×

জাতীয়

নতুন করোনা বাংলাদেশেও!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ ডিসেম্বর ২০২০, ০৯:৩৬ এএম

আতঙ্ক ও বিভ্রান্তি। উদ্বেগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

অদৃশ্য হয়েও বিশ্বজুড়ে মূর্তিমান এক আতঙ্কের নাম কোভিড-১৯। এখন আতঙ্কের মাত্রা বাড়িয়েছে এই ভাইরাসের নতুন বৈশিষ্ট্য বা চরিত্র। নতুন বৈশিষ্ট্যের এই ভাইরাস অন্যান্য সংস্করণের তুলানায় নিজেকে দ্রুত প্রতিস্থাপন করছে। মূল ভাইরাসের তুলনায় ৭০ শতাংশ বেশি দ্রুত ছড়ায়। এই ভাইরাসে এমন মিউটেশন (রূপান্তর) ঘটেছে যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। যা ভাবিয়ে তুলেছে পুরো বিশ্বকে। নতুন বৈশিষ্ট্যের এ ভাইরাসের অস্তিত্ব বাংলাদেশেও পাওয়া গেছে- এমন খবরে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। করোনা মহামারি শুরুর পর থেকেই বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়েছিলেন, অন্য যে কোনো ভাইরাসের মতো করোনা ভাইরাসও মিউটেশনের মাধ্যমে পরিবর্তিত হতে পারে। তার বৈশিষ্ট্য এবং আচরণে পরিবর্তন ঘটতে পারে।

গবেষকরা বলছেন, ভাইরাসটির নতুন এই বৈশিষ্ট্য যে আগেরটির চেয়ে অনেক বেশি প্রাণঘাতী বা মারাত্মক, তেমন প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি। এদিকে করোনা ভাইরাসের নতুন বৈশিষ্ট্য ভাইরাস বিবর্তনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হিসেবে মন্তব্য করলেও বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগে রয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ভাইরাসের নতুন ধরনটি নিয়ে আলোচনা করতে জরুরি বৈঠকও ডেকেছে সংস্থাটি। এরই মধ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার বিবিসি বাংলাসহ কয়েকটি গণমাধ্যমে বাংলাদেশের বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) বরাত দিয়ে প্রকাশিত হয় একটি প্রতিবেদন। তাতে বলা হয়, সম্প্রতি যুক্তরাজ্যে পাওয়া ভাইরাসের সঙ্গে সাদৃশ্য রয়েছে এমন নতুন বৈশিষ্ট্যের করোনা বাংলাদেশেও শনাক্ত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. সেলিম খানকে উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনে বলা হয়, গত নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ১৭টি নতুন জিনোম সিকোয়েন্স পরীক্ষা করে ৫টি নমুনায় নতুন বৈশিষ্ট্যের অনেকটাই মিল পাওয়া গেছে। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন এন্ড রেফারেল সেন্টার থেকে ওই নমুনাগুলো জেনোম সিকোয়েন্সের জন্য নিয়েছিলেন তারা। তবে যাদের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে তারা কোন দেশ থেকে এসেছেন তা এখনো জানা যায়নি বলেও জানান সেলিম খান।

এই প্রতিবেদন প্রকাশের পরই এ বিষয়ে বিসিএসআইআরের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. আফতাব আলী শেখের মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি গণমাধ্যমকে জানান, এ বিষয়ে তাদের একটি গবেষণা চলছে, কিন্তু এখনই কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর সময় আসেনি। আর অসমাপ্ত কাজের ভিত্তিতে মন্তব্য করে ‘আতঙ্ক সৃষ্টি করা’ সমীচীন হবে না। জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের কাজটি ‘অনেক দূর’ এগিয়েছে। শিগগিরই সাংবাদিকদের ডেকে চ‚ড়ান্ত ফল জানানো হবে।

