×

মুক্তচিন্তা

পদ্মা ও পায়রা সেতু সুদৃঢ় করবে অর্থনৈতিক খাত

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ জানুয়ারি ২০২১, ১০:৪৩ পিএম

শিল্পায়নের ক্ষেত্রে দেশের দক্ষিণাঞ্চল বেশ পিছিয়ে। অবকাঠামো, দুর্বল সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে সৃষ্টি হয়নি প্রয়োজনীয় কর্মসংস্থান। অন্যদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয় তাদের। ওই অঞ্চলের মানুষ আগে জলাবদ্ধতাকে তেমন সমস্যা মনে না করলেও গত আট-নয় বছর ধরে সমস্যা হিসেবেই দেখছে। দিন দিন তারা দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর হয়ে যাচ্ছে। তারা সামাজিক মর্যাদাও হারিয়েছে। এ অবস্থার পরিবর্তনে সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। নতুন বছরে আরো একটি স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলবাসীর। দেশের সর্ব দক্ষিণের কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত ও পায়রা সমুদ্রবন্দর পর্যন্ত চালু হচ্ছে ফেরিবিহীন সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। জুনের শেষ ভাগে যানবাহন চলার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে ঢাকা-বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কের লেবুখালী সেতু। পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় করতে বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলার মধ্যবর্তী পায়রা নদীর ওপর সেতুটি নির্মাণ করা হচ্ছে নান্দনিক নকশায় এক্সট্রাডোজ ক্যাবল স্টেট পদ্ধতিতে। নব্বই দশকেও রাজধানী ঢাকা থেকে সড়কপথে বরিশাল জেলা সীমানায় প্রবেশের পর সমুদ্রসৈকত কুয়াকাটায় যেতে সাতটি ফেরি পার হতে হতো। প্রতিটি ফেরিঘাটে দীর্ঘ অপেক্ষা, ভোগান্তি আর হয়রানির কারণে পর্যটকদের কাছে সাগরকন্যা কুয়াকাটা ছিল এক দুঃস্বপ্নের নাম। পর্যায়ক্রমে শিকারপুর, দোয়ারিকা, পটুয়াখালী, দপদপিয়া, কলাপাড়া, মহীপুর ও আলীপুর পয়েন্টে সেতু নির্মিত হলেও পায়রা নদীর লেবুখালী ফেরিঘাটে বিড়ম্বনা সইতে হয়েছে কুয়াকাটাগামী পর্যটকসহ দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের। যানবাহনের চাপের কারণে ফেরিঘাটে কেটে যেত দিনের একাংশ। তবে সে চিত্র আর থাকছে না। পায়রা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের জন্য ২০১২ সালে প্রকল্প প্রণয়ন করা হয়। দুই দফায় সময় বাড়িয়ে প্রকল্পের মেয়াদ নেয়া হয় ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। পায়রা সেতুতে সৌরবিদ্যুতের আলোয় রাতে নৈসর্গিক দৃশ্যের অবতারণা হবে। দেশের পর্যটন খাতের সমৃদ্ধির পাশাপাশি সুদৃঢ় হবে অর্থনীতি। এদিকে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার বহু প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়। প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়সীমা ধরা হয়েছিল ২০১৪ সাল। কিন্তু ‘দুর্নীতির চেষ্টার অভিযোগ’ এনে অর্থায়ন বন্ধ করে দেয় এর প্রধান অর্থায়নকারী সংস্থা বিশ্বব্যাংক। অন্যান্য দাতা সংস্থাও তাদের অনুসরণ করে, যদিও পরে প্রমাণিত হয় দুর্নীতির চেষ্টার অভিযোগটি সঠিক ছিল না। পদ্মা সেতু প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করার ঘোষণা দেন। সে সময় দেশি-বিদেশি অনেক বিশেষজ্ঞ এ প্রকল্পের পরিণতি নিয়ে সন্দিহান ছিলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী তার সিদ্ধান্তে অটল থাকেন। এরপর ২০১৮ সালকে সময়সীমা ধরে পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। সেতুর নকশা সংশোধন, বন্যা, ভাঙনসহ নানা কারণে নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। চলতি বছরের মার্চ মাসে করোনার প্রাদুর্ভাব ঘটলে কাজের গতি আরো মন্থর হয়ে যায়। গত নভেম্বর পর্যন্ত পদ্মা সেতুর কাজের সার্বিক অগ্রগতি ৮২ দশমিক ৫ শতাংশ। মূল সেতুর কাজ এগিয়েছে ৯১ শতাংশ। আর নদীশাসনের কাজ হয়েছে ৭৬ শতাংশ। ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন পদ্মা সেতু দেশের বৃহত্তম উন্নয়ন প্রকল্প। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এ সেতু দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলাসহ দেশের অন্যান্য এলাকার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হবে। এতে ওই অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্যেরও প্রসার ঘটবে, শিল্পায়ন হবে ও কর্মসংস্থান বাড়বে। পদ্মা সেতু চালু হলে এক সময়ের অবহেলিত দক্ষিণাঞ্চল রেল নেটওয়ার্কের আওতায় আসবে। এ সেতু দিয়ে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে ও মহাসড়কের সঙ্গে যুক্ত হবে। মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দর দিয়ে নেপাল, ভুটান এবং ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে পণ্য পরিবহন সহজ হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, পদ্মা সেতু চালু হলে ১ থেকে ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি বাড়বে।

সহসভাপতি, এফবিসিসিআই।

[email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App