×

মুক্তচিন্তা

কৃষকের স্বার্থ আগে দেখুন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ জানুয়ারি ২০২১, ১১:২৩ পিএম

ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর থেকে পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে। এতে কৃষক যেমন দাম নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন তেমনি আমদানিকারকরাও বিপাকে পড়েছেন। ইতোমধ্যে পেঁয়াজের দাম কমে যাওয়ার প্রভাব ব্যবসায়ী ও চাষিদের ওপর পড়তে শুরু করেছে। সরকার ব্যবসায়িক চ্যানেল ঠিক রেখে আমদানিকারকদের পাশাপাশি কৃষকদের স্বার্থ গুরুত্ব সহকারে দেখতে হবে। দেশে বর্তমানে পেঁয়াজের মোট চাহিদা ২৬ লাখ টন। এর মধ্যে ১৫ থেকে ১৬ লাখ টন বা মোট চাহিদার প্রায় ৬০ শতাংশ জোগান দিয়ে থাকে দেশের কৃষক তাদের উৎপাদনের মাধ্যমে এবং অবশিষ্ট ৪০ শতাংশ মেটানো হয় পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, মিয়ানমার বা অন্যান্য দেশ থেকে আমদানির মাধ্যমে। গত ১২ সেপ্টেম্বর ভারত বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানির মূল্য বেঁধে দেয় প্রতি টন ৮৫০ ডলার এবং পরবর্তী সময়ে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়। ওই ঘটনার পর থেকে বাজার এতটাই অস্থির হয় যে, তাতে সংকটে পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ৩০০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। ওই সময় পেঁয়াজের নতুন বাজার ধরতে মাঠে নেমেছিল ছোট-বড় অনেক ব্যবসায়ী। বাজার স্থিতিশীল রাখতে তুরস্ক, মিসর ও চীন থেকে পেঁয়াজ আমদানি করেছিল সরকার। ভারত নিজের স্বার্থে কখনো পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়, কখনো খুলে দেয়। এখন তারা খুলে দিয়েছে। ভারত থেকে পেঁয়াজ আসতে থাকলে আমাদের দেশি পেঁয়াজের দাম আরো কমে যাবে। যখন পেঁয়াজ চাষিরা নতুন মৌসুমের ফসল তুলতে শুরু করেছেন তখন এভাবে দাম কমলে তারা ন্যায্য দাম তো পাবেনই না, উল্টো আরো লোকসান হতে পারে। এই সময়ে পেঁয়াজের ভালো দাম পেলে তারা উপকৃত হতে পারতেন। পেঁয়াজের এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্তের তেমন অসুবিধা হচ্ছে না। কারণ তারা তাদের পারিবারিক ব্যয়ের ক্ষুদ্র একটি অংশ ব্যয় করেন এর পেছনে, কিন্তু দরিদ্র ও অতিদরিদ্রদের জন্য এটি খুবই পীড়াদায়ক। এ ছাড়া ব্যবসা-বাণিজ্য তথা অর্থনৈতিক কর্মকা-ের প্রতি ক্ষেত্রেই সিন্ডিকেটের আস্ফালন লক্ষণীয়। তবে এটা নতুন কিছু নয়, সাংবৎসরিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রতিটি পণ্য তো বটেই, সেবা খাতেও সিন্ডিকেটের হস্তক্ষেপ প্রকট। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় গড়ে ওঠা এ চক্রটি অত্যন্ত শক্তিশালী ও ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে। এরা ইচ্ছামতো বাজার নিয়ন্ত্রণ করে অনায়াসে অন্যায্যভাবে বিপুল মুনাফা লুটে নিচ্ছে। আমরা মনে করি, বাজার পরিস্থিতি পাল্টানোর জন্য সবার আগে প্রয়োজন বিক্রেতাদের অসৎ, লোভী ও প্রতারণামূলক মানসিকতার পরিবর্তন। এর জন্য রাষ্ট্র-সমাজের সচেতন দায়িত্বশীল মহলকে ভূমিকা রাখতে হবে। আমাদের দেশে এখন পেঁয়াজের সংকট নেই। নতুন পেঁয়াজ উঠেছে। ভারত সব সময় আমাদের দেশে কৃষকের ঘরে যখন পেঁয়াজ ওঠে, তখন আমদানি মূল্য কমিয়ে দেয়। যদি এসব পেঁয়াজের এলসি আগে খোলা হয়ে থাকে তাহলে দেশের কৃষকদের স্বার্থও বিবেচনায় নিতে হবে। তারা যেন কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। তারা যেন ন্যায্য দাম পায় সেটি নিশ্চিত করতে হবে। কৃষক দাম পেলে তারা আরো বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন করবে। আমদানি নির্ভরতা কমবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App