×

জাতীয়

ফেব্রুয়ারিতেই মিলবে টিকা!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ জানুয়ারি ২০২১, ০৯:৫৩ এএম

সিরাম ইনস্টিটিউটকে ৬০০ কোটি টাকা দেয়া হবে আজ

শিগগিরই প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস প্রতিরোধের ভ্যাকসিন পাচ্ছে বাংলাদেশ। এ লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক যোগাযোগে অগ্রগতি রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় অক্সফোর্ড-অ্যাস্টাজেনেকার ভ্যাকসিনের জন্য আজ রবিবার ভারতের টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সিরাম ইনস্টিটিউটকে ৬০০ কোটি টাকা দেবে সরকার। কয়েক মাস আগে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, সিরাম ইনস্টিটিউট ও বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের সঙ্গে যে চুক্তি হয় তারই ধারাবাহিকতায় এ টাকা দেয়া হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম আশা প্রকাশ করেছেন, সবকিছু ঠিক থাকলে ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহেই সিরামের টিকা পাবে বাংলাদেশ।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহান প্রদেশে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দেয়। বাংলাদেশে প্রথম সংক্রমণ শনাক্ত হয় গত বছরের মার্চে। আর প্রথম মৃত্যু হয় ১৮ মার্চ। গতকাল পর্যন্ত দেশে করোনায় সাড়ে ৭ হাজারেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। শনাক্ত হওয়ার পর থেকেই করোনা প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছে সরকার। পাশাপাশি করোনার ভ্যাকসিন পেতে গবেষণা সংস্থা এবং উৎপাদনকারী আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছে বাংলাদেশ।

সূত্রমতে, করোনা ভ্যাকসিন যেখানে প্রথমে পাওয়া যাবে সেখান থেকেই সংগ্রহ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। শুরুতেই ভ্যাকসিন পাওয়ার জন্য সব ধরনের যোগাযোগ করেছে। টাকাও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, প্রথম যে উৎস থেকে পাব, সেখান থেকে আমরা উপযুক্ত টিকা সংগ্রহ করব। এজন্য আমরা সবার সঙ্গে যোগাযোগ করছি।

একটি ভ্যাকসিনই আপাতত করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় ভরসা বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। আর এ মুহূর্তে ভ্যাকসিন আবিষ্কারে কাজ করছে বিশে^র ১৪০টি প্রতিষ্ঠান। এদের মধ্যে অক্সফোর্ড-অ্যাস্টাজেনেকার ভ্যাকসিন ইতোমধ্যে যুক্তরাজ্য, আর্জেন্টিনা ও ভারতে ব্যবহারের অনুমোদন পেয়েছে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদনের পর বাংলাদেশও ওই ভ্যাকসিন ব্যবহার শুরু হবে। এজন্য ভ্যাকসিনটির উৎপাদক ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের একাউন্টে আজ রবিবার ৬০০ কোটি টাকা জমা দেবে বাংলাদেশ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এই তথ্য জানিয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী, সিরাম ইনস্টিটিউট ৬ মাসের মধ্যে বাংলাদেশকে ৩ কোটি ডোজ টিকা সরবরাহ করবে। প্রতিমাসে ৫০ লাখ টিকা আসবে।

ভ্যাকসিন পেতে চীন ছাড়াও বাংলাদেশ রাশিয়ার সঙ্গে কথা বলেছে। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য সচিব বলেন, আমরা সারা দুনিয়ায় যেখানেই ভ্যাকসিন হচ্ছে সেখানেই চিঠি দিচ্ছি, যোগাযোগ করছি। প্রধানমন্ত্রী তো সংসদে বলেছেন, যেখানেই আগে পাওয়া যাবে সেখান থেকেই আমরা ভ্যাকসিন আনব। প্রয়োজনে কিনে আনব। এজন্য আমরা টাকাও প্রস্তুত রেখেছি।

ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন বাংলাদেশে বিপণনের চুক্তি করেছে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিকাল লিমিটেড। অন্যদিকে সিরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে ভারতে টিকা উৎপাদনের চুক্তি আছে অক্সফোর্ডের। রাশিয়ার টিকা পেতেও আগ্রহী বাংলাদেশ। বাংলাদেশের একটি প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেকও টিকা তৈরির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ভারত নিজেও করোনার টিকা নিয়ে কাজ করছে। ভারতের বায়োটেক ইন্টারন্যাশনাল ওই টিকার ট্রায়াল বাংলাদেশে করতে চায়।