ড. সেলিম খান কেন এমন মন্তব্য করেছেন সেই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি ডা. মো আফতাব আলী শেখ। তিনি জানান, সেলিম খান একটা কাজে সিলেট গেছেন। ফিরলে তার সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হবে। এদিকে জানা গেছে, ড. সেলিম খান সিলেটের সুনামগঞ্জে অনুষ্ঠিত একটি সেমিনারে এ বিষয়ে বক্তব্য দেন। বিভিন্ন গণমাধ্যমে এমন বক্তব্য প্রকাশের পর তাকে জরুরি ভিত্তিতে ঢাকায় তলব করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত; গত সেপ্টেম্বর মাসে যুক্তরাজ্যে করোনা ভাইরাসের ‘অত্যন্ত সংক্রামক’ নতুন এই বৈশিষ্ট্যের সন্ধান পাওয়া যায়। যা এখন লন্ডনসহ ইংল্যান্ডের বেশ কিছু এলাকায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। অস্ট্রেলিয়া, নেদারল্যান্ডসসহ কয়েকটি দেশে মিলেছে এর সন্ধান। এই পরিস্থিতিতে ইউরোপীয় প্রতিবেশীসহ ৪০টির বেশি দেশ যুক্তরাজ্যের নাগরিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।

এদিকে করোনার নতুন বৈশিষ্ট্য দেখা দেয়ায় ওই সব এলাকা থেকে বাংলাদেশিরা দেশে ফিরছেন। আমাদের সিলেট প্রতিনিধি জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে লন্ডন থেকে বাংলাদেশ বিমানের বিজি-২০২ ফ্লাইটে সিলেটে ওসমানী বিমানবন্দরে নামেন ১৬৫ জন যাত্রী। এ প্রসঙ্গে সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. প্রেমানন্দ মণ্ডল জানান, বিদেশ ফেরত যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য একটি বিশেষ টিম সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরে কাজ করে যাচ্ছে। তারা যাত্রীদের সার্বিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে করোনার সংক্রামণ আছে কিনা তা খতিয়ে দেখছেন।

দেশে করোনার নতুন বৈশিষ্ট্যর সন্ধান মিলুক বা না মিলুক মোট কথা হলো এ নিয়ে জনমনে উদ্বেগ ও আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। সেই বৈশিষ্ট্য যে পাওয়া যায়নি বা যাবে না সেই আশঙ্কার কথাও উড়িয়ে দিতে চান না বিশেষজ্ঞরা।

করোনা মোকাবিলায় জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভোরের কাগজকে বলেন, করোনার নতুন বৈশিষ্ট্য আমাদের দেশে দেখা গিয়েছে কিনা এ বিষয়ে এখনো আমরা নিশ্চিত নই। সেপ্টেম্বরে করোনার এই নতুন চরিত্র ধরা পড়েছে। এখন কড়াকড়ি করলেও যুক্তরাজ্যসহ সংক্রমণ দেখা গেছে এমন দেশ থেকে অনেকেই দেশে ফিরেছেন। যারা আগে চলে এসেছেন তাদের ক্ষেত্রে কী উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তা এখনো স্পষ্ট নয়।

এদিকে সরকার যুক্তরাজ্য থেকে আসা যাত্রীদের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি বাড়িয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সমসাময়িক বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, করোনা ভাইরাসের নতুন সংক্রমণ মোকাবিলায় সরকারের প্রস্তুতি রয়েছে। সংক্রমণ বাড়তে থাকার প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন দেশের ফ্লাইট বন্ধের বিষয়টিও পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। অপর দিকে গতকাল হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একটি নিরাপত্তা মহড়া অনুষ্ঠান শেষে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী বলেন, প্রয়োজনে যুক্তরাজ্য ফ্লাইট বন্ধ করা হবে।

এর আগে বুধবার এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, করোনা ভাইরাসের নতুন ধরনটি সম্পর্কে আমরা জেনেছি। আমরা নির্দেশনা দিয়েছি, যারা যুক্তরাজ্য থেকে আসবে তাদের করোনা নেগেটিভ সনদ না থাকলে সাত দিন কোয়ারেন্টাইনে রাখতে হবে। দেশে করোনা এখনো নিয়ন্ত্রণে আছে। তবে আমরা চাই না দেশে কেউ করোনার নতুন ধরনে আক্রান্ত হোক, এজন্য পূর্ব প্রস্তুতির অংশ হিসেবে এ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। যুক্তরাজ্যের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ হবে কিনা তা এই প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, আমরা বসে নেই। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। আমরা অতি তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্ত নেব। বাংলাদেশ এখন পরিস্থিতি ‘পর্যবেক্ষণ’ করছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App