×

জাতীয়

বিএনপির সবার বিরুদ্ধে মামলা : জামিন মিললেও নিষ্পত্তি হয়নি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ জানুয়ারি ২০২১, ১১:৩৭ এএম

বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় অথচ মামলা নেই এমন নেতাকর্মীর সংখ্যা হাতেগোনা। দলটির শীর্ষ নেতা থেকে তৃণমূলে সক্রিয় সবার নামে বিভিন্ন অভিযোগে মামলা রয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রায় সবাই কারাগারফেরত। অধিকাংশ মামলার অভিযোগপত্র দাখিল হয়েছে আদালতে। চলছে বিচারকাজ। উচ্চ আদালতের আদেশে আটকে আছে অনেক মামলার বিচারকাজ। এসব মামলায় নিম্ন আদালতে নিয়মিত হাজিরা দিচ্ছেন কয়েক হাজার নেতাকর্মী। সব মামলাতেই আসামি রয়েছেন শত শত। তবে তাদের মধ্যে যেসব নেতা মারা গেছেন মামলার অভিযোগ থেকে তারা দায়মুক্তি পেয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এডভোকেট আব্দুল্লাহ আবু জানিয়েছেন, নাশকতার সব মামলার অভিযোগপত্র আদালতে জমা পড়েছে। বেশকিছু মামলার রায় হয়েছে দাবি করলেও সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারেননি তিনি। এক প্রশ্নের জবাবে ওই আইনজীবী বলেন, অনেক মামলা বিচারাধীন ও নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। ঢাকার থানায় নাশকতার অভিযোগে ৫ শতাধিক মামলা দায়ের হয়েছে বলেও জানান তিনি।

চট্টগ্রাম মহানগর আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এডভোকেট ফখরুদ্দিন চৌধুরী বলেছেন, নাশকতার মামলার তদন্ত শেষ করে অভিযোগপত্র দিতে বিলম্ব করেছে তদন্তকারী সংস্থা। সে জন্য এখনো কোনো মামলা নিষ্পত্তি হয়নি। কিছু মামলা বিচারাধীন রয়েছে। মহানগরীর থানাগুলোতে নাশকতার অভিযোগে প্রায় ২০০ মামলা দায়ের হয়েছে বলে জানান তিনি। চট্টগ্রাম জেলা দায়রা জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এডভোকেট আ খ ম সিরাজুল ইসলাম অসুস্থ থাকায় চেষ্টা করেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তার অসুস্থজনিত অনুপস্থিতির কারণে জেলা আদালতের নাশকতার মামলাগুলো ঝুলে আছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

সিলেট জেলা দায়রা জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এডভোকেট নিজাম উদ্দিন জানান, সেখানে নাশকতার কোনো মামলার রায় হয়নি। সিলেট মহানগর আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এডভোকেট নওশাদ আহমেদ চৌধুরী একটি মামলার রায় হয়েছে দাবি করলেও সুনির্দিষ্টভাবে তা বলতে পারেননি। তিনি জানান, নাশকতার

অনেক মামলা বিচারাধীন রয়েছে। কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে আদালতে সাক্ষী না যাওয়ায় বিচারকাজে ধীরগতি দেখা দিয়েছে বলে তিনি দাবি করছেন।

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সারাদেশে নাশকতার ঘটনা ঘটে। ওই সময় বিএনপির কয়েক হাজার নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হন। ভোটের আগের মাসে ঢাকায় নাশকতার মামলা হয় ৫৭৮টি, যার মধ্যে পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগ রয়েছে ৯০ বার। আর পেট্রলবোমা ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনার অভিযোগ রয়েছে ১ হাজার ১৮৬টি।

