×

জাতীয়

আশরাফের মৃত্যুবার্ষিকীতে কর্মসূচি না দেয়া মস্ত ‘ভুল’

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ জানুয়ারি ২০২১, ১১:০০ এএম

আশরাফের মৃত্যুবার্ষিকীতে কর্মসূচি না দেয়া মস্ত ‘ভুল’
রাজনীতিকে ব্রত হিসেবেই নিয়েছিলেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। সজ্জন, মিতভাষী, সৎ, নির্লোভ রাজনীতির উত্তম পুরুষ সৈয়দ আশরাফ। অনেকটা নীরবেই চলে গেল এই রাজনীতির বৈরাগীর দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী। গত বছর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে প্রয়াত এই সাধারণ সম্পাদকের সমাধিতে কেন্দ্রীয়ভাবে শ্রদ্ধা জানিয়েছিল আওয়ামী লীগ। তবে এবার তার মৃত্যুবার্ষিকীতে দলীয় কোনো কমর্সূচি দেয়া হয়নি। এতে ‘হতবাক’ দলের নেতাকর্মীরা। বিস্মিত হয়েছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও। এটি রাজনীতির অমানিশার ইঙ্গিত হিসেবেও দেখছেন কেউ কেউ। দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকীতে দলীয়ভাবে তাকে স্মরণ না করাকে মস্ত বড় ‘ভুল’ হিসেবে দেখছেন দলের শীর্ষ নেতারা। কোনো সাধারণ সম্পাদকের মৃত্যুবার্ষিকীতে দলীয় কর্মসূচি নেয়ার রেওয়াজ নেই বলেও জানিয়েছেন একাধিক নেতা। তবে এ ব্যাপারে সরাসরি মুখ খুলতে রাজি নন কেউই। শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সৈয়দ আশরাফের মতো ত্যাগী, নির্লোভ রাজনীতিককে মৃত্যুর দুই বছরেই দলের নেতাকর্মীরা ভুলে যাওয়া রাজনীতির জন্য দুঃখজনক। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক সাংগঠনিক সম্পাদক ভোরের কাগজকে বলেন, এই ভুলটি কেন হলো, কার ভুলে হলো আমার জানা নেই। কিন্তু সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মতো জননেতাকে মৃত্যু দিনে দলীয়ভাবে স্মরণ না করা অত্যন্ত দুঃখজনক। তবে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক কেন্দ্রীয় নেতা জানান, সাধারণ সম্পাদকের মৃত্যুবার্ষিকীতে দলের কোনো কর্মসূচি থাকে না। পারিবারিকভাবে আয়োজিত অনুষ্ঠানে দলের নেতারা অংশ নেন। এছাড়া ব্যক্তিগতভাবে অনেকেই ফুল দেন, শ্রদ্ধা জানান। এদিকে এ বিষয়টিকে রাজনীতির জন্য অশনি সংকেত বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, সৈয়দ আশরাফের মতো ব্যক্তিত্বকে দলীয়ভাবে স্মরণ না করলে, তার আদর্শের চর্চা না করা হলে দেশে ত্যাগী রাজনীতিবিদরা নিরুৎসাহিত হবেন। জানতে চাইলে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল ভোরের কাগজকে বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে অসাম্প্রদায়িক ও গণমুখী রাজনীতির ধারক-বাহক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। পিতা সৈয়দ নজরুল ইসলামের রক্ত-আদর্শ এবং বঙ্গবন্ধুর চেতনা হৃদয়ে ধারণ করে নির্লোভ রাজনীতি করেছেন। মৌলবাদ-সাম্প্রদায়িক শক্তিকে দক্ষভাবে দমন করেছেন। তার স্থান রাজনীতির ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, তার মৃত্যুবার্ষিকীতে দলীয়ভাবে কর্মসূচি না থাকা রাজনীতির অমানিশার ইঙ্গিত। তাকে স্মরণ ও ধারণ করা একটি বিশেষ মহলের কাছে অপছন্দ। আমরা ব্যথিত হচ্ছি। হৃদয়ে রাজনীতির বৈরাগী : গতকাল সকালে পরিবারের পক্ষ থেকে সৈয়দ আশরাফের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন তার বোন ও কিশোরগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দা জাকিয়া নূর। ব্যক্তিগতভাবে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের ব্যানারে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশেনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। রাজধানীর বাইরে জন্মস্থান কিশোরগঞ্জে দোয়া-মিলাদ-আলোচনা সভার মাধ্যমে স্মরণ করা হয় সৈয়দ আশরাফকে। এদিকে তার স্মৃতিচারণ করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, সৈয়দ আশরাফ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার প্রতি আস্থাশীল ছিলেন, তিনি দলের জন্য অনেক কাজ করেছেন। আমি আজ তাকে পরম শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। জাতীয় প্রেস ক্লাবে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট আয়োজিত স্মরণসভায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আওয়ামী লীগের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম নেতৃত্বের প্রতি অবিচল থেকে রাজনীতিকে ব্রত হিসেবে নিয়েছিলেন। দেশের ইতিহাসে সজ্জন, স্বচ্ছ রাজনীতিবিদ এবং একজন ভালো মানুষ হিসেবে তার নাম ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে। ২০০৭ সালে দলের সভাপতি শেখ হাসিনাকে অন্যায়ভাবে বন্দি করা হলে সৈয়দ আশরাফ যেভাবে নেত্রীর পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন, সেটি নেত্রীকে এবং শিকল ও বাক্সবন্দি গণতন্ত্রকে মুক্ত করার ক্ষেত্রে যে ভ‚মিকা রেখেছে তা বাংলাদেশ ও আওয়ামী লীগের ইতিহাসে চির লিপিবদ্ধ থাকবে। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম অত্যন্ত সৎ, আদর্শ ও নীতিবান রাজনীতিবিদ ছিলেন। সকল লোভ লালসার ঊর্ধ্বে উঠে তিনি নীতি-নৈতিকতার সঙ্গে মানুষের কল্যাণে কাজ করে গেছেন সারা জীবন। প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং স্থানীয় সরকার ও জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ২০১৯ সালের ৩ জানুয়ারি ব্যাংককের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। পঁচাত্তরেরর ৩ নভেম্বর কারাগারে বাবা সৈয়দ নজরুল ইসলামসহ জাতীয় ৪ নেতার নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর যুক্তরাজ্য চলে যান সৈয়দ আশরাফ। প্রবাসজীবনে যুক্তরাজ্যে আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করার ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করেন তিনি। ১৯৯৬ সালে দেশে ফিরে আসেন এবং কিশোরগঞ্জ সদর আসনে আওয়ামী লীগ থেকে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ওইসময় তিনি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম উপরাষ্ট্রপতি জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলামপুত্র সৈয়দ আশরাফ।          

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App