×

সারাদেশ

চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন পেতে চান ৩ নারী প্রার্থী

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ ডিসেম্বর ২০২০, ১২:৪৩ পিএম

চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন পেতে চান ৩ নারী প্রার্থী

ছবি: প্রতিনিধি

আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচনকে কেন্দ্র করে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে নির্বাচনী হাওয়া বেশ জমে উঠেছে। তফসিল ঘোষণার অন্তত তিন মাস আগেই নেতা-কর্মীদের মধ্যে নির্বাচনের আমেজ বিরাজ করছে।

নির্বাচনে অংশ নিতে ইচ্ছুক প্রার্থীরা এরই মধ্যে অনানুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করেছেন। উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার, গ্রাম-পাড়া- মহল্লার বিভিন্ন স্থানে দেয়ালে দেয়ালে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন চোখে পড়ার মতো। উপজেলার ১৪ টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ,বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মিলিয়ে শতাধিক সাম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থীর পদচারণা মাঠে দেখা যাচ্ছে। তবে এবার ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা যাচ্ছে আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয়ন পেতে ইতিমধ্যে মাঠে নেমেছেন ৩ জন নারী প্রার্থী। এরা হলেন উপজেলার গুটুদিয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ নেত্রী শীলা রাণী মন্ডল,ধামালিয়ায় হাসনা হেনা এবং খর্ণিয়ায় আফরোজা খানম(মিতা)।

তাঁরা নিজ নিজ ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রাম-পাড়া-মহাল্লায় ঘুরে ঘুরে সাধারণ ভোটারদের দোয়া-আর্শিবাদ চাইছেন পাশা পাশি দলীয় নেতা-কর্মীদের সমর্থন পেতে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের মধ্যে এবারই প্রথম তিনটি ইউনিয়নে তিন জন নারী প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী হয়ে মাঠে নামায় সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নবাসীসহ উপজেলা বাসীর মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।দলীয় নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের কাছে বেশ আলোচিত হচ্ছেন তারা। চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী হওয়ার আগ্রহ বিষয়ে কথা হয় শীলা রাণী, হাসনা হেনা ও আফরোজ খামন মিতার সঙ্গে। তারা তিন জন প্রায় একই মনোভাব ব্যক্ত করে জানান,আওয়ামী লীগ দেশের একটি বৃহত্তম রাজনৈতিক দল। এই দলের সভাপতি, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা।দলের আরো এক নেত্রী মহান জাতীয় সংসদের মাননীয় স্পিকার ড.শিরিন শারমিন।

এ ছাড়াও সরকারের মন্ত্রী পরিষদ এবং দলে বেশ কয়েক জন শ্রদ্ধাভাজন নারী নেত্রী রয়েছেন যারা যোগ্যতা ও দক্ষতার সঙ্গে দেশ পরিচালনা করে আসছেন। যোগ্যতা,দক্ষতায় দেশ পরিচালনা করে রীতিমত বিশ্ববাসীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন প্রধান মন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। সফল রাস্ট্র নায়ক হিসেবে আজ তিনি বিশ্বের দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন। তাই তারা মনে করেন একটি ইউনিয়ন পরিষদ পরিচালনা করা তাদের পক্ষে কঠিন কোন কাজ নয়। তারা আরো জানান,ইউনিয়ন পরিষদের সাধারণ ওয়ার্ডে একজন পুরুষ সদস্য প্রার্থী কম অর্থ-শ্রম-মেধা ব্যয় করে যেখানে নির্বাচন করে সেখানে তিনটি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত সংরক্ষিত নারী সদস্য প্রার্থীদের তো তিন গুণ মেধা শ্রম ব্যয় করে নির্বাচিত হতে হয়। তা হলে চেয়ারম্যান পদে কেন আমারা নির্বাচন করতে অপারগ হবো ? তাই আমরা চাই দলীয় গঠনতন্ত্রের বিধান অনুযায়ী দলের কমিটি সমুহে ৩৩ ভাগ নারী সদস্য অন্তর্ভূক্তির ন্যায় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নের ক্ষেত্রে নারী প্রার্থীদের বিষয়টি যেন বিবেচনায় নেয়া হয় সেই দাবী জানান তারা।

১৩ নং গুটুদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী আ’লীগ নেত্রী শীলা রাণী মন্ডল জানান, পারিবারিক ভাবে তিনি আওয়ামী লীগের একজন কর্মী। ২০০১ সালে উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে সম্পৃক্ত হয়ে রাজনীতিতে সক্রিয় হন তিনি। বর্তমানে উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা হিসেবে দায়ীত্বরত থেকে দলের জন্যে নিরালস ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। ২০০৩ সালে তিনি গুটুদিয়া ইউনিয়নের ৪,৫ ও ৬ নং সংরক্ষিত ওয়ার্ডে প্রথমবার ইউপি সদস্য নির্বাচিত হয়ে প্যানেল চেয়ারম্যান হিসেবে একটানা তিন বছর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়ীত্ব পালন করেন। পরবর্তিতে আরো একটার্ম তিনি সদস্য নির্বাচিত হন। শিক্ষা,ধর্মীয় এবং সামাজিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত থেকে সাধারণ মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন বলেও তিনি জানান। ব্যক্তিগত জীবনে এইচ,এস,সি পাশ শীলা রাণী গুটুদিয়া ইউনিয়নের পঞ্চু গ্রামের সদ্য অবসর প্রাপ্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শুশান্ত মন্ডলের স্ত্রী।

