×

পুরনো খবর

শীতার্তদের পাশে দাঁড়ান

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ জানুয়ারি ২০২১, ১০:২৭ পিএম

শীতার্তদের পাশে দাঁড়ান
সারাদেশে এবার জাঁকিয়ে শীত পড়েছে। বলাবাহুল্য দেশের বিভিন্ন প্রান্তে শীতের প্রাবল্যের বিভিন্ন ধরন রয়েছে। কোথাও খুব শীত পড়ে, কোথাও মাঝারি কোথাও আবার এই ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে সেই অর্থে শীতের দেখাই নেই। তবে এবার কিন্তু দেশজুড়ে শীতের প্রকোপ একটু বেশি বলা যেতে পারে। উত্তর ভারতে যা শীত পড়ে পূর্ব ভারত সেই তুলনায় অতটা জবুথবু হয় না। এই ডিসেম্বরে দিল্লি হরিয়ানায় শীতের দাপটে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে থাকে। রাজধানী দিল্লিতে কুয়াশার দাপটে বিমান পরিবহন, বাস, রেল চলাচলে বিঘ্ন ঘটে, ভোগান্তিতে পড়তে হয় সাধারণ মানুষকে। শুধু সাধারণ মানুষের কথাই বা বলি কেন দেশের মানুষের কাছে শীতকাল যতটা না আনন্দ নিয়ে আসে তার থেকে উত্তুরে হাওয়ায় থাকে দুঃখের নিশ্বাস। কেননা দেশের বেশিরভাগ মানুষই বসবাস করে দারিদ্র্যসীমার নিচে যারা বছরভর পরনের কাপড় জোগাড় করতে হিমশিম খায় তাদের কাছে শীতের পোশাক বাহুল্য বৈকি। তবুও প্রকৃতির নিয়মে শীত আসে আর এই দরিদ্র মানুষরাও ঠিক একরকমভাবে বেঁচে যায়। যারা লড়াই করে টিকে থাকতে পারে না তাদের জন্য মৃত্যুই নিয়তি। তবুও বিভিন্ন সরকারি সংগঠন বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে এখন দরিদ্র মানুষের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ করার একটা প্রবণতা তৈরি হয়েছে। প্রতি বছর শীত এলেই এই সংস্থাগুলো কাজে নেমে পড়ে। অবসর সময়ে তরুণরা যখন কম্বলের ভেতর ফেসবুক কিংবা ইউটিউবে সময় পার করতে ব্যস্ত, কনকনে শীতে গভীর রাতে ঠিক তখন তাদের মতোই কয়েকজন একখানা কম্বল জোগাড় করে ফুটপাতে থাকা অসহায় মানুষের শীত নিবারণে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এটাই মানবিকতা। পাশাপাশি অনেক তরুণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে এগিয়ে এসে কম্বল, গরম পোশাক দরিদ্র পরিবারগুলোর হাতে তুলে দেন। স্টেশনে ফুটপাতে শহরের ব্যস্ত রাস্তার মোড়ে যে বাচ্চাটি ফুটো থালা নিয়ে বসে ভিক্ষা করে তার গায়ে উঠে সোয়েটার, সৌজন্যে এই তরুণ সমাজ। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই বাদ পড়ে যায় প্রকৃত অসহায়রা। শীতের এই তীব্রতাকে উপেক্ষা করার জন্য আমরা রকমারি শীতবস্ত্র পরিধান করি। কিন্তু আপনি যে পথ দিয়ে প্রতিনিয়ত চলাচল করছেন সেই পথে বসবাসরত মানুষগুলোর দিকে কি একটু খেয়াল করেছেন? হয়তো ব্যস্ততার মাঝে খেয়াল করা হয়ে ওঠে না। চলার পথে একটু থেমে, খেয়াল করুন তাদের দিকে। দেখতে পাবেন যে, শীতের তীব্রতাকে উপেক্ষা করার জন্য তাদের কেউ কেউ একটি চটের বস্তা গায়ে জড়িয়ে শুয়ে রাত কাটানোর প্রহর গুনছে, কেউ আবার একটি পলিথিন ব্যাগকে আশ্রয় করে শুয়ে আছে, আবার কেউ শীতের তীব্রতাকে মেনে নিয়েই কাঁপতে কাঁপতে ঘুমিয়ে পড়েছে, কেউ আবার শুকনো খরকুটো দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে তাপ পোহাচ্ছে আর অপেক্ষা করছে উত্তপ্ত রবির আলোর জন্য। যা তাদের জন্য একটু উষ্ণতা বয়ে নিয়ে আসবে। সময় এখন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়ার। আসুন একবার অপারক এবং অসহায় বয়স্ক মানুষের কথা ভাবি এবং সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেই। একটি কাপড় দিয়ে হলেও শীতার্তের পাশে দাঁড়ান। নিঃস্বার্থভাবে বিপদগ্রস্ত মানুষের সাহায্য ও সেবা করা মহৎ ও পুণ্যময় কাজ। আমাদের দেশের খোদ রাজধানীতেই এ রকম হলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোর কী অবস্থা একবার কল্পনা করুন। আপনাদের একটি মোটা কাপড় কোনো অসহায় দরিদ্র মানুষকে দিলে আপনার কিছুই কমে যাবে না। বরং আপনি তাকে দেবেন শীতে কষ্ট না পাওয়ার প্রতিশ্রুতি, বিনিময়ে ওই মানুষটি দেবে ওনার হৃদয়ের উষ্ণতা। আর সেই উপলব্ধি থেকে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবক দল শীতবস্ত্র বিতরণের উদ্যোগ হাতে নেয়। প্রতি বছর বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনকে শীতবস্ত্র বিতরণ করতে দেখা যায়। শীতার্ত এসব অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ায়। কিন্তু শুধু এই স্বেচ্ছাসেবীদের পক্ষে একা তা করা সম্ভব নয়। তাই এই কার্যক্রমকে সফল করার জন্য সবার আন্তরিকতা এবং একাগ্রতা শীতবস্ত্র বিতরণের কার্যক্রমকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে। আমাদের যাদের পুরনো গরম কাপড়, সোয়েটার, জ্যাকেট, কম্বল, চাদর রয়েছে সেগুলো দিয়েও আমরা সহায়তা করতে পারি। এ ছাড়াও আর্থিক সহায়তা প্রদান করে শীতবস্ত্র বিতরণের কার্যক্রমকে আরো সহজ করে তুলবে এবং আপনার বা আপনাদের আর্থিক সাহায্য অথবা প্রত্যক্ষ/পরোক্ষ অংশগ্রহণের মাধ্যমে এই মানবিক কাজকে সফল করবে। আমরা লাখ লাখ টাকার ফুল দাও পাথরের ওপর। আর রাস্তার পাশে পড়ে থাকা অসহায় যাদের দুবেলা জোটে না একটু ভাত আর তাদের নেই শরীর ঢাকার মতো কাপড়। তাদের জন্য শীতবস্ত্র অনেক বড় পাওয়া। সামনের দিনগুলোতে শীতের তীব্রতা বাড়ার কথা। তাই দরকার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ। আর্থিকভাবে সচ্ছল ব্যক্তিরা শীত নিবারণে শীতবস্ত্র ক্রয় করতে পারলেও তারা একবারও কি ভেবে দেখেছেন, এ শীতে অনাথ পথশিশু, ফুটপাতে রাত কাটানো মানুষ, ভিক্ষুক, অসহায় বয়োবৃদ্ধ, বস্ত্রহীন মানুষ ও তাদের অসহায় সন্তানরা কতটা কষ্টে আছে? পরিশেষে বলতে চাই, বেশি নয় শুধু আপনার একদিনের হাত খরচটুকু কোনো বৃদ্ধ বা বৃদ্ধ মা-বাবাকে উপহার দিন। সাময়িক হলেও অন্তত একবিন্দু হাসি তো আমরা ফোটাতে পারব তাদের মুখে। আসুন আমরা দেশের শীতার্ত মানুষকে বাঁচানোর জন্য এগিয়ে আসি। একটি কাপড় দিয়ে একটি শিশু কিংবা একজন বৃদ্ধ বা শিশুকে রক্ষা করি। সবার প্রতি আন্তরিক অনুরোধ, এই শীতে দরিদ্র অসহায়দের শীতবস্ত্র বিতরণ করে মানবিক মূল্যবোধের পরিস্ফুটন ঘটাতে এগিয়ে আসুন। ভালোবাসুন শীতার্ত মানুষকে, তাদের প্রতি একটু সদয় হোন। শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App