×

মুক্তচিন্তা

শুধু করোনা নয়, এনবিআরও উদাসীন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ ডিসেম্বর ২০২০, ১০:১৭ পিএম

চলতি অর্থবছরে প্রত্যাশা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হচ্ছে না বলে ঘাটতি বেড়েই চলেছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, করোনা ভাইরাসের কারণে চীনসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাণিজ্যে স্থবিরতা দেখা দেয়ায় রাজস্ব ঘাটতি আরো বাড়বে বলে আশঙ্কা রয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্যের বরাত দিয়ে গতকাল ভোরের কাগজের খবরে প্রকাশ, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে সাড়ে ২৭ হাজার কোটি টাকা। রাজস্ব আহরণের বড় খাত ভ্যাটে ইএফডি বিতরণ প্রক্রিয়াও ঢিলেঢালাভাবে চলছে। ভ্যাটে অটোমেশন করতে চালু হয় ভ্যাট অনলাইন প্রকল্প। ৩ বছরে মাত্র ৩টি মডিউলের কাজ শেষ করেছে এনবিআর। যার কারণে রাজস্ব আহরণের প্রধান খাত ভ্যাট আদায়েও সুফল মিলছে না। চলতি অর্থবছরের জন্য এনবিআরের রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩ লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। সম্প্রতি এই লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ৩ লাখ ৫০০ কোটি টাকা করা হয়। কোভিডজনিত দুর্যোগ দীর্ঘায়িত হওয়ায় এই সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা এক প্রকার অসম্ভব হবে। এদিকে স্বাধীনতার পর থেকে প্রতি বছরই রাজস্ব আয় বাড়ছে। কিন্তু এবারই আগের অর্থবছরের তুলনায় রাজস্ব আয় কমতে যাচ্ছে। কমার পরিমাণ প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা। এর জন্য শুধু করোনা নয়, অর্থনীতিক বিশ্লেষকরা এনবিআরকেও দায়ী করছেন। রাজস্ব আদায়ে এনবিআরের যে ধরনের পদক্ষেপ নেয়ার কথা ছিল, তা নেয়া হয়নি। যেমন অটোমেশন বা স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতির কার্যক্রমে অগ্রগতি নেই। আবার নতুন ভ্যাট আইনও সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এছাড়া বিচার-বিশ্লেষণ না করে ঢালাওভাবে কর ছাড় দেয়া হয়েছে। এতে উদীয়মান অনেক খাত থেকে কোনো রাজস্ব আদায় হচ্ছে না। তবে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার-আয়তন, বাণিজ্যসহ অন্যান্য তথ্য-উপাত্ত আমলে নিলে নির্দিষ্ট রাজস্ব আহরণ কঠিন কিছু নয়। পরিকল্পিত উদ্যোগ নিলে এটা সম্ভব। সরকারের লক্ষ্য ছিল ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন হলে আয় বাড়বে। কিন্তু ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন হলেও লক্ষ্যমাত্রার উন্নতি নেই। এতে ভ্যাট আদায়ের যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল তা আদায় কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়াবে এনবিআরের জন্য। এমনি পরিস্থিতিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড করের আওতা বাড়ানোসহ নানা পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। তবে এসব পরিকল্পনা খুবই শ্লথ গতির। ২০২১ সালে আমাদের লক্ষ্য মধ্যম আয়ের দেশের সারিতে পৌঁছানো। এ জন্য অপরিহার্য শর্তÑ জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৭ থেকে ৮ শতাংশ নিশ্চিত করা। বিনিয়োগ বাড়াতে পারলেই কেবল এ লক্ষ্য অর্জন সম্ভব। রাজস্ব আয় বাড়ানো এর শর্ত। এ ক্ষেত্রে সর্বাগ্রে দরকার করবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি। সেখানে রাজস্ব প্রদানে সেবা নিশ্চিত, অনুক‚ল রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আইন-কানুন সময়োপযোগী করা গুরুত্ব পাবে। পরিকল্পনাজনিত সমস্যা তো রয়েছেই, সঙ্গে রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক নানা জটিলতা। আছে দুর্নীতির অভিযোগও। এসব বিষয়ে সরকারকে আরো জোরালো ভূমিকা নিতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App