জানতে চাইলে শিলা রাণী মন্ডল বলেন, ‘দল আমাকে মনোনয়ন দিলে আমি গুটুদিয়া ইউনিয়নকে একটি পরিচ্ছন্ন ও আধুনিক ইউনিয়ন হিসেবে পরিণত করবো। ইউনিয়নে সন্ত্রাস, দুর্নীতি ও মাদকের বিরুদ্ধে আমার অবস্থান আপসহীন রেখে ইউনিয়ন বাসীর ন্যায্য সেবা দেয়ার চেষ্টা করবো ।

১নং ধামালিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী হাসনা হেনা জানান, ছাত্র জীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতির মাধ্যমে তার রাজনৈতিক জীবনের পথ চলা। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগ ডুমুরিয়া উপজেলা সাধারণ সম্পাদক। খুলনা জেলা মহিলা আওয়ামী লীগ এবং ডুমুরিয়া উপজেলা শাখা আওয়ামী লীগের একজন সদস্য। তিনি ধামালিয়া ইউনিয়নের ৭,৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনের নির্বাচিত সাবেক সদস্য। শিক্ষা ও সামাজিক সংগঠনের সাথে রয়েছে তার সম্পৃক্ততা। বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে মনোনয়নের জন্যে আবেদন ফরম সংগ্রহ করেছিলেন তিনি।

পরবর্তীতে ভাইস চেয়ারম্যান পদে কাউকে দলীয় মনোনয়ন না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রার্থীতা উন্মুক্ত করে দিলে ওই নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে প্রায় ৪০ হাজার ভোট পেয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিলেন তিনি । ব্যক্তিগত শিক্ষা জীবনে হাসনা হেনা এইচ,এস,সি পাশ।তার স্বামী ধামালিয়া গ্রামের বাবুল আক্তার একজন ঠিকাদারী ব্যবসায়ী এবং ধামালিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সিনিয়র সাংগঠনিক সম্পাদক বলে জানান।দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করে হাসনা হেনা বলেন, ‘আমি দলীয় মনোনয়ন পেলে সন্ত্রাস, দূর্ণীতি,মাদক মুক্ত সমাজ গড়ার পাশা পাশি ইউনিয়ন বাসীর সেবা দেয়ার চেষ্টা করবো’। ইউনিয়নকে গড়ে তুলবো একটি পরিচ্ছন্ন ইউনিয়ন হিসেবে’।

৪ নং খর্ণিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়াম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী আওয়ামী লীগ নেত্রী আফরোজা খামন মিতা জানান, কলেজ শিক্ষা জীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার মধ্যে দিয়ে তার রাজনীতিতে প্রবেশ। বর্তমানে তিনি খর্ণিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ কমিটির একজন সদস্য। পারিবারিক ভাবে আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান এবং গৃহবধু তিনি।

একজন সফল নারী উদ্যোক্তাও তিনি। ২০০১ সালে বিয়ের পর সাংসারিক জীবনের পাশাপাশি শুরু করেন রাজনীতি আর নারী ভিত্তিক উন্নয়ন কার্যক্রম। এলাকার শিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত যুব সমাজকে নিয়ে নিজ উদ্যোগে গড়ে তুলেছেন মৎস্য খামার। খর্ণিয়া বাজারে বরফ কল, মৎস্য আড়ৎ সহ বেশ কয়েকটি ব্যবসা পরিচালনা করেন তিনি। একজন সফল উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী হিসেবে ইতোমধ্যে এলাকায় পরিচিতি লাভ করেছেন। ব্যবসা-বানিজ্য ও রাজনীতির পাশা পাশি সমাজ সেবা মূলক কাজের অংশ হিসেবে খর্ণিয়া ইউনিয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচিত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। ব্যক্তিগত শিক্ষা জীবনে আফরোজা খানম মিতা এইচ,এস,সি পাশ। তার স্বামী রবিউল ইসলাম খুলনা সিটিকর্পোরেশনে কর্মরত একজন কর্মকর্তা এবং যুবলীগের সাবেক নেতা।

দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী আফরোজা খানম মিতা বলেন, জন্মসূত্রে আমি ও আমার পরিবার আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে বিশ্বাসী। আমার শশুর ডাক্তার খোরশেদ আলম খর্নিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং ইউনিয়নের প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ বুকে ধারণ করে লেখা পড়ার পাশাপাশি রাজনীতিতে সব সময় একজন সাধারণ কর্মী হয়ে জনকল্যাণে কাজ করে আসছি। জীবনের বাকী দিনগুলোতে এমনি ভাবেই মানুষের জন্য কাজ করে যেতে চাই। ইউনিয়ন বাসীর ভালোবাসা ও অনুরোধে আমি চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে নিজেকে আত্ম প্রকাশ করে মাঠে নেমেছি। তারপরও আমি যেহেতু আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে বিশ্বাসী। তাই দলীয় মনোনয়ন ও সিদ্ধান্তের বাইরে যেতে চাইবো না। আমাদের দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তই আমার কাছে চুড়ান্ত।

তিনি আরো বলেন,আমি নিজে দুর্নীতি করি না এবং দুর্নীতিবাজদের প্রশ্রয়ও দেব না। মানুষের মূল্যায়ন, সম্মান, ন্যায় বিচার ও মাদকমুক্ত সমাজ গড়ার পাশাপাশি ইউনিয়ন বাসীর ন্যায্য সেবা দেয়ার শতভাগ চেষ্টা করবো। ইউনিয়ন বাসী পরিবর্তন চায়, আমার বিশ্বাস মানুষের সমর্থন ও সহযোগিতা পেলে সমাজের দূর্বৃত্তায়ন ও অস্থিরতা থেকে ইউনিয়ন বাসীকে মুক্ত করতে পারবো।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App