×

অর্থনীতি

রাজস্ব আদায়ে স্থবিরতা কাটছেই না

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ ডিসেম্বর ২০২০, ০৯:৫৯ এএম

রাজস্ব আদায়ে স্থবিরতা কাটছেই না
রাজস্ব আদায়ে স্থবিরতা যেন কাটছেই না। মাস পেরুলেই বাড়ে রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে সাড়ে ২৭ হাজার কোটি টাকা। রাজস্ব আহরণের বড় খাত ভ্যাটে ইএফডি বিতরণ প্রক্রিয়াও ঢিলেঢালাভাবে চলছে। ভ্যাটে অটোমেশন করতে চালু হয় ভ্যাট অনলাইন প্রকল্প। ৩ বছরে মাত্র ৩টি মডিউলের কাজ শেষ করেছে এনবিআর। যার কারণে রাজস্ব আহরণের প্রধান খাত ভ্যাট আদায়েও সুফল মিলছে না। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, দেশের রাজস্ব খাতের ৮৬ শতাংশ আহরণ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে এনবিআরের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। সেই হিসেবে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ১২ হাজার ৯৫৯ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৮৫ হাজার ৪০৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ ৫ মাসে এনবিআরের রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৭ হাজার ৫৫৬ কোটি টাকা। সার্বিক হিসেবে নভেম্বর পর্যন্ত রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি ১.১৮ শতাংশ। গত অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের গড় প্রবৃদ্ধি ছিল ৬.১৯ শতাংশ। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধিতেও অনেক পিছিয়ে রয়েছে এনবিআর। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, করোনার কারণে রাজস্ব আদায়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। দেশে উল্লেখযোগ্য হারে রপ্তানি কমেছে। আর আমদানির গতিও খুবই ধীর। এসব খাতে যে পরিমাণে রাজস্ব আহরণের কথা তা আসছে না। গত বাজেটে আয়কর রিটার্ন অনলাইনে দাখিলে উৎসাহিত করা হয়েছিল। কিন্তু এনবিআরের সার্ভারজনিত ত্রæটির কারণে এর প্রভাবও পড়েছে রাজস্ব আদায়ে। ভ্যাট আদায় নিয়ে জটিলতা শেষই হচ্ছে না। এছাড়া উৎপাদন কমে যাওয়ায় উৎপাদন পর্যায়েও ভ্যাট পাচ্ছে না এনবিআর। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো করোনায় যেখানে সারা বিশ্ব ডিজিটালাইজড প্রক্রিয়ার দিকে অগ্রসর হচ্ছে, সেখানে দেশের কর ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে নেয়া হচ্ছে। কর ব্যবস্থায় আরো গতিশীলতা আনতে অটোমেশনের বিকল্প নেই বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, আমদানি-রপ্তানি কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে। এই খাত সংশ্লিষ্ট রাজস্ব অনেক কমেছে। আর ভ্যাট আদায়ে জটিলতা তো আছেই। এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধিও অনেক কম। সব মিলিয়ে এনবিআরের অটোমেশনের কোনো বিকল্প নেই। এছাড়া যেসব খাতে, বিশেষ করে ভ্যাট আদায়ে মনিটরিং বাড়ালে আরো রাজস্ব আসবে বলে মনে করেন তিনি। এনবিআর সূত্র জানায়, এনবিআরের ৩ ভাগে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়ে থাকে। ৩টি খাত হলো আয়কর, ভ্যাট ও কাস্টমস। এর মধ্যে গত ৫ মাসে আয়কর ও ভ্রমণকর খাতে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩২ হাজার ১৬৯ কোটি টাকা। এনবিআর আদায় করেছে ২৫ হাজার ৯৩৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ আলোচ্য সময়ে আয়করে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা। কাস্টমসে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৮ হাজার ২৬১ কোটি টাকা, আদায় হয়েছে ২৭ হাজার ৭৭৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ নভেম্বর পর্যন্ত কাস্টমসে রাজস্ব আহরণের ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৪৮৫ কোটি টাকা। এনবিআরের রাজস্ব আহরণের প্রধান খাত ভ্যাটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪২ হাজার ৫২৮ কোটি টাকা, আদায় হয়েছে ৩১ হাজার ৬৯৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ শুধু ভ্যাটে ঘাটতি ১০ হাজার ৮৩৪ কোটি টাকা। এনবিআর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, আমদানি-রপ্তানি খাতে বিশাল পরিমাণে রাজস্ব পেয়ে থাকে এনবিআর। করোনার কারণে আমদানি-রপ্তানি কমে যাওয়ার প্রভাব পড়ছে রাজস্ব আদায়ে। আর ভ্যাট ফাঁকি বন্ধ করতে পারলে রাজস্ব আহরণের পরিমাণ অনেক বেড়ে যাবে। এছাড়া সব উপজেলায় আয়কর ও ভ্যাট অফিস স্থাপনের বিষয়টি এখনো আলোর মুখ দেখেনি। যার কারণে উপজেলা পর্যায়ে অনেক ব্যবসায়ী করজালের বাইরেই রয়ে গেছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App