ভ্যাকসিন প্রাপ্তির অগ্রগতি সম্পর্কে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব জানান, করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিষ্কারের ক্ষেত্রে যারা একটু এগিয়ে আছে যেমন- যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ^বিদ্যালয়, ঔষধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রের মডার্না, গ্যাভি দ্য ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স, চীন- পৃথিবীর যে দেশই ভ্যাকসিন ট্রায়ালে এগিয়ে আছে তাদের সঙ্গেই আমরা যোগাযোগ রক্ষা করছি। এক্ষেত্রে আমরা সঠিক পথেই আছি।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ভ্যাকসিন দ্রুত পেতে বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই অর্থ বিনিয়োগ করেছে। ভ্যাকসিনের ব্যাপারে কয়েকটি দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় যোগাযোগ বজায় রাখছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে যুক্তরাজ্য গত ৩০ ডিসেম্বর অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনা ভাইরাসের টিকা ব্যবহারের অনুমোদন দেয়। এরপর এ টিকা আর্জেন্টিনাতেও অনুমোদন পায়। গত শনিবার ভারত সরকার তাদের দেশে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার অনুমোদন দিয়েছে। তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী দামের অক্সফোর্ডের টিকা অনুমোদনের জন্য সায় পাওয়ার বিষয়টি ভারতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। তাদের এখন অগ্রিম হিসেবে ৬০০ কোটি টাকা দেয়া হবে। টিকা সরবরাহ শুরুর পর বাকি টাকা দেয়া হবে। চুক্তির ধারা অনুযায়ী, সিরাম ইনস্টিটিউট যদি আগামী জুন মাসের মধ্যে টিকা দিতে না পারে তাহলে বাংলাদেশ অগ্রিম দেয়া সব টাকা ফেরত পাবে।

সব ঠিক থাকলে ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে সিরামের টিকা বাংলাদেশ আসবে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম আশা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, টিকা দেশে আনা এবং ভোক্তাপর্যায়ে পৌঁছে দেয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এখন ভারতের ওই টিকা আনার ব্যাপারে বাংলাদেশ আরো এক ধাপ এগিয়ে গেল।

তিনি বলেন, আইনি অনেক বাধ্যবাধকতা আছে। তবে করোনার টিকা যেন সরাসরি ক্রয় করা যায় সেজন্য প্রধানমন্ত্রী আমাদের অনুমোদন দিয়েছেন। টিকা দেশে আনার পর সংরক্ষণের জন্য কোল্ড চেইন মেইনটেন করতে হবে। সেজন্য বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের সঙ্গে অধিদপ্তর চুক্তি করেছে। বেক্সিমকো জেলাপর্যায়ে যেসব ডিপোতে কোল্ড চেইন মেইনটেনের সক্ষমতা আছে সেই জায়গাগুলোতে টিকা পৌঁছে দেবে। টিকা দেয়ার জন্য সারাদেশে ২৬ হাজার স্বাস্থ্য সহকারী এবং সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক কাজ করবেন। ঔষুধ প্রশাসনের অনুমোদনে নিয়ে অফিসিয়াল প্রসিডিউরগুলো মেইনটেন করতে হবে।

বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের চিফ অপারেটিং অফিসার (সিইও) রাব্বুর রেজা বলেন, টিকা ভারত থেকে আনার পর কোল্ড চেইন মেইনটেনের জন্য টঙ্গীতে তাদের দুটি ওয়্যারহাউসে নেয়া হবে। পরবর্তী সময়ে সরকার অনুমোদিত ওয়্যারহাউসগুলোতে পৌঁছে দেয়া হবে। এরপর সরকারি ব্যবস্থাপনায় বিতরণ প্রক্রিয়া শুরু হবে।

বাংলাদেশে যারা ভ্যাকসিন আগে পাবেন : ভ্যাকসিন আবিষ্কার হওয়ার পর বাংলাদেশ সেটি আনতে সমর্থ হলেও দেশের ভেতরেও অগ্রাধিকার দেয়া হবে ঝুঁকিতে থাকা মানুষজনকে। এর মধ্যে রয়েছেনÑ যারা সরাসরি কোভিড-১৯ মহামারি প্রতিরোধে চিকিৎসাসেবার সঙ্গে জড়িত, যাদের বয়স ষাটোর্ধ্ব, যাদের নানা ধরনের জটিল শারীরিক সমস্যা রয়েছে যেমন- কিডনি, হৃদযন্ত্র, ফুসফুসের জটিল রোগে ভুগছেন, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তি এবং গর্ভবতী নারীরা অগ্রাধিকার পাবেন।

এদিকে প্রাথমিক পর্যায়ে বাংলাদেশ পর্যাপ্ত পরিমাণ টিকা নাও পেতে পারে উল্লেখ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক ডা. বে-নজির আহমেদ বলছেন, এ মহামারি নিয়ন্ত্রণের জন্য আমরা যা পাই, তা সফলভাবে ব্যবহার করার জন্য যথাযথ পরিকল্পনা প্রয়োজন। আর বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক আঞ্চলিক উপদেষ্টা ডা. মুজাহেরুল হকের মতে, কার্যকর টিকা সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বিতরণের জন্য সরকারের খুব শিগগিরই একটি জাতীয় কোভিড টিকা নীতিমালা তৈরি করা উচিত।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App