বিএনপি ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালের ২৫ অক্টোবর থেকে ২০১৪ সালের ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত সারাদেশে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ৪ হাজার ৫৫১টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত অন্তত ২ লাখ ২৩ হাজার জনকে আসামি করা হয়। এছাড়া ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের বর্ষপূর্তিকে কেন্দ্র করে চলা আন্দোলনেও নেতাদের বিরুদ্ধে নতুন করে মামলা দেয়া হয়। সর্বশেষ খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত দুর্নীতির মামলার রায়ের দিনও সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়। ১/১১ ও আওয়ামী লীগের দুই আমলে সবমিলে সারাদেশে প্রায় ৫০ হাজার মামলা দেয়া হয়েছে বলে দাবি করছে বিএনপি। এসব মামলায় নামে ও বেনামে প্রায় ১২ লাখের মতো আসামি রয়েছে।

বিএনপির ঘনিষ্ঠরা জানিয়েছেন, দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরুদ্ধে ৮৫টি মামলা আছে। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেক মামলার অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছে। বিশেষ ট্রাইব্যুনালে কয়েকটি মামলার বিচারকার্যও শুরু হয়েছে। সব মামলাতেই তিনি জামিনে আছেন। এসব মামলায় সপ্তাহে দুইদিন তাকে আদালতে হাজিরা দিতে হচ্ছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে বর্তমানে ১১টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ওয়ান-ইলেভেনের সময় ৮টি এবং বর্তমান সরকারের আমলে ৩টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মানিলন্ডারিংয়ের দায়ে দুদকের করা মামলায় তিনি গ্রেপ্তার হয়ে জেল খাটেন। ওয়ান ইলেভেনের সময় করা মামলাগুলো বিচারাধীন। প্রায় সব মামলার চার্জশিট হয়েছে। অনেক মামলার বিচারকাজ চলছে। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের বিরুদ্ধেও মামলা রয়েছে। স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে ৯৬টি মামলা রয়েছে। অবৈধ প্লট বরাদ্দ দিয়ে সরকারের সাড়ে ১৫ কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতি সাধনের অভিযোগে তার নাম চার্জশিটে যুক্ত করেছে দুদক। গয়েশ^র চন্দ্র রায়ের বিরুদ্ধে ৪০টি মামলার কয়েকটির চার্জশিট দেয়া হয়েছে। স্থায়ী কমিটির সদস্য প্রয়াত তরিকুল ইসলামের নামে ছিল ২২, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়ার নামে ১৯ ও সালাহউদ্দিন আহমেদের নামে ৪৭টি মামলা রয়েছে। দলের ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহানের বিরুদ্ধে ৭টি, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর নামে ৩৭, এ জেড এম জাহিদ হোসেন ১৫, বরকতউল্লা বুলুর বিরুদ্ধে ৮৮টি, আবদুল আউয়াল মিন্টুর নামে ১২, শামসুজ্জামান দুদু ২২, শওকত মাহমুদ ৪৫, আবদুল্লাহ আল নোমান ১৩, সেলিমা রহমান ১১, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন ১৮, মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদের নামে ৬টি মামলা রয়েছে। চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান ১২৬, জয়নুল আবদিন ফারুক ৩১, মিজানুর রহমান মিনু ১৩, দলের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নামে ৮৫টি, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের নামে ১৩০টি, হাবিব-উন-নবী খান সোহেল ১১০টি, সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুদুর বিরুদ্ধে ৫০টি, ফজলুল হক মিলন ১২ ও নাদিম মোস্তফার নামে ২৭টি মামলা রয়েছে। এসব মামলার বেশির ভাগেরই চার্জশিট দেয়া হয়েছে। যুবদল সভাপতি সাইফুল আলম নিরবের নামে ২১৫ ও সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর বিরুদ্ধে ২১২টি মামলা রয়েছে। স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি প্রয়াত সফিউল বারী বাবুর নামে ৩১টি মামলা ছিল। এসব নেতার বিরুদ্ধে দায়ের করা প্রায় মামলায় আদালতে চার্জশিট দেয়া হয়েছে। চলছে বিচারকাজ।

প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের দায়েরকৃত অনেক নাশকতার মামলার বিচারকাজ চলে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে। এসব মামলায় অনেকে দণ্ড পেয়েছেন, অনেকে খালাসও পেয়েছেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে দায়েরকৃত নাশকতার মামলার সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের কাছে সুস্পষ্টভাবে বক্তব্য মিলছে না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App