×

সম্পাদকীয়

আয়েশা খানমের প্রয়াণ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ জানুয়ারি ২০২১, ১০:২৭ পিএম

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি, বীর মুক্তিযোদ্ধা আয়েশা খানম আর নেই। শনিবার ভোরে ঢাকার নিজ বাসায় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে রাজধানীর বিআরবি হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। আয়েশা খানমের বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। দীর্ঘদিন তিনি ক্যান্সারের সঙ্গে লড়ছিলেন। ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সহসভাপতি আয়েশা খানম বাষট্টির ছাত্র আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান এবং মুক্তিযুদ্ধসহ সব আন্দোলনের সক্রিয় সংগঠক ছিলেন। আয়েশা খানমের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শোক প্রকাশ করেছেন। নারী নেত্রী আয়েশা খানমের প্রয়াণে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। তার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। নেত্রকোনায় ১৯৪৭ সালের ১৮ অক্টোবর আয়েশা খানমের জন্ম। হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশন বাতিলের দাবিতে ১৯৬২ সালের ছাত্র আন্দোলন থেকেই ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত তিনি। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচন এবং একাত্তরের অসহযোগ আন্দোলনসহ স্বাধীনতা যুদ্ধের পথে এগিয়ে যেতে যেসব আন্দোলন-সংগ্রাম সংঘটিত হয়েছিল সেগুলোতেই তিনি সামনের সারিতে ছিলেন। সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নির্বাচন প্রশ্নে তিনি ছিলেন সোচ্চার। নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, ইভটিজিংসহ নারী অধিকারবিষয়ক নানা ইস্যুতে তাকে আমরা সরব দেখেছি। অসাধারণ মানুষ ছিলেন তিনি। সুবক্তা, মুক্তমনা, যুক্তিবাদী। আয়েশা খানম বিশ্বাস করতেন, পিতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা ক্রমাগত নারীকে পিছিয়ে থাকতে বাধ্য করে। নারীকে পেছন থেকে টেনে না ধরলে সে নিজ দক্ষতায় সব জায়গায় তার পদচারণা নিশ্চিত করতে পারে। মহান মুক্তিযুদ্ধে তার অবদান অনন্য। এক সাক্ষাৎকারে আয়েশা খানম বলেছেন, এপ্রিল মাসের শেষ দিকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আগরতলায় যান আয়েশা খানম। সেখানে কমিউনিস্ট পার্টি পরিচালিত শরণার্থী শিবির ও মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প ক্রাফটস হোস্টেলে ওঠেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে যারা ভারতে আসতেন, তাদের এক অংশের সাময়িক আবাসস্থল ছিল ক্রাফটস হোস্টেল। সেখানে মুক্তিযোদ্ধা ও শরণার্থী শিবিরগুলোতে সশরীরে উপস্থিত হয়ে যোদ্ধাদের মনোবল অটুট রাখা, প্রণোদনা দান এবং শরণার্থীদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জাগাতে কাজ করেন তিনি। রণাঙ্গনে মুক্তিযোদ্ধাদের পাশে থেকে তিনি সাহসী ভ‚মিকা পালন করেছেন। আয়েশা খানম আমৃত্যু বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। নারীর অধিকার আদায়ে তার ভ‚মিকা বিশেষভাবে স্মরণীয়। প্রেরণার উৎস আয়েশা খানম। বাংলাদেশে নারী জাগরণের অন্যতম পথিকৃৎ আয়েশা খানম তার কর্মের মধ্য দিয়ে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App