×

মুক্তচিন্তা

শীতে গরম গীতে বিএনপি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ জানুয়ারি ২০২১, ১১:৩২ পিএম

বাংলাদেশে শীত ও রাজনীতির সম্পর্কটা বিস্ময়কর। এর পেছনে নানা ব্যাখ্যা রয়েছে। শীতের সঙ্গে রাজনীতি বৈধ ও যৌক্তিক কোনো সম্পর্ক থাকার কথা নয়। শীত প্রকৃতির খেলা। আর রাজনীতি ক্ষমতায় যাওয়া, ক্ষমতা থেকে হটানো অথবা ক্ষমতায় টিকে থাকার মাধ্যম। শীত আসে আবার চলেও যায়। কিন্তু রাজনীতি চলমান। চলছে। চলতেই থাকবে। এরপরও শীতে একপক্ষ অপরপক্ষকে দেখে নেয়ার একটা সিজন।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে ঐতিহাসিক তারিখ ১০ জানুয়ারিতে বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। তা কদ্দূর পারবে বা আদৌ পারবে কিনা এ প্রশ্নের মাঝেই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের টেনে নিয়েছেন বিষয়টি। তার অভিযোগ, রাজনৈতিক হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে বিএনপি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস ১০ জানুয়ারিতে এই কর্মসূচি ডেকেছে। তার ভাষায় : এ কর্মসূচি বাংলাদেশবিরোধী ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছু নয়। এই ষড়যন্ত্র কঠোরভাবে মোকাবিলার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তিনি। এমন দিনের কর্মসূচিকে বিএনপির স্বাধীনতাবিরোধী চরিত্র ও বঙ্গবন্ধুর প্রতি বিদ্বেষের প্রমাণ বলেছেন ওবায়দুল কাদের

দিন-ক্ষণ, সাল-তারিখের বাস্তবতায় বিএনপি বরাবরই উদাসীন। বেখেয়ালি। কা-জ্ঞানহীনও বলতে চান কেউ কেউ। অথবা বুঝেশুনেই আবেগময় তথা স্পর্শকাতর বিভিন্ন তারিখে কর্মসূচিতে লাগাম টানছে না। আবার কর্মসূচি দিয়ে তা পালনও করতে পারছে না। সেই প্রস্তুতিও দেখা যায় না দলটির নেতাকর্মী পর্যায়ে। ১৫ আগস্টের মতো ট্র্যাজিক তারিখে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিন পালনের সিদ্ধান্তে কার্যত বিএনপি এখন আর নেই। ক্ষমতায় থাকাকালে পালন করেছে। করুণভাবে বিরোধী দলে আসার পর আর কুলাতে না পেরে খালেদা জিয়ার জন্মদিন এখন ব্যাকপুটে। কেক-ফুল চলে গেছে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে।

শীতকালকে রাজনীতির জন্য গরমকাল বলা হয়। সেটা যে আসলে নির্ভর করে বিরোধী দলের ওপর, বিএনপি-আওয়ামী লীগ উভয়ে তা প্রমাণ করে ছেড়েছে। আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকার সময় শীতকাল রাজনীতির গরমকালই ছিল। গত টানা কয়েক বছরে বিএনপি প্রমাণ করে দিয়েছে তাদের শীত-গরমে তফাত নেই। দলটির ‘ঈদের পর আন্দোলন’ হাস্যকর টিপ্পনিতে পর্যবশিত হয়েছে বহু আগেই। সম্প্রতি যোগ হয়েছে ‘নতুন বছর’। নতুন বছরে গণআন্দোলনে সরকার হটানোর আওয়াজ দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। কোন ঈদের পরের মতো সেটা কোন ‘নতুন বছর’ তা এখনো খোলাসা হয়নি। এরপরও বিএনপি নেতারা যে শীতের মাঝে রাজনীতি গরমের চেষ্টা একদম করছেন না, তাও নয়। গরম নানা বোলচালে কর্মীদের চাঙ্গা করার নিরন্তর প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। কিন্তু ফল আসছে না। উঠছে না রাজনীতির পারদ। ৩০ ডিসেম্বর ভোট ডাকাতি এবং ৫ জানুয়ারি ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’কে ঘিরে কিছুটা ভাব এলেও গরমের মাত্রা আসেনি। আওয়ামী লীগের দাপটের কাছে বিএনপিকে রণে ভঙ্গ বা আত্মসমর্পণই করতে হয়েছে। পারদ তুঙ্গে তোলার আপাতত লক্ষণ বা সম্ভাবনা দৃশ্যমান নয়।

সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রসঙ্গ হলেও বাংলাদেশে শীত ও রাজনীতির সম্পর্কটা বিস্ময়কর। এর পেছনে নানা ব্যাখ্যা রয়েছে। শীতের সঙ্গে রাজনীতি বৈধ ও যৌক্তিক কোনো সম্পর্ক থাকার কথা নয়। শীত প্রকৃতির খেলা। আর রাজনীতি ক্ষমতায় যাওয়া, ক্ষমতা থেকে হটানো অথবা ক্ষমতায় টিকে থাকার মাধ্যম। শীত আসে আবার চলেও যায়। কিন্তু রাজনীতি চলমান। চলছে। চলতেই থাকবে। এরপরও শীতে একপক্ষ অপরপক্ষকে দেখে নেয়ার একটা সিজন। পরস্পরকে ঘায়েল, জব্দ, কুপোকাতের চর্চার মৌসুম। চর্চার সঙ্গে সেই সাধনাটাও উল্টে গেছে। হটানোর চেয়ে টিকে থাকার মহড়াই বেশি হচ্ছে। অর্থাৎ শীতের ঝাঁকুনিও সরকারই দেয়। উত্তাপ, গ-গোল, বিশৃঙ্খলা, উত্তেজনা, দলাদলি, সংঘর্ষ, কোন্দল, হুমকি-ধমকিসহ রাজনীতির উপাদানগুলো একতরফা। এবারের শীত আরেকটু ব্যতিক্রম। করোনা মড়কের মধ্যে শীত জীবনযাত্রাকে অনেকটা কুঁচকে দিয়েছে। স্থবির না হলেও ছন্দপতন অনেক কিছুতে। তবে মরে-বেঁচেও রাজনীতি ও রাজনীতিকরা বহাল। যে যেখান দিয়ে যা পারছেন ঘটাচ্ছেন। সামনে আরো ইভেন্ট রয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, ১৪ ডিসেম্বর, ১৬ ডিসেম্বর, ১০ জানুয়ারি, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২৬ মার্চসহ আমাদের জাতীয় জীবনের তাৎপর্যময় অনেক দিবসই শীতকালীন।

এরশাদের বিরুদ্ধে নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানও হয়েছে ৬ ডিসেম্বর শীতকালে। ৩০ ডিসেম্বর, ৫ জানুয়ারি, ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনও এই হিমবাহী সময়ে। কিন্তু নতুন বাস্তবতায় দেশে শীতকে ঘিরে রাজনীতির বাজার জমার আলামত আপাতত নেই। শীতকে ভারতীয়, পাকিস্তানি কিংবা পশ্চিমা শীত বলার সুযোগও নেই। শীত সরকারের ব্যর্থতা বা বিএনপি-জামায়াতের কারণেই শীতের উপদ্রব এমন অভিযোগের তীর ছোড়া একটু কঠিন। এরপরও শক্তিমান কেউ সাহস করে বলে বসলে ফেলনা না-ও যেতে পারে। কেউ যদি বলেÑ এই শীত সরকারের সীমাহীন অযোগ্যতা, দুর্নীতি ও লুটপাটের ফল। তাই এ সরকারকে হটাতে হবে? অথবা এই শীত জঙ্গি শীত, বিএনপি-জামায়াত ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে এ অবৈধ শীতকে আমাদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে? এই টাইপের কিছু বললে কেউ মানা করবে? বড়জোর বিনোদিত হবে। মোট কথা শীতের ধুয়া তুলে রাজনীতির সুযোগ নেই। তবে মৌসুমকে কাজে লাগিয়ে গরম বাতাস তোলার সুযোগ অবারিত। উত্তবঙ্গের বিভিন্ন এলাকা শীতে কাঁপছে। জানুয়ারিজুড়ে দেশে বিভিন্ন মাত্রায় শৈত্যপ্রবাহ বইবে বলে আভাস দিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ। এই বার্তা আমল পাচ্ছে না তেমন। ডেমকেয়ার ভাব। হতে পারে শীত মোটেই করোনার চেয়ে ভয়ঙ্কর নয় বলেই ভাবটা এমন। মাথার নার্ভ ঢিলা হয়ে যাওয়াসহ কিছু কারণে শীতে কারো কারো পাগলামি বাড়ে। হাইকোর্টের মাজারসহ বিভিন্ন দরবারে পাগলের আনাগোনা বাড়ে। শ্রীপুরের বটিকাসহ খাজলি-চুলকানির মলম বিক্রি বেশি হয়। এবার সেখানেও ব্যতিক্রম। গরম না হোক কুসুম কুসুম আন্দোলন খেলা, চূড়ান্ত আন্দোলনের হুমকি নয়, বইমেলা, পিকনিক, বিয়ে, সম্মেলনও এবার না থাকার মতো। সেটার জন্য একতরফা শীতকে দায়ী করা ন্যায্য হয় না। করোনাসহ আরো কিছু কারণ এর জন্য দোষী। এবারের শীতে বস্ত্র বিতরণের খবরও কম। শীতের ফাঁকা মাঠে গোল দেয়ার মতো কাপড় বিলানো কারো দেখা মিলছে না। রাজনীতি থেকে উত্তাপ বের করে শীত কমানোর শক্তিমত্তা দেখানোর কেউ থাকলেও মাঠে নামছে না। শীতার্তদের সহায়তায় এগিয়ে আসতে নানা সংগঠন ও ব্যক্তিকে কি কেউ মানা করেছে? বিশেষ করে বিরোধী দলের রাজনীতি ঠা-া হতে হতে এখন উত্তাপের বদলে বরফ বের হওয়া বাকি। যা কাজে লাগতে পারে গ্রীষ্ম মৌসুমে। তাও যদি নসিবে জোটে।

মোস্তফা কামাল : সাংবাদিক ও কলাম লেখক; বার্তা সম্পাদক, বাংলাভিশন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App