ষা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়গুলোর অর্জন হতাশাজনক। উপরন্তু করোনায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে বিব্রত সরকার। তবে আশার আলো জ্বালিয়ে রেখেছে মেগা প্রকল্পগুলো। সরকারি ছত্রচ্ছায়ায় দুর্নীতি-লুটপাটে ম্লান ক্যাসিনোকাণ্ড ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযানের অর্জন। সুশাসন, দুর্নীতি দমন এবং জবাবদিহি নিশ্চিত করাকেই সরকারের আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে জয়ী হয়ে ২০১৯-এর ৭ জানুয়ারি টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। আজ সরকারের দুই বছর পূর্তি। দুই বছরে সরকারের উল্লেখযোগ্য সাফল্য জাতীয়-আন্তর্জাতিক বাধা পেরিয়ে স্বপ্ন ছুঁয়েছে পদ্মা সেতু। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে বেসরকারি টিভি চ্যানেলের সম্প্রচার শুরু। উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে নেয়া হয়েছে শতবর্ষী ডেল্টা প্ল্যান। ২০১৯ শিক্ষাবর্ষে বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে ৩৫ কোটি ২১ লাখ বই এবং ২০২০ সালে বিতরণ করা হয়েছে ৩৫ কোটি ৩৯ লাখ বই। বর্তমানে মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৬৪ মার্কিন ডলার। গড় আয়ু বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭২ দশমিক ৬ বছরে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪২ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার। দেশের ইতিহাসে প্রথম রেমিট্যান্সে ২ শতাংশ প্রণোদনা দিয়েছে সরকার। কোভিডেও ২০ শতাংশ বেশি অর্থ বেশি পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। বিদায়ী বছরে রেমিট্যান্স এসেছে ২১ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলার। কর্ণফুলী নদীতে বঙ্গবন্ধু টানেলের ৬০ ভাগ, মেট্রোরেলের সার্বিক অগ্রগতি ৫০ ভাগ, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৩০ ভাগ কাজ শেষ। শুরু হয়েছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণকাজ। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বহরে যুক্ত হয়েছে ধ্রুবতারা, গাঙচিল, অচিনপাখি। বিমানে যুক্ত হয়েছে সর্বাধিক প্রযুক্তির তিনটি ড্রিমলাইনার। সাইবার নিরাপত্তায় আট ধাপ এগিয়ে বিশে^ ৬৫তম স্থানে বাংলাদেশ। ২১ জেলায় চালু হয়েছে ডিজিটাল রেকর্ড রুম। ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজ চলছে, এতে কর্মসংস্থান হবে এক কোটি মানুষের। কৃষি খামার যান্ত্রিকীকরণে ৩ হাজার ১৯৮ কোটি টাকার প্রকল্প নেয়া হয়েছে। শিল্প খাতের ঋণে চালু হয়েছে সিঙ্গেল ডিজিটে সুদহার। ই-পাসপোর্ট চালু, যুগোপযোগী সড়ক আইন, ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড রেখে আইন হয়েছে। পর্যটন খাতের উন্নয়নে ৮০০ স্থান নির্ধারণ করে পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। দেশের ৬৬ পৌরসভায় পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের জন্য নেয়া হয়েছে ৩ হাজার ৪০ ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্প। বিশেষজ্ঞদের মতে, কোভিড মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর প্রণোদনা প্যাকেজ, পদ্মা সেতুর মূল অবকাঠামো দৃশ্যমান, করোনা ধাক্কা কাটিয়ে মেগা প্রকল্পগুলোর কাজে পূর্ণগতি, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে মুন্সিয়ানা দেখিয়েছে সরকার। গত দুই বছরে সরকারের অর্জন ও জনগণের প্রাপ্তির পাল্লাটা বেশ ভারী। তবে দলীয় কিছু লোকের অপকর্ম, ত্রাণ চুরি ও নারী নির্যাতন সরকারকে বেকায়দায় ফেলেছে। চলতি বছরে সুশাসন ও মানবাধিকার রক্ষায় দুর্নীতি দমন ও জবাবদিহি নিশ্চিতে সরকারকে আরো কঠোর হতে হবে। জানতে চাইলে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল ভোরের কাগজকে বলেন, করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় জাতিসংঘসহ বিশ্বে নজর কেড়েছে বাংলাদেশ। তবে কোভিডে স্বাস্থ্য খাতের থলের বিড়াল প্রয়োজনীয় এ খাতটির দুর্বলতা কতটা, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে। ত্রাণ বিতরণে সরকার দলের নেতাকর্মীদের দুর্নীতি সরকারকে বিব্রত করেছে। এদিকে, করোনা ভাইরাসের কারণে স্বাস্থ্য খাতের বাজেট বাড়ানো হয়েছে ১৩ শতাংশের বেশি। থোক বরাদ্দ ১০ হাজার কোটি। এছাড়া আরো সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকার বিশেষ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে স্বাস্থ্য বিভাগ। তবুও কাটেনি বেহাল দশা। রিজেন্ট শাহেদের নিষ্ঠুর দুর্নীতি, জেকেজির ডা. সাবরিনার প্রতারণা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদের পদত্যাগ, স্বাস্থ্যের তৃতীয় শ্রেণির কোটিপতি কর্মচারী ড্রাইভার আব্দুল মালেক, আক্তারুজ্জামান খাঁন, হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. আবজাল হোসেন ও তার স্ত্রী রুবিনা খানমসহ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ৪৫ কোটিপতির ঘুষ-দুর্নীতি সরকারের সাফল্যকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এ ব্যাপারে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী ভোরের কাগজকে বলেন, সরকার কোভিড মোকাবিলায় সফল। তবে স্বাস্থ্য খাতের নানা কেলেঙ্কারি সরকারের অর্জনকে ¤øান করেছে। আগামী দিনে কোভিড ভ্যাকসিন যেন সুষ্ঠু বণ্টন হয়, এক্ষেত্রে সরকারের তীক্ষè নজরদারি প্রয়োজন। অন্যদিকে দুর্নীতি দমন ও ক্যাসিনোকাণ্ডে রুইকাতলার গ্রেপ্তার আশার আলো দেখালেও শুদ্ধি অভিযানে ভাটা পড়ায় জনগণ হতাশ। প্রশ্ন উঠেছে বছর শেষে মৌলবাদী-সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থানে। আগামী দিনে সুশাসন নিশ্চিতে সরকারকে আরো বেশি সতর্ক থাকার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক ড. শান্তনু মজুমদার ভোরের কাগজকে বলেন, উন্নয়ন ও সুশাসন শব্দ দুটি পাশাপাশি চলে। সরকারকে কাক্সিক্ষত উন্নয়নে পৌঁছাতে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজন জবাবদিহি ও স্বচ্ছতা, সরকারি দলে গণতন্ত্র চর্চা এবং দলীয় দুর্বৃত্তায়নসহ দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স। এক্ষেত্রে নাগরিকদেরও সঠিক দায়িত্ব পালন জরুরি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App