×

মুক্তচিন্তা

সড়কে লাশের মিছিল থামবে কখন?

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ জানুয়ারি ২০২১, ০৯:০৮ পিএম

কোনোভাবেই সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো যাচ্ছে না। প্রতিদিন সড়কে প্রাণহানির খবর আমরা গণমাধ্যমে পাচ্ছি। সড়কে এই লাশের মিছিল কে থামাবে? নতুন সড়ক আইন প্রণয়ন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দফায় দফায় নির্দেশ জারি ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ সত্ত্বেও বাস্তব চিত্র ভিন্ন। সর্বশেষ রবিবার ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলায় বাস ও সিএনজির মুখোমুখি সংঘর্ষে বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে লাশ হলেন নবজাতকসহ একই পরিবারের ছয়জন। সেই সঙ্গে প্রাণ গেল তাদের বহনকারী অটোরিকশা চালকেরও।

বাসের চাপায় অটোরিকশাটি দুমড়েমুচড়ে রীতিমতো মোয়া হয়ে যায়। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলায় একই দিন সড়কে প্রাণ ঝরেছে আরো ছয়জনের। এর মধ্যে চট্টগ্রামের সীতাকু-ে এক কলেজছাত্রী নিহত হয়েছেন। ঢাকার দোহার উপজেলায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ধাক্কায় এক পথচারীর মৃত্যু হয়েছে। পাবনার ঈশ্বরদীতে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নসিমন গাড়ি উল্টে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের দুই নির্মাণ শ্রমিক নিহত হয়েছেন। বরিশালের বাকেরগঞ্জ, ত্রিশাল, রাঙামাটিতে ট্রাকচাপায় এক অজ্ঞাত নারীর মৃত্যু হয়েছে। একদিনে সড়কে প্রাণ গেছে ১৩ জনের। এমন চিত্র প্রতিদিনের। সারাদেশে গত বছরের ডিসেম্বরে ৪০২টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে ৪৬৪ জন নিহত ও ৫১৩ জন আহত হয়েছে। নিহতের মধ্যে নারী ৭৬ ও শিশু ৫১ জন। রবিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান এ তথ্য জানায়।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ১২৪টি জাতীয় মহাসড়কে, ১২৯টি আঞ্চলিক সড়কে, ১০৪টি গ্রামীণ সড়কে, ৪২টি শহরের সড়কে এবং অন্যান্য স্থানে সংঘটিত হয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (এআরআই) গবেষণায় দেখা গেছে, ৫৩ শতাংশ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী যানবাহনের বেপরোয়া গতি। কিন্তু গতি নিয়ন্ত্রণ, মহাসড়কে ছোট যানবাহন বন্ধ ও বেপরোয়া যানবাহন চলাচল বন্ধে সাফল্য নেই। এখনো দেশের সড়ক-মহাসড়কে দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে ১০ লাখ নছিমন-করিমন-ইজিবাইক। অবাধে আমদানি হচ্ছে অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা, ইজিবাইক। দেশব্যাপী অন্তত ৫ লাখ ফিটনেসবিহীন বাস, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, হিউম্যান হলার অবাধে চলছে।

নিবন্ধনবিহীন কয়েক লাখ অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল চলাচল করছে সড়ক-মহাসড়কে। এসব যানবাহন সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান উৎস। দুর্ঘটনায় দায়ীদের শাস্তির নজিরও তেমন নেই। যার ফলে চালকরা ইচ্ছামতো গাড়ি চালান। হাই রিস্ক নিয়ে ওভারটেক করেন। এ ছাড়া চালকদের প্রশিক্ষণের অভাব রয়েছে, যা সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। মোবাইল ফোন কানে রেখে গাড়ি চালানো যেন ফ্যাশন অনেক চালকের কাছে। যদিও এ কাজ থেকে বিরত রাখতে আইন আছে। কিন্তু সে আইনের ব্যবহার হয় না। এ কারণেও দুর্ঘটনা ঘটছে। প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং এর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮-এর অনুমোদন দিয়েছেন। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য যে, পরিস্থিতির উন্নতি তো দূরের কথা, ন্যূনতম শৃঙ্খলা নেই কোথাও। সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সমাধানের অযোগ্য কোনো বিষয় নয়। এ জন্য দরকার ইতিবাচক চিন্তা ও সমন্বিত পদক্ষেপ। পরিবহন মালিক, শ্রমিকদের পাশাপাশি যাত্রীদের সচেতন হতে হবে এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগও নিশ্চিত করতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App