×

জাতীয়

মাদকের চালান বেড়েছে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ জানুয়ারি ২০২১, ১০:৪৬ এএম

সক্রিয় পুরনো মাদক ব্যবসায়ীরা

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের লাগাতার অভিযানের মধ্যেও হাত বাড়ালেই মিলছে যে কোনো ধরনের মাদক। শহর থেকে গ্রামে ছড়িয়ে পড়ছে ইয়াবা, গাঁজা, ফেনসিডিল, হেরোইনসহ সব ধরনের নিষিদ্ধ মাদক। প্রতিদিনই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্নস্থানে মাদকসহ কারবারি আটকের খবর আসছে। মাসে লাখ লাখ পিস ইয়াবা আটকের খবর পাওয়া গেলেও বড় ধরনের কারবারি আটকের খবর মিলছে না। চলতি বছরের শুরুর সাত মাসের তুলনায় পরের চার মাসে যে কোনো ধরনের মাদক চালান বেড়ে গেছে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (গোয়েন্দা) রামেশ্বর দাস বলেছেন, যে কোনো ধরনের মাদক চোরাচালান বেড়ে গেছে। একই কৌশলে পুরনো ব্যবসায়ীরাই মাদক পাচার করছেন। আমাদের অভিযানও বেড়েছে। নিয়মিত আটক করা হচ্ছে। অধিদপ্তরের ঢাকা মেট্রোপলিটন উত্তর অঞ্চলের সহকারী পরিচালক (এডি) মেহেদী হাসান বলেন, এখন প্রতিদিন ২০-৩০ হাজার পিসের ইয়াবা চালান ধরা পড়ছে। মূলত স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় হঠাৎ মাদক বেশি আসছে। আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, আগস্ট মাসের পর থেকে ইয়াবাসহ যে কোনো ধরনের মাদক দেশের বিভিন্ন জায়গায় আগের চেয়ে বেশি জব্দ করা হয়েছে। এসব চালানের বিপরীতে মামলার সংখ্যা এবং গ্রেপ্তার বেড়েছে। তবে কমেনি চোরাচালান। গত আগস্টে সারাদেশে অভিযান পরিচালনা হয়েছে ৭ হাজার ২০১টি। এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে মামলা হয়েছে ১ হাজার ৯৭৪টি। আসামি গ্রেপ্তার করা হয়েছে ২ হাজার ৯২ জন। অভিযানে ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে ১৭ লাখ ৪ হাজার ৩১৯ পিস। হেরোইন উদ্ধার হয়েছে এক দশমিক ১৪ কেজি। ফেনসিডিল ২ হাজার ৪৭৮ বোতল। অক্টোবরে সারাদেশে অভিযান চালানো হয়েছে ৬ হাজার ৭২৯টি। এতে মামলা হয়েছে ১ হাজার ৭৭৩টি। আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে ১ হাজার ৮৯৮ জন। ইয়াবা উদ্ধার হয়েছে ৩ লাখ ৩৩ হাজার ৪৫৩ পিস। নভেম্বরে অভিযান চালানো হয়েছে ৬ হাজার ৮৮০টি। মামলা হয়েছে ১ হাজার ৭৭৩টি। আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে ১ হাজার ৯১০ জন। ইয়াবা উদ্ধার হয়েছে ৩ লাখ ৭১ হাজার ৪৮৯ পিস। পুলিশ, ডিবি ও র‌্যাবের অভিযানে মাদক উদ্ধার এবং গ্রেপ্তারের সংখ্যা এর কয়েকগুণ।

এদিকে অভিযানের ব্যাপারে জনবল সংকটসহ সীমাবদ্ধতার কথা বলছেন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। তাদের মতে, অধিদপ্তরের সদস্যদের কাছে নেই অস্ত্র। কারবারিদের অবস্থান শনাক্তে নেই মোবাইল ট্র্যাকার। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক সঞ্জয় কুমার চৌধুরী বলেছেন, আমাদের মোবাইল ট্র্যাকার নেই। অভিযানের ক্ষেত্রে মোবাইল ট্র্যাকার প্রয়োজন। এটা কেনার বিষয়ে আলোচনা চলছে। হাতে পেলে মাদক ব্যবসায়ী ধরতে অভিযানসহ বেশ কিছু সুবিধা পাবো। অপর একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব তৈরির বিষয়েও কাজ করছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। একজন মাদক ব্যবসায়ীর মোবাইল ফোন জব্দের পর সেই মোবাইল ফোনে মাদকের বিষয়ে কার কার সঙ্গে কথা হয়েছে। আরো চালান কোথায় আসছে। কী কী তথ্য আদান-প্রদান হয়েছে। এসব বিষয়ে ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাবের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ তথ্য পাওয়া যাবে। এতে খুব সহজেই মাদক চোরাচালানের মূল গডফাদারদের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হবে। যা মাদক নির্মূল করার কাজে সহযোগিতা করবে।

গত ২৭ ডিসেম্বর সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত জাতীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ উপদেষ্টা কমিটির সভায় মাদক নির্মূলে অধিদপ্তরকে আরো শক্তিশালী করতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এতে কনস্টেবল থেকে ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের অস্ত্র প্রদানের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী সিদ্ধান্ত হবে। সেইসঙ্গে সব বন্দরে ডগ স্কোয়াড গঠনের জন্য প্রস্তাবনা তৈরি করতে বলা হয়েছে। মাদক ব্যবসায়ীদের অবস্থান জানতে এনএমটিসিতে অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তাকে পদায়ন করার ব্যাপারে ওই সভায় আলোচনা হয়েছে।

অন্যদিকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সন্দেহভাজন সদস্যদের ফের ডোপটেস্ট করার প্রস্তুতি নিচ্ছে অধিদপ্তর। নতুন বছরের শুরু থেকেই এই টেস্ট চালু করবে তারা। রিপোর্ট পজিটিভ এলে তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিয়ে বাড়ি পাঠানো হবে। এরমধ্যে একজন সদস্যের পজিটিভ হওয়ায় তার চাকরি চলে গেছে। দ্বিতীয় পর্যায়ের টেস্ট শুরু হবে সহসাই